(জলঢাকা) নীলফামারী:
নীলফামারী জেলার জলঢাকা উপজেলার বগুলাগাড়ি গ্রামের মেয়ে মেহেরীন চৌধুরী শুধু একজন শিক্ষিকা নন। তিনি ছিলেন দায়িত্ববোধ, মমতা ও আত্মত্যাগের এক উজ্জ্বল প্রতীক। রাজধানীর মাইলস্টোন কলেজে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় শিক্ষার্থীদের প্রাণ বাঁচাতে গিয়ে তিনি নিজেই দগ্ধ হয়ে শেষ পর্যন্ত মৃত্যুবরণ করেন। খোঁজ নিয়ে জানা যায় তার পরিবার রাজনৈতিক, সামাজিক ও শিক্ষাক্ষেত্রে সুপরিচিত ও সক্রিয় ছিলেন।
শিক্ষাজীবনে মেধাবী ও সচেতন ছিলেন তিনি। পরবর্তীতে মেহেরীন চৌধুরী শিক্ষকতা পেশায় নিজেকে উৎসর্গ করেন। পরবর্তীতে যোগ দেন ঢাকার মাইলস্টোন কলেজে। শিক্ষিকা হিসেবে তিনি শুধু পাঠদানেই সীমাবদ্ধ ছিলেন না বরং শিক্ষার্থীদের নৈতিক, মানসিক এবং মানবিক বিকাশেও রাখতেন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা।
নিজ এলাকায় সমাজসেবায়ও ছিলেন সমান সক্রিয়। বগুলাগাড়ি স্কুল অ্যান্ড কলেজের অ্যাডহক কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন নিষ্ঠার সঙ্গে। গত ২১ জুলাই, মাইলস্টোন কলেজে বিমান বিধ্বস্ত হয়ে আগুন ধরে যায়। ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্যে নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে একে একে প্রায় ২০ শিক্ষার্থীকে নিরাপদে সরিয়ে আনেন মেহেরীন। এরপর তিনি নিজেই আগুনের ফাঁদে আটকা পড়েন। মারাত্মক দগ্ধ হন তিনি।
পরে চিকিৎসারত অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মেহেরীন চৌধুরী প্রমাণ করেছেন “একজন শিক্ষকের দায়িত্ব শুধু বই পড়ানো নয়, প্রয়োজনে জীবন দিয়েও শিক্ষার্থীদের রক্ষা করা।” তার এই আত্মত্যাগ দেশের শিক্ষা ও মানবিকতার ইতিহাসে অনন্য দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।
আজ (২২ জুলাই) দুপুরে তার নিজ গ্রাম বগুলাগাড়িতে জানাজা শেষে তাঁকে দাফন করা হয়। তাকে শেষ বিদায় জানাতে উপস্থিত ছিলেন হাজারো মানুষ যাদের চোখে ছিলো অশ্রু, মুখে ছিলো কৃতজ্ঞতা। মেহেরীন চৌধুরী এখন আর শুধু একজন শিক্ষিকার নাম নয়। তিনি হয়ে উঠেছেন আত্মত্যাগ, দায়িত্ববোধ ও ভালোবাসার প্রতীক।