ইবি প্রতিনিধি:
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) লোক প্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক ও সাদা দলের আহ্বায়ক ড. এ কে এম মতিনুর রহমানের সাথে শাখা ছাত্রশিবিরের নেতাদের বাকবিতন্ডার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে ইউনিভার্সিটি টিচার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ইউট্যাব)কেন্দ্রীয় ও ইবি শাখাসহ জিয়া পরিষদ ইবি শাখা।
বৃহস্পতিবার(১৪ আগষ্ট) কেন্দ্রীয় সংগঠনের সভাপতি অধ্যাপক ড. এবিএম ওবায়দুল ইসলাম ও মহাসচিব অধ্যাপক ড. মোর্শেদ হাসান খান স্বাক্ষরিত ও গত বুধবার ইবি জিয়া পরিষদের সভাপতি অধ্যাপক ড. ফারুকুজ্জামান, সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম স্বাক্ষরিত ও ইবি শাখা ইউট্যাবের সভাপতি অধ্যাপক ড. তোজাম্মেল হোসেন, যুগ্ম সম্পাদক অধ্যাপক ড. রশিদুজ্জামান স্বাক্ষরিত পৃথক বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়।
ইউট্যাবের সভাপতি ও মহাসচিব এক বিবৃতিতে বলেন, ইবির লোকপ্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক, বিএনপিপন্থি সাদা দলের আহ্বায়ক ও ইউট্যাবের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি ড. মতিনুর রহমান বুধবার (১৩ আগস্ট) তার পূর্বনির্ধারিত ক্লাসে উপস্থিত হয়ে দেখেন যে, শ্রেণিবহির্ভূত কিছু শিক্ষার্থী রাজনৈতিক কার্যক্রম পরিচালান করছে। এমতাবস্থায় অধ্যাপক মতিনুর রহমান তাদেরকে রাজনৈতিক কার্যক্রম স্থগিত করে কক্ষ ত্যাগ করতে বলেন। কিন্তু উল্টো ইসলামী ছাত্রশিবিরের কতিপয় উচ্ছৃঙ্খল নেতাকর্মী অধ্যাপক একেএম মতিনুর রহমানের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ ও তাকে লাঞ্ছিত করে এবং বাকবিতণ্ডায় লিপ্ত হয়। একপর্যায়ে অধ্যাপক মতিনুর রহমান তার পূর্বনির্ধারিত ক্লাস গ্রহণ না করে তিনি সেখান থেকে চলে যান এবং ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন।
ইউট্যাবের নেতৃদ্বয় বলেন, উক্ত ঘটনার প্রেক্ষিতে এটি স্পষ্ট হয় যে, ছাত্রশিবির একজন সিনিয়র অধ্যাপকের সঙ্গে যে ধরনের আচরণ করেছে তা অনাকাঙ্ক্ষিত এবং রাজনৈতিক শিষ্টাচার বহির্ভূত। আমরা এ ধরনের ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। সেইসঙ্গে অভিযুক্ত শিবির নেতাদেরকে তাদের অন্যায় আচরণের জন্য অধ্যাপক মতিনুর রহমানের কাছে ক্ষমা প্রার্থনার আহ্বান জানাই।
তারা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস বাদ দিয়ে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী না হয়েও বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাসরুমে রাজনৈতিক কার্যক্রম করা সম্পূর্ণরুপে বেআইনি এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ বলেই আমরা মনে করি।
ইবি জিয়া পরিষদের সভাপতি অধ্যাপক ড. ফারুকুজ্জামান খান ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম এক বিবৃতিতে জানান, একজন শিক্ষকের প্রতি যেকোনো ধরনের অবমাননাকর আচরণ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার পরিবেশ, শিক্ষক-শিক্ষার্থী সম্পর্ক এবং সার্বিক পেশাদারিত্ব ও মর্যাদার পরিপন্থী।
এছাড়া ইউট্যাব ইবি শাখার সভাপতি অধ্যাপক ড. তোজাম্মেল হোসেন ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. রশিদুজ্জামান একই ঘটনার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, পাঠদানের নির্দিষ্ট সময়ে শ্রেণিকক্ষে রাজনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনা শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট করে এবং শিক্ষক-শিক্ষার্থীর সম্পর্কের জন্য হুমকিস্বরূপ। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে এ ধরনের কর্মকাণ্ড বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানাই।
বিবৃতিতে জিয়া পরিষদ ইবি শাখা প্রশাসনের নিকট বেশকিছু দাবি জানান। দাবিসমূহ হলো- বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল সংগঠনকে প্রাতিষ্ঠানিক নিয়ম-নীতি, প্রক্রিয়া-প্রকরণ ও সময়সূচি মেনে কার্যক্রম পরিচালনার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কর্তৃক প্রয়োজনীয় কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা, বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অধিকার ও সম্মান অক্ষুণ্ন রাখতে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করা, ক্যাম্পাসে রাজনৈতিক মতপার্থক্য যেন কখনোই শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট না করে, সেই লক্ষ্যে কার্যকর মনিটরিং, সচেতনতা সৃষ্টি এবং প্রযোজ্য ক্ষেত্রে শাস্তি মূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
উল্লেখ্য, গত বুধবার লোক প্রশাসন বিভাগের সভাপতির অনুমতি নিয়ে বিভাগের ২০২৪-২৫ বর্ষের নবীন শিক্ষার্থীদের সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে ক্লাসরুমে যান শিবিরের প্রতিনিধি দল। ৫/৭ মিনিট পর শিডিউল ক্লাস নিতে আসেন বিভাগের অধ্যাপক ড. এ কে এম মতিনুর রহমান। তিনি ক্লাসে এসে শিবির নেতাদের দেখে ক্লাস থেকে বের হয়ে যেতে বলেন। পরে বিভাগের করিডোরে তাদের সাথে ওই শিক্ষকের বাগবিতণ্ডা হয়। পরে বিভাগের শিক্ষক, প্রক্টরিয়াল বডি ও শিবির, ছাত্রদল প্রতিনিধির সাথে আলোচনার মাধ্যমে ওই শিক্ষকের নিকট শিবির নেতাদের ক্ষমা চাওয়ার মাধ্যমে বিষয়টির মীমাংসা করা হয়।