মৌলভীবাজার প্রতিনিধি:
সনাতনী ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় উৎসব। শারদীয় দুর্গোৎসবকে সামনে রেখে মৌলভীবাজারে ইতোমধ্যেই উৎসবের আবহে ভাসছে। পূজোর ঘণ্টাধ্বনি, ঢাকের বাদ্য ও আনন্দ-উচ্ছ্বাসের সাথে একাত্মতায় হয়ে উঠেছে স্থানীয় রাজনীতিও। আগামী দূর্গোৎসবকে কেন্দ্র করে শহরের সনাতনী সম্প্রদায়ের নেতা, সংগঠক ও সুধীজনদের সঙ্গে এক বিশেষ মতবিনিময় সভার আয়োজন করেছে সদ্য কাউন্সিলে নির্বাচিত মৌলভীবাজার পৌর বিএনপি’র নেতৃবৃন্দ। রবিবার (২২শে সেপ্টেম্বর) রাত ৮টার দিকে শহরের পৌরসভার কনফারেন্স হলরুমের আয়োজনে জমে ওঠে এই সভাস্থল।
পূজা মণ্ডপের সভাপতি-সম্পাদক থেকে শুরু করে পৌর ও জেলা বিএনপি’র শীর্ষ নেতৃবৃন্দ—সকলেই একত্রিত হন এক শুভ লক্ষে। লক্ষ্য একটাই—আসন্ন দুর্গোৎসবে যেন নির্বিঘ্ন ও শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয়। এই প্রতিপাদ্য বিষয়কে সামনে রেখে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ উপস্থিত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন নবনির্বাচিত পৌর বিএনপি’র সভাপতি অলিউর রহমান। প্রাণবন্ত উপস্থাপনায় ছিলেন সিনিয়র সহ-সভাপতি সারওয়ার মজুমদার ইমন।
প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জেলা বিএনপি’র আহ্বায়ক ও সাবেক পৌর মেয়র মো. ফয়জুল করিম ময়ূন। বিশেষ অতিথি ছিলেন জেলা বিএনপি’র সদস্য সচিব আব্দুর রহিম রিপন এবং জেলা বিএনপি’র আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ও বাংলাদেশ পূজা উদযাপন ফ্রন্ট মৌলভীবাজার জেলা শাখার আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট সুনীল কুমার দাশ। এছাড়াও বক্তব্য রাখেন জেলা বিএনপি’র আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ও সাবেক সফল পৌর কাউন্সিলর স্বাগত কুমার দাশ চৌধুরী, পৌর বিএনপি’র সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কামাল আহমেদ, সাংগঠনিক সম্পাদক রেজাউল করিম রেজা এবং হিন্দু সম্প্রদায়ের বেশ কয়েকজন কমিউনিটির নেতা।
সভায় ভার্চুয়ালি যুক্ত হন বিএনপি’র জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও সাবেক এমপি এম নাসের রহমান। তাঁর কণ্ঠে ফুটে ওঠে সতর্কতার বার্তা: “বিশৃঙ্খলাকারীরা যেন কোনো সুযোগ না পায় সেজন্য সকলে সদাসতর্ক থাকতে হবে। জেলার প্রতিটি ইউনিটের নেতৃবৃন্দ এবং পূজা উদযাপন ফ্রন্টের নেতৃত্বকে সজাগ থাকতে হবে। অতীতে যেমন আমরা হিন্দু ভাইবোনদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব পালনে সহযোগিতা করেছি, এবারও যেন তার ব্যতিক্রম না হয়। বিএনপি’র সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের সতর্ক থাকতে হবে।” প্রধান অতিথি ফয়জুল করিম ময়ূন তাঁর বক্তব্যে বলেন,“কুচক্রী মহল যেন কোনোভাবেই সুযোগ নিতে না পারে সেদিকে সবার সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে।
বিএনপি’র নেতাকর্মীরা হিন্দু ভাইবোনদের পাশে রয়েছে। আপনারা নির্বিঘ্নে উৎসব পালন করুন।” জেলা বিএনপি’র সদস্য সচিব আব্দুর রহিম রিপন তাঁর বক্তব্যে তুলে ধরেন দলের মূল দর্শন: “বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল সংখ্যাগুরু-সংখ্যালঘু তত্ত্বে বিশ্বাস করে না। শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের দর্শন রয়েছে—আমরা ধর্মীয়ভাবে কারো আইডেন্টিটি দেবো না। আমরা সবাই বাংলাদেশি। সংখ্যালঘু শব্দকে আমরা ট্যাগ হিসেবে দেখি।
বিএনপি সংখ্যাগুরু বা সংখ্যালঘু কোনো বিভাজনে বিশ্বাস করে না। বাংলাদেশি পরিচয়ই হোক আমাদের একমাত্র পরিচয়।” তিনি আরও বলেন, “জেলার কোনো মণ্ডপে যাতে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি না হয়, সেজন্য বিএনপি’র প্রতিটি ইউনিটকে সজাগ থাকতে হবে। যেকোনো অপ্রীতিকর ঘটনা মোকাবেলায় নেতাকর্মীদের সতর্ক রাখা হয়েছে।” সভা শেষ হয় এক আশাবাদী পরিবেশে—যেখানে ধর্মীয় উৎসব কেবল সনাতনী সম্প্রদায়ের নয়, বরং পুরো জেলার আনন্দ-উৎসব হিসেবে ধরা দেয়। মতবিনিময়ের এই আয়োজন যেন এক প্রতিশ্রুতি—সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি, ঐক্য ও শান্তির বাণী ছড়িয়ে পড়ুক সকলের আনন্দের সাথে সামিল হতে।