জবি প্রতিনিধি
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) শিক্ষার্থীদের ওপর বহিরাগতদের ন্যাক্কারজনক হামলার প্রতিবাদে মানববন্ধন করেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) শিক্ষক সমিতি।
সোমবার (১ সেপ্টেম্বর) দুপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার প্রাঙ্গণে আয়োজিত এ কর্মসূচিতে শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা অংশগ্রহণ করেন।
মানববন্ধনে সভাপতিত্ব করেন জবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মোঃ মোশাররাফ হোসেন এবং সঞ্চালনা করেন সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মোঃ রইছ উদ্দীন।
সমাবেশ থেকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ও বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে সংশ্লিষ্ট দুষ্কৃতিকারীদের দ্রুত গ্রেফতার ও বিচারের আওতায় আনার দাবি জানানো হয়। একই সঙ্গে গণ অধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি নুরুল হক নূরের ওপর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নামে যারা হামলা চালিয়েছে তাদের সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা প্রদান এবং দায়ীদের আইনের আওতায় এনে বিচারের মুখোমুখি করার আহ্বান জানানো হয়।
বক্তারা উল্লেখ করেন, শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ওপর এ ধরনের বর্বর ও অমানবিক হামলা চরম নিন্দনীয়। ফ্যাসিবাদের বিস্তার রোধে আমাদের সবাইকে সজাগ থাকতে হবে এবং নিজেদের মধ্যে ঐক্য অটুট রাখতে হবে। এখন থেকে যে কোনো অন্যায় অবিচারের বিরুদ্ধে সচেষ্ট থাকাটাই আমাদের মূল লক্ষ্য। তাঁরা আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে হামলাকারীদের শনাক্ত করে গ্রেফতার ও বিচারের দাবি জানান।
জবি প্রেসক্লাব এর সাধারণ সম্পাদক ইউছুব ওসমান বলেন, ‘গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে বারবার ছাত্রদের টার্গেট করে হামলা করা হচ্ছে, রক্তাক্ত করা হচ্ছে। কিভাবে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের উপর যেভাবে পৈশাচিক হামলা চালানো হয়েছে, তা সারাদেশের মানুষ দেখেছে। এমণ ঘৃণ্য সন্ত্রাসী হামলার তীব্র নিন্দা জানাই। আইনশৃঙ্খলাবাহিনী যেভাবে নিষ্ক্রিয় ভূমিকা পালন করেছে তা প্রশ্নবিদ্ধ। পতিত শক্তি এসবের সুযোগ নিয়ে ক্যাম্পাসগুলোকে অশান্ত করার পায়তারা করছে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সবাইকেও এব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নূরের ওপর আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর নৃশংস হামলারও নিন্দা জানাই। দ্রুত সময়ের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে এসব ঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তার করে যথাযথ বিচারের কাজ সম্পন্ন করতে হবে। এমন ঘটনা যাতে আর না ঘটে সে ব্যাপারেও ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।’
জবি শিক্ষক সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বেলাল হোসাইন বলেন, ‘গত এক সপ্তাহ ধরে বাংলাদেশে যা হচ্ছে তা পাঁচ-ই আগস্টের আগের স্টাইল। শিক্ষার্থীদের যেভাবে হামলা হচ্ছে তা পাঁচই আগস্টের আগে আমরা দেখতে পেতাম। আমাদের সবার ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। আধিপত্যবাদীদের টার্গেট সম্পর্কে সচেতন থাকতে হবে। একাত্তর এবং চব্বিশকে মুখোমুখি দাড় করিয়ে মব ও অরাজকতা সৃষ্টির চেষ্টা চলছে।’
জবি শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক রইছ উদদীন বলেন, ‘আমরা দেখেছি একটি সংগঠনের প্রধান যিনি বিগত যেকোনো আন্দোলনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন, চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানেও যিনি সম্মুখ সারিতে অবদান রেখেছেন, যার উপর বিগত সময় বারবার হামলা হয়েছে সেই নুরুল হক নুরের উপর অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়েও আমরা তার উপর যে হামলার দৃশ্য দেখেছি তা অত্যন্ত বেদনাদায়ক। আমরা এই হামলার সাথে যারা জড়িত তাদের দৃষ্টান্তমূলক বিচারের দাবি করছি। উপদেষ্টার কাজ নিন্দা জানানো না, উপদেষ্টার কাজ বিচার নিশ্চিত করা। আমরা এর বিচার দেখতে চাই গতকয়েক দিনের ঘটনায় আমাদের ২ টি দাবি।
১.জনাব নুরুর উপর হামলাকারী আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের চিহ্নিত করে এর মোটিভ উদঘাটন করতে হবে এবং লাল টি শার্ট পরা হামলাকারীকে আইডেনটিফাই করে তদন্তের আওতায় এনে প্রকৃত ঘটনা উদঘাটন করতে হবে ।সরকার ও শৃংখলা বাহিনীর স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে দ্রুত এ পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে ।
২.আগামী ২৪ ঘন্টার মধ্যে চট্টগ্রাম ও কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের উপর হামলাকারীদের গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
জবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড মোঃ মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘আমি সরকারের কাছে আহবান জানাচ্ছি আমরা আজকে যে দাবি নিয়ে এখানে দাঁড়িয়েছি সরকার যেন দ্রুত এই দাবি মেনে নেয় এবং এর সাথে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করে।’
গত তিন-চারদিন দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি বিশেষ করে একটি দলের প্রধান ও পরিচিতমুখ সাবেক ডাকসু ভিপি নুরুল হক নুরের উপর অযাচিত হামলা এবং চট্টগ্রাম ও কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের উপর পৈশাচিক হামলার প্রতিবাদে ও হামলার সাথে জড়িতদের গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক বিচারের দাবিতে জবি শিক্ষক সমিতির আয়োজনে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা,কর্মচারী,ছাত্র ও সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ সহ অনেক শিক্ষক অংশগ্রহণ করেন।
মানববন্ধনে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, শিক্ষক সমিতির নেতৃবৃন্দ, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের প্রতিনিধি, ক্রিয়াশীল ছাত্র সংগঠনের নেতৃবৃন্দ, সাংবাদিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ এবং কর্মকর্তা-কর্মচারী সমিতির প্রতিনিধিরা বক্তব্য প্রদান করেন।