গাইবান্ধা:
গাইবান্ধা শহরের অদূরে কৃষি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট (এটিআই) ও এলএসটি’র মাঝামাঝি স্থানে প্রায় ১৫ দশমিক ৪৬ একর জায়গা জুড়ে গড়ে উঠেছে দৃষ্টিনন্দন গাইবান্ধা হর্টিকালচার সেন্টার। সবুজের সমারোহে ঘেরা এ সেন্টার স্থানীয় ও বিদেশি নানা প্রজাতির ফুল-ফল আর উদ্ভিদের মাতৃবাগান হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। সেন্টারটি বাজার মূল্যের চেয়ে কয়েকগুণ কম দামে মানসম্মত চারা বিক্রি করছে, যা জেলার কৃষি উদ্যোক্তাদের জন্য আশীর্বাদ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
শুধু তাই নয়—গ্রাহকের চাহিদা অনুযায়ী নির্দিষ্ট সময়ে বিভিন্ন প্রজাতির গাছের চারা সরবরাহ করে আসছে তারা। ফলে এ জেলার কৃষিখাত এগিয়ে যাচ্ছে দ্রুতগতিতে। এখানে রয়েছে দেশি-বিদেশি প্রায় ১০০ প্রজাতির আমের মাতৃবাগান। সূর্যডিম, উষাপূর্ণি, আর২ই২, শ্রীময়ং, ফিলিপাইন অল টাইম, থ্রীটেস্ট, ফোর কেজি, জাম্বুরা আমসহ রঙিন ও জায়ান্ট প্রজাতির আম এ সেন্টারের অন্যতম আকর্ষণ।
এছাড়া রয়েছে দুই প্রকার কাঁঠাল, নয় প্রকার লিচু, চার প্রকার পেয়ারা, পাঁচ প্রকার মাল্টা, সাত প্রকার কমলা ও ১৩ প্রকার আঙ্গুরের সংগ্রহ। এখানে শুধু দেশি ফল নয়, বিদেশি ফলেরও সমাহার রয়েছে। ড্রাগন, ফিগ, পার্সিমন, নাশপাতি, এভোকাডো, ওয়ালনাট, রাম্বুটান, কাজুবাদাম, জয়তুনসহ নানা প্রজাতির ফল সেন্টারের সৌন্দর্য ও বৈচিত্র্য বাড়িয়েছে। বিশেষ আকর্ষণের মধ্যে রয়েছে ভিয়েতনামী বারোমাসি আঠাবিহীন কাঁঠাল এবং খাটো জাতের নারকেল। ফল ছাড়াও বিভিন্ন ফুলের মাতৃবাগান রয়েছে সেন্টারে।
মৌসুমী ফুলের পাশাপাশি জবা, রঙ্গন, টগর, গন্ধরাজ, ক্যামেলিয়া, কৃষ্ণচূড়া, রাধাচূড়া ও নানা পাতা বাহারী গাছ এ জায়গাকে করেছে মনোমুগ্ধকর। প্রকল্পের আওতায় প্রতিষ্ঠিত এ সেন্টারে রয়েছে এক একরের একটি পুকুর ও দুই একর আয়তনের কৃত্রিম লেক। এর ধারে গুল্ম ও বৃক্ষজাতীয় ফুলের সমাহার পরিবেশকে করেছে আরো সৌন্দর্যমণ্ডিত। দর্শনার্থীদের বিশ্রামের জন্য রয়েছে গোলঘর, যা গ্রীষ্মের তাপদাহ কিংবা বর্ষার দিনে হয়ে ওঠে এখানে কাজ করা শ্রমিকদের আশ্রয়ের ভরসা। ২০১৮ সালে প্রতিষ্ঠিত এই হর্টিকালচার সেন্টারে আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি প্রদর্শনীর মাধ্যমে কৃষকদের দক্ষতা বৃদ্ধি করা হচ্ছে।
এ পর্যন্ত প্রায় ৫৭০টি প্রদর্শনী স্থাপন করা হয়েছে এবং ৪৭১০ জন কৃষককে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। ফলে পতিত জমি, বসতবাড়ি ও চরাঞ্চলে ফলচাষের ব্যাপক প্রসার ঘটেছে। বেসরকারি নার্সারির উদ্যোক্তারাও এখান থেকে সায়ন সংগ্রহ করে মানসম্পন্ন চারা উৎপাদন করছেন। এতে জেলার সাধারণ মানুষ সুলভ মূল্যে মানসম্মত চারা সংগ্রহের সুযোগ পাচ্ছেন এবং কর্মসংস্থানও বৃদ্ধি পাচ্ছে। গাইবান্ধা হর্টিকালচার সেন্টারের উপপরিচালক মোঃ খাজানুর রহমান জানান, দেশি-বিদেশি ফুল ও ফলের চারা উৎপাদন ও মাতৃবাগান স্থাপনের কাজ দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। তিনি চারাকলম ক্রয় ও সেন্টার পরিদর্শনের জন্য সকলকে আমন্ত্রণ জানান।