মৌলভীবাজার প্রতিনিধি:
মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে মঙ্গলচণ্ডী মন্দিরে শুরু হয়েছে ৯ দিনব্যাপী দেশের আগাম নবরূপে দুর্গাপূজা। নয়দিনে দেবীর ৯টি রূপের পূজা করা হবে। মহালয়ার পর প্রতিপদ তিথি থেকে নবদুর্গার পূজা শুরু হয় এবং নবমী তিথি পর্যন্ত চলে। দেবী দুর্গার ৯টি রূপের পূজা দেখতে প্রথম দিন থেকেই ভক্তরা মন্দিরে ভিড় করছেন।
সোমবার সকালে উপজেলার ইছামতী চা-বাগানের মঙ্গলচণ্ডী মন্দিরে দেবী দুর্গার ৯টি রূপের মধ্যে (প্রথম রুপ) শৈলপুত্রী রুপে পূজা করা হয়। নয় দিনে প্রতিদিন দেবী দুর্গার এই ৯ রূপের এক একজনকে পূজা করা হবে। পৌরাণিক নিয়ম অনুযায়ী আগামী দিনগুলোতে দেবী দুর্গার দ্বিতীয় রূপ ব্রহ্মচারিণী, তৃতীয় রুপ চন্দ্রঘণ্টা, চতুর্থ রুপ কুষ্মাণ্ডা, পঞ্চম রুপ স্কন্দমাতা, ষষ্ঠ রুপ কাত্যায়নী, সপ্তম রুপ কালরাত্রী, অষ্টম রুপ মহাগৌরী এবং নবম রুপ সিদ্ধিদাত্রী রূপের পূজা করা হবে।
মঙ্গলবার সকালে মঙ্গলচণ্ডী মন্দিরে গিয়ে দেখা যায়, মণ্ডপে এক সারিতে সাজিয়ে রাখা হয়েছে দেবী দুর্গার ৯ রূপের ৯টি প্রতিমা। সেখানে চলছে পূজা-অর্চনা। ঢাকের আওয়াজে মোহিত হচ্ছে চারপাশ। নিজের ও দেশের মঙ্গল কামনায় দেবীর চরণে অঞ্জলিও দিচ্ছেন ভক্তরা। নবদুর্গা পূজা দেখতে আসা ভক্তদের মধ্যে কথা হলে বলেন, ‘আগামী ২৮ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হচ্ছে শারদীয় দুর্গা পূজা। তবে এখানে একটু ব্যতিক্রমধর্মী অর্থাৎ নবদুর্গা পূজা। দেবীর নয়টি রুপের পূজা করা হচ্ছে। ১১ দিন ব্যাপী এই পূজা অনুষ্ঠিত হয়।
অনেক বছর ধরে পূজা হচ্ছে এখানে। আমি প্রথম পরিবার নিয়ে এখানে এসেছি। মূলত সনাতন ধর্মাবলম্বীদের শারদীয় দুর্গা উৎসব সবচেয়ে বড় উৎসব। মায়ের কাছে প্রার্থনা করি, তিনি যেনো পৃথিবীর সবার মঙ্গল করেন। সবাই সুখী ও ভালো থাকুক।’ মন্দিরে পূজা দেখতে আসা আরেক ভক্ত বলেন, ‘আজকে আমরা মঙ্গলচণ্ডী মায়ের কৃপায় নবদুর্গা মায়ের প্রথম রুপ শৈলপুত্রী মায়ের পূজায় এসেছি। মাকে দর্শন করলাম, খুব ভালো লাগছে। মায়ের কাছে প্রার্থনা সবসময় যেনো ভালো থাকতে পারি, এবং মা যেনো সবাইকে ভালো রাখেন।’
শ্রীশ্রী মঙ্গলচণ্ডী সেবাশ্রম নবরূপে নবদুর্গা পূজা উদযাপন পরিষদের সহ-সভাপতি সুরঞ্জিত দাশ বলেন, ‘মঙ্গলচণ্ডী সেবাশ্রমে আমাদের নবরুপে নবদুর্গা পূজা, এবার ১৫তম আয়োজন। আমরা ২০১০ সাল থেকে এখানে নবদুর্গা পূজার আয়োজন শুরু করেছি। সারাদেশে যখন মণ্ডপে মণ্ডপে মূর্তি নির্মাণ ও পূজার প্রস্তুতি নিচ্ছেন, তখন আমাদের এখানে পূজা শুরু হয়েছে। দুর্গা মায়ের নয়টি রুপের যে, চণ্ডীতে বর্ণিত রুপ রয়েছে, সেই রুপের আলোকে মহালয়ার পরেরদিন থেকে প্রতিবছর এখানে পূজার আয়োজন করা হয়। সারাদেশ থেকে হাজার হাজার ভক্তের সমাগম ঘটে এই নবদুর্গা পূজায়। অসুর দমনে এবং শান্তিকল্পে আমরা মায়ের চরণে আরাধনা করে থাকি।’
কিছু ভক্ত বৃন্দের বক্তব্য উঠে এসেছে যাতায়াত করার রাস্তার বেহাল দশার কথা ফুটে উঠে। জানা যায়, মঙ্গলচণ্ডী মন্দির শ্রীমঙ্গলের সর্বাধিক প্রাচীন স্থাপনা হিসেবে পরিচিত। অনেকে শ্রীমঙ্গল নামের উৎপত্তিও এই শ্রীশ্রী মঙ্গলচণ্ডীর থলি থেকে হয়েছে বলে মত প্রকাশ করেন। ঐতিহাসিক স্থানটিকে ধরে রাখতে এই নবদুর্গা পূজার আয়োজন করা হয়। শাস্ত্রীয় বিশ্বাস অনুযায়ী এই নয় দিন ধরে নবদুর্গার পূজা করলে ভক্তরা সর্বদিক থেকে জয়ী হন। শারদীয় দুর্গাপূজা শুরু হওয়ার আগেই এই পূজা অনুষ্ঠিত হয়, তাই এটি ‘আগাম’ বা ‘নবদুর্গা’ পূজা নামে পরিচিত। আগামী ২ অক্টোবর দশমী পূজা ও প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে পূজার সমাপ্তি হবে।