আটপাড়া (নেত্রকোনা) প্রতিনিধি :
নেত্রকোনার আটপাড়া উপজেলার কৈলং শেখবাড়ী নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শেখ আবুল কালাম আজাদের বিরুদ্ধে ঘুষ দাবি, জালিয়াতি ও নিয়োগ বাণিজ্যের গুরুতর অভিযোগ তুলেছেন প্রতিষ্ঠানটির এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা। তাঁদের অভিযোগ, শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে অনুমোদিত এরিয়া বিল (বকেয়া বেতন) পেলেও প্রধান শিক্ষক স্বাক্ষরের বিনিময়ে বিলের অর্ধেক টাকা ঘুষ হিসেবে দাবি করছেন।
প্রতিকার চেয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন শিক্ষক-কর্মচারীরা। অভিযোগপত্রে তিনজন সহকারী শিক্ষক ও দুজন কর্মচারী স্বাক্ষর করেন। বিষয়টি তদন্ত করে প্রতিবেদন দিতে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেন ইউএনও। লিখিত অভিযোগে বলা হয়, প্রধান শিক্ষক বিলপত্রে স্বাক্ষরের শর্ত হিসেবে অর্ধেক টাকা দাবি করেন। বিষয়টি একাধিকবার তাঁকে জানানো হলেও তিনি অনড় অবস্থানে থাকেন। ফলে শিক্ষক-কর্মচারীরা তাঁদের ন্যায্য প্রাপ্য থেকে বঞ্চিত হওয়ার আশঙ্কায় রয়েছেন।
খুজ নিয়ে জানা যায়, বিদ্যালয়ে লাইব্রেরিয়ান ও সহকারী শিক্ষক নিয়োগের নামে কয়েকজনের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের অর্থ গ্রহণ করেন প্রধান শিক্ষক। কিছু ব্যক্তিকে নিয়োগপত্র দিলেও তাঁদের নাম হাজিরা খাতায় নেই, যা স্পষ্ট অনিয়ম ও প্রতারণার শামিল। স্থানীয়রা মনে করছেন, এ বিষয়ে সঠিকভাবে তদন্ত করা হলে আরও চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশ পাবে। শিক্ষকরা দাবি করছেন, প্রধান শিক্ষকের একক কর্তৃত্ব, ক্ষমতার অপব্যবহার ও অর্থ লেনদেনের কালোছায়া থেকে বিদ্যালয়কে রক্ষা করতে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি।
এছাড়া জানা যায়, প্রধান শিক্ষক তার পিতা আব্দুল আজিজ শেখকে বিদ্যালয়ের সভাপতি হিসেবে নিযুক্ত করেন। পরবর্তীতে তার পিতা মৃত্যুবরণ করলে, তিনি মৃত পিতার নামে জাল স্বাক্ষর ব্যবহার করে বিদ্যালয়ের নানা প্রশাসনিক কার্যক্রম চালিয়ে যান। এমনকি উক্ত জাল স্বাক্ষরে নিজেই নিয়োগপত্র ইস্যু করেন। পরে, একইভাবে নিজের স্ত্রীকেও সভাপতি পদে বসিয়ে সেই অনিয়মের ধারাবাহিকতা বজায় রাখেন, যা সুস্পষ্ট ক্ষমতার অপব্যবহার বলে মনে করছেন শিক্ষক-কর্মচারীরা।
ভুক্তভোগী একজন শিক্ষিকা টপি আক্তার মুঠোফোনে বলেন, ২০১৪ সালে প্রধান শিক্ষক চাকরি দেওয়ার কথা বলে তার কাছ থেকে প্রায় দুই লাখ টাকা নেন এরপর বিভিন্ন সময়ে স্কুলে তাকে ক্লাস নেওয়ার দায়িত্ব দেওয়া হয় কিন্তু তারপরো পূর্ণ নিয়োগ হয়নি। যার ফলে টাকা ফেরত চাইলে প্রধান শিক্ষক প্রতিবার সময় নিয়ে টালবাহানা করেন নিরুপায় হয়ে ওই নারী অবশেষে অভিযোগ নিয়ে সরাসরি সেনাবাহিনীর প্রতিনিধি দলের কাছে উপস্থিত হন, যাঁরা বর্তমানে দেশের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে মাঠে রয়েছেন।
ভুক্তভোগী জানান, বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর প্রধান শিক্ষক তার সাথে অসংবেদনশীল আচরণ করে বলেন, ‘আপনি তো আর্মির কাছে গেছেন, তাহলে আর্মিই টাকা দেবে, আমি দিব না।’ অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে প্রধান শিক্ষক শেখ আবুল কালাম আজাদ বলেন, পাওনা টাকা চাওয়ায় ঘুষের অভিযোগ করছে। এটা মিথ্যা ও ষড়যন্ত্র। আমি ইতোমধ্যে স্বাক্ষর করে দিয়েছি, কয়েকজন টাকা পেয়েও গেছে।
অন্য অনেক স্কুল তো এরিয়া বিল দেয়ই না— আমি তো দিচ্ছি।” উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আতিকুর রহমান বলেন, বারবার বলার পরও প্রধান শিক্ষক এরিয়া বিলে স্বাক্ষর করছেন না। অন্যান্য স্কুলে অনেক আগেই এরিয়া বিল দেওয়া হয়েছে। শুধু এই বিদ্যালয়েই বিল আটকে আছে। ইতোমধ্যে আমরা তদন্ত করে প্রতিবেদন জমা দিয়েছি।” ইউএনও রুয়েল সাংমা বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, “তদন্ত প্রতিবেদন এখনো হাতে পাইনি। তবে প্রতিবেদন পেলে অভিযোগের সত্যতা থাকলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে সুপারিশ করা হবে।”