জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে (জবি) গত কয়েকদিন ধরে সম্পূরক বৃত্তি ও জকসু নির্বাচনের ২ দফা দাবিতে ধারাবাহিক কর্মসূচি পালন করছেন শিক্ষার্থীরা। তারই পরিপ্রেক্ষিতে “ব্রেক দ্য সাইলেন্স” কর্মসূচির মাধ্যমে তালা দিয়ে অবরুদ্ধ করা হয় ভিসি ভবন।
রবিবার (২৪ আগস্ট) সকাল ১০টা থেকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন শিক্ষার্থীরা।
অতঃপর আশানুরূপ পদক্ষেপ গৃহীত না হওয়ায় পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী দুপুর ১২টায় উপাচার্যের কক্ষের সামনে অবস্থান করে “ব্রেক দ্য সাইলেন্স” আন্দোলনের মাধ্যমে ২ দফা দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত অনির্দিষ্টকালের জন্য ভিসি ভবনের কার্যক্রম বন্ধ করে দেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা ‘ভিসি স্যার জানেন না নাকি, আমরা এখানে বসে গেছি’, ‘আটটা টু আটটা, বাজায় কার ঘণ্টা’, ‘হচ্ছে হবে বাদ দাও, কবে হবে বলে দাও’, ‘করছি করছি বাদ দাও, কবে হবে বলে দাও’ সহ বিভিন্ন স্লোগান তেলেন।
আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী জবির ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী শফিক খান হাসিব বলেন, “হাজার হাজার শিক্ষার্থীকে মেস বা ভাড়া বাসায় থেকে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে হয়, যা ঢাকার মতো শহরে ভীষণ ব্যয়বহুল। ফলে অনেক মেধাবী শিক্ষার্থী আর্থিক সংকটে ভোগেন। আবাসন বৃত্তি চালু হলে অন্তত ভাড়া ও জীবনযাপনের চাপ কিছুটা কমে আমরা পড়াশোনায় মনোযোগী হতে পারবো। আর জকসু আমাদের অধিকার ও গণতান্ত্রিক কণ্ঠস্বরের প্রতীক। আমাদের দুটি দাবি-ই ন্যায্য। তাই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দ্রুত এই দাবিগুলো বাস্তবায়ন করা উচিত।”
এ বিষয়ে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ জগন্নাথ শাখার আহ্বায়ক ফয়সাল মুরাদ বলেন, “লং মার্চ টু যমুনার মাধ্যমে আমাদের আদায়কৃত দাবি বাস্তবায়নে প্রশাসন ব্যর্থ হয়েছে। তাই সম্পূরক বৃত্তি ও জকসুর দাবিতে আমাদের এই কর্মসূচি গ্রহণ করতে হয়েছে। দাবি বাস্তবায়নের সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ ছাড়া আমরা আমাদের কর্মসূচি চালিয়ে যাবো।”
জবি শাখা ইসলামী ছাত্রশিবিরের সেক্রেটারি আব্দুল আলিম আরিফ বলেন, “শিক্ষার্থীদের প্রাণের দাবি আবাসন বৃত্তি ও জকসু বাস্তবায়নে আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দীর্ঘসূত্রিতা ও বড় ধরনের গাফিলতি দেখতে পাচ্ছি। ব্রেক দ্য সাইলেন্স কর্মসূচির মাধ্যমে আমরা এই দীর্ঘসূত্রিতার অবসান ঘটাতে চাচ্ছি। ইনশাআল্লাহ দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমাদের কর্মসূচি আমরা চালিয়ে যাবো।”
দুপুর দেড়টার দিকে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলাপকালে জবি উপাচার্য অধ্যাপক মো. রেজাউল করিম বলেন, “জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জকসু) নির্বাচন নিয়ে কাজ করতে গিয়ে এখন পর্যন্ত কোনো ধরনের বাধার মুখে পরিনি।”
এছাড়াও তিনি বলেন, “মঙ্গলবার বিশেষ সিন্ডিকেট সভা ডেকে জকসুর নীতিমালা নিয়ে আলোচনা করা হবে। সিন্ডিকেটে অনুমোদনের পর তা বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন, শিক্ষা মন্ত্রণালয় হয়ে আইন মন্ত্রণালয়ে যাবে। রাষ্ট্রপতির অনুমোদনক্রমে আইন পাশ হলে আগামী ৯০ দিনের মধ্যেই জকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।”
এরপর ছাত্র অধিকার পরিষদের জবি শাখার সভাপতি এ কে এম রাকিব বলেন, “প্রশাসন ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচনের যে আশ্বাস দিয়েছে, তা “প্রহসন”। তারা ভাবছে জাতীয় নির্বাচনের আগে জকসু নির্বাচন না হলে তা আর কখনোই হবে না। আমরা তা হতে দিবো না। সম্পূরক বৃত্তি ও জকসুর সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ ঘোষনার দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আমরা ভিসি ভবন ছাড়বো না। দরকার হলে আমরা আরো কঠোর অবস্থানের ঘোষনা দিবো।”
যারই পরিপ্রেক্ষিতে ভিসির কক্ষের সামনে অবস্থান করে আরো কিছুক্ষণ স্লোগান দিয়ে পুরো ভিসি ভবন তালাবদ্ধ করে সকল কার্যক্রম বন্ধ করে দেন শিক্ষার্থীরা।
সর্বশেষ ভিসি ভবনে তালা দেওয়ার বিষয়ে জবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. রেজাউল করিম জানান, “জকসুর ব্যাপারে সবকিছু ছাত্রনেতাদের বলেছি। তারপরও কেনো তারা তালা দিলো বুঝতে পারছি না। এখন আর কিছু বলতে পারছি না।”
প্রসঙ্গত, সম্পূরক বৃত্তি ও জকসুর এই দুই দফা দাবিতে গত ১৯ তারিখ থেকে ধারাবাহিক কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করছেন শিক্ষার্থীরা। আজকের এই তালাবদ্ধ করার মধ্যে একটি সুষ্ঠ সমাধানের প্রত্যাশা সাধারণ শিক্ষার্থীদের।