নিজস্ব প্রতিবেদক: নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার মাসকা ইউনিয়নের আলমপুর-দিঘলী এলজিইডি সড়কের দিঘলী মোড় থেকে জিলু মিয়ার বাড়ি পর্যন্ত সরকারি ৩১টি মেহগনি গাছ কাটা হয়েছে। এসব গাছের আনুমানিক বাজারমূল্য কয়েক লাখ টাকা বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন।
মঙ্গলবার রাতে গাছবোঝাই গাড়ি আটক হওয়ার পর ঘটনাটি প্রকাশ্যে আসে।
দিঘলী গ্রামের বাসিন্দা জিলু মিয়া, জামাল উদ্দিন ও নভেল মিয়া বলেন, দিনের বেলায় গাছ কেটে রাতে লরিতে করে সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা চলছিল। সন্দেহ হলে স্থানীয় বাসিন্দারা গাড়ি ও কিছু গাছ জব্দ করেন। পরে বিষয়টি উপজেলা প্রশাসনকে জানানো হয়।
তাঁদের ভাষায়, কয়েক বছর আগে সরকারিভাবে রাস্তার পাশের জমিতে মেহগনি গাছ লাগানো হয়েছিল এবং গাছ বিক্রি হলে অংশ দেওয়ার আশ্বাস ছিল।
জিলু মিয়ার অভিযোগ, “আমাদের না জানিয়ে মাসকা ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি রেজাউল হাসান ভূঞা সুমন গাছগুলো কাটিয়েছেন।”
গাছগুলো দিঘলী গ্রামের জিলু মিয়া, নুরুল ইসলাম, জামাল উদ্দিন, সাত্তার মিয়া, দেলোয়ার হোসেন, আলাল উদ্দিন, মগল মিয়া ও খোদেজা বেগমের জমির রাস্তার পাশ ঘেঁষে লাগানো ছিল।
আলমপুর গ্রামের বাসিন্দা নিউটন খান বলেন, “রাতে ট্রাকে গাছবোঝাই করে নেওয়ার সময় আমরা গাড়ি আটকাই। পরে প্রশাসনকে খবর দিই।”
মাসকা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান এ কে এম মোস্তাফিজুর রহমান খুকুমণি বলেন, তিনি স্থানীয়দের কাছ থেকে জেনেছেন যে রাস্তার গাছগুলো ঠিকাদার ও ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি রেজাউল হাসান ভূঞা সুমন কাটিয়েছেন।
মাসকা ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি ও রাস্তার ঠিকাদার রেজাউল হাসান ভূঞা সুমন জানান, দ্রুত রাস্তা পাকা করার প্রয়োজনীয়তায় স্থানীয়দের সঙ্গে আলোচনা করেই গাছ কাটা হয়েছে।
তিনি বলেন, “অফিসে আবেদন করলে দুই-আড়াই বছর লেগে যায়। রাস্তা নির্মাণের সময় থাকে এক বছর। তাই নিজ খরচে গাছ কেটে শিমুলতলা বাজারে স্তুপ করে রেখেছি। কর্তৃপক্ষকে জানানো হলে নিয়ম অনুযায়ী গাছগুলো বিক্রি করবে।”
কেন্দুয়া উপজেলা প্রকৌশলী আল-আমিন সরকার বলেন, মাসকা দিঘলী জিপিএস থেকে মাছিয়ালি গুচ্ছগ্রাম পর্যন্ত এলজিইডির রাস্তা পাকাকরণ করা হবে। এজন্য গাছ কাটা লাগতে পারে।
তবে তিনি বলেন, “গাছ কাটার আগে কর্তৃপক্ষকে অবগত করে নিয়ম মেনে কাজ করা প্রয়োজন ছিল।”
কেন্দুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ইমদাদুল হক তালুকদার জানান, গাছ কাটার বিষয়টি বন বিভাগকে জানানো হয়েছে। তিনি বলেন, “একটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। তদন্তের ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
স্থানীয়দের অভিযোগ, সরকারি সড়কের গাছ কাটতে হলে সাধারণত টেন্ডার প্রক্রিয়া, বন বিভাগ ও পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমোদন প্রয়োজন। তবে এ ক্ষেত্রে এসব প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়নি বলে দাবি তাঁদের।
এ ঘটনায় এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয়দের দাবি, সরকারি সম্পদ রক্ষায় দায়ীদের চিহ্নিত করে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।
