সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি::
একসময় যে জনপদে শিক্ষার আলো পৌঁছানো ছিল এক দুরূহ স্বপ্ন, আজ সেখানেই পাঁচ পাঁচটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জ্ঞানের মশাল জ্বালিয়ে যাচ্ছে। সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার সুলেমানপুর গ্রামের ঐতিহ্যবাহী ‘সুলেমানপুর শাহজালাল (র.) জামেয়া আরাবিয়া আলিম মাদ্রাসা’য় সম্প্রতি অনুষ্ঠিত হলো আলিম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের প্রথম ‘সবক প্রদান’ অনুষ্ঠান। এটি শুধু একটি শিক্ষাকার্যক্রম নয়, বরং এই এলাকার ইতিহাসে একটি নতুন দিগন্তের উন্মোচন।
গত সোমবার (২২ সেপ্টেম্বর) সকালে মাদ্রাসার হলরুমে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা হাবিবুর রহমান। সবক প্রদান করেন তাহিরপুর হিফজুল উলুম মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা মুহিবুর রহমান এবং ভাইস প্রিন্সিপাল মাওলানা শরিফ আহমদ। তাদের জ্ঞানগর্ভ আলোচনা নতুন শিক্ষার্থীদের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে ওঠে।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন বাদাঘাট উচ্চবিদ্যালয়ের ধর্মীয় শিক্ষক মাওলানা শাহজাহান, তাহিরপুর হিফজুল উলুম আলিম মাদ্রাসার ইংরেজি প্রভাষক আশিকুর রহমান সহ গ্রামের গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ। আমন্ত্রিত অতিথিরা মাদ্রাসার সার্বিক কার্যক্রমে মুগ্ধতা প্রকাশ করেন এবং এই প্রতিষ্ঠানের ভবিষ্যৎ উন্নতির জন্য দোয়া করেন।
এক ব্যক্তির স্বপ্ন থেকে পাঁচ প্রতিষ্ঠানের জন্ম::
স্থানীয়দের মতে, সুলেমানপুর গ্রাম ও এর আশেপাশের জনপদ একসময় ছিল শিক্ষা থেকে বহু দূরে। নিম্ন আয়ের পরিবারগুলো তাদের সন্তানদের পড়ালেখার কথা ভাবতেই পারতো না। ঠিক সেই সময়ে আলোর দিশারী হয়ে আবির্ভূত হন গ্রামের কৃতি সন্তান হযরত মাওলানা সৈয়দ শামসুজ্জামান সাহেব দাঃ। তার অক্লান্ত পরিশ্রম, ত্যাগ আর অদম্য ইচ্ছাশক্তির ফলেই যে গ্রাম একসময় শিক্ষার স্বপ্নও দেখতো না, আজ সেখানেই গড়ে উঠেছে কওমি-আলিয়া-মহিলা- হিফজসহ পাঁচটি ধর্মীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।
এই প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রয়েছে- দারুল হাদিস গুলবাহার মহিলা টাইটেল মাদ্রাসা, আল্লামা আব্দুল জব্বার (র.) দারুল উলূম ক্বওমী মাদ্রাসা ও হিফজ বিভাগ এবং একটি এতিমখানা। এতিমখানায় শিক্ষার্থীদের জন্য সম্পূর্ণ ফ্রি থাকা-খাওয়ার সুব্যবস্থা রয়েছে, যা তাদের জীবনকে নতুন পথের সন্ধান দিচ্ছে।
সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য উদ্যোগ হলো, শাহজালাল (র.) জামেয়া আরাবিয়া আলিম মাদ্রাসায় বর্ষা মৌসুমে ছাত্রছাত্রীদের জন্য সম্পূর্ণ বিনামূল্যে নৌকায় করে আনা-নেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এর সম্পূর্ণ ব্যয় বহন করেন মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা মাওলানা সৈয়দ শামসুজ্জামান। এই ব্যতিক্রমী পদক্ষেপের কারণে এলাকার দরিদ্র পরিবারের ছেলেমেয়েরা নির্বিঘ্নে শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ পাচ্ছে।
মাদ্রাসা সমূহের প্রতিষ্ঠাতা হযরত মাওলানা সৈয়দ শামসুজ্জামান সাহেব দাঃ জানান, ‘তিল তিল করে গড়ে তোলা এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির জন্য দীর্ঘদিনের স্বপ্ন ছিল উচ্চশিক্ষার দ্বার উন্মোচন করা। আন্তরিক চেষ্টা এবং দোয়ার ফলস্বরূপ এ বছর সুলেমানপুর হযরত শাহজালাল (র.) জামিয়া আরাবিয়া দাখিল মাদ্রাসা মহান আল্লাহর রহমতে আলিম শ্রেণি পর্যন্ত সরকারি অনুমোদন লাভ করেছে।
স্থানীয়দের ভাষ্য, সুলেমানপুর হযরত শাহজালাল (র.) জামিয়া আরাবিয়া দাখিল মাদ্রাসা আলিম শ্রেণি পর্যন্ত সরকারি অনুমোদন লাভ করেছে। এটি এই অঞ্চলের শিক্ষাব্যবস্থার ইতিহাসে একটি মাইলফলক, যা প্রমাণ করে অক্লান্ত পরিশ্রম ও আল্লাহর অশেষ রহমত থাকলে অসম্ভবকেও সম্ভব করা যায়। সেই মহিমান্বিত অধ্যায়ের প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে আলিম শ্রেণির প্রথম সবক অনুষ্ঠিত হয়েছে। এটি নিঃসন্দেহে আমাদের গ্রামের ইতিহাসে এক নতুন দিগন্তের সূচনা—যেখানে স্বপ্ন, সাধনা আর অর্জন মিলেমিশে এক হয়েছে।
মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা হাবিবুর রহমান জানান, ‘যেসব শিক্ষার্থী এখনও আলিম শ্রেণির রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করতে পারেনি, তাদের দ্রুত তার সাথে মাদ্রাসায় যোগাযোগ করলে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ এসব শিক্ষার্থীর সম্পূর্ণ ফ্রি রেজিস্ট্রেশন, আলিমের সমস্ত কিতাব এবং ফরম ফিলাপের ব্যয়ভার বহন করবে। প্রয়োজনে প্রিন্সিপালের মোবাইল নম্বরে যোগাযোগ করা যেতে পারে: 01716-831331।