মৌলভীবাজার প্রতিনিধি:
মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার কর্মধা ইউনিয়নের মুরইছড়া চা-বাগানের হতদরিদ্র পরিবারে জন্ম নেওয়া গোপাল সাঁওতাল (পিতা-অনিল ম্ররং, মাতা-সঞ্চরিয়া সাঁওতাল, জন্ম: ৪ঠা জানুয়ারি ২০২২) জন্মের পর থেকেই বহুমাত্রিক শারীরিক প্রতিবন্ধকতায় ভুগছে। তিন বছরের শিশুটি স্বাভাবিকভাবে কথা বলা ও চলাফেরায়ও সম্পূর্ণ অক্ষম, তাই তার মা সংসারের কাজের সময় ও গোপালের খাওয়ার সময় গর্তে রেখে দাঁড় করিয়ে করতে হয়।
এ বিষয়টি নিয়ে কিছুদিন আগে বিভিন্ন গণমাধ্যমে ফলাওভাবে প্রচার হয়। পরিবারের আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে দীর্ঘদিন ধরে তার কোনো চিকিৎসা হয়নি। চা-বাগানের শ্রমিক হিসেবে তার বাবা-মা অতি কষ্টে সংসার কোন প্রকার চালাতে পারলে ও সন্তানের চিকিৎসার ব্যয় বহন করার মত সেই ক্ষমতা নেই বললেই চলে। ফলে জন্ম থেকে আজ পর্যন্ত অসহায় অবস্থায় জীবনের এক একটি দিন কাটাচ্ছে ছোট্ট গোপাল।
এমন পরিস্থিতির বিষয়ে দেশে বিদেশে প্রচার হবার পর মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক মো. ইসরাইল হোসেন মানবিক উদ্যোগ গ্রহণ করেন। বুধবার (২০শে আগস্ট) জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে গোপালের সার্বিক চিকিৎসার দায়িত্বভার নেওয়া হয়। জেলা প্রশাসনের অর্থায়নে শিশুটিকে সিআরপি (সেন্টার ফর দ্য রিহ্যাবিলিটেশন অব দ্য প্যারালাইজড)-এর মৌলভীবাজার শাখায় তিন মাসব্যাপী চিকিৎসা, ফিজিওথেরাপি, বিশেষায়িত সেবা এবং থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। চিকিৎসার সম্পূর্ণ ব্যয়ভার বহন করবে মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসন।
জেলা প্রশাসক মো. ইসরাইল হোসেন বলেন, ‘একটি শিশুর জীবন যেন প্রতিবন্ধকতায় আটকে না যায়, সে সুস্থ ও স্বাভাবিকভাবে বেড়ে উঠতে পারে—এ দায়িত্ব সমাজের সবার। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে গোপালের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। আশা করি চিকিৎসার মাধ্যমে সে ধীরে ধীরে সুস্থ ও স্বাভাবিক হয়ে উঠবে।’ গোপালের পরিবার জেলা প্রশাসকের এই মানবিক পদক্ষেপের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তারা বলেন, “আমরা কখনও ভাবিনি গোপালের চিকিৎসা করা সম্ভব হবে।
আজ জেলা প্রশাসক আমাদের সন্তানের দায়িত্ব নিয়েছেন—এটি আমাদের জীবনের সবচেয়ে আনন্দের দিন।” এই উদ্যোগ মৌলভীবাজার জেলা জুড়ে মানবিক কর্মকাণ্ডের দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে সরকারি সহায়তা যেমন কার্যকরী, তেমনি সমাজের বিত্তবানদের এগিয়ে আসা উচিত বলে জানান স্থানীয়রা।