ইবি প্রতিনিধি:
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) শিক্ষার্থী সাজিদ আব্দুল্লাহর মৃত্যুর সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করেছেন তাঁর পরিবার। এসময় সাজিদের লাশ নিয়ে রাজনীতি করে ক্যাম্পাসে কোনো অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি না করার অনুরোধ করেন তারা।
মঙ্গলবার (২২ জুলাই) সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত সাংবাদিকদের সাথে এক মতবিনিময়কালে এ দাবি করেন তারা।
জানা যায়, সাজিদের মৃত্যুর সুষ্ঠু তদন্তে কাজের অগ্রগতি জানতে ক্যাম্পাসে আসেন সাজিদের বাবা, চাচা, ভগ্নিপতি ও প্রতিবেশী। পরে সাজিদের মৃত্যুর কারণ উদঘাটনে গঠিত ফ্যাক্টস ফাইন্ডিং কমিটি ও হল কর্তৃপক্ষের তদন্ত কমিটির সাথে সাক্ষাৎ করেন তারা।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সাজিদের পরিবার জানান, সাজিদকে যখন আমাদের নিকট মেডিকেল থেকে মৃত হস্তান্তর করা হয়, তার পূর্বে প্রশাসনের পক্ষ থেকে ১০কার্যদিবসের মধ্যে মৃত্যুর সুষ্ঠু তদন্তের বিষয়ে লিখিত স্বাক্ষর করেন। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আরও দ্রুত তদন্তের দাবি জানালে ৬ দিনের (সম্ভবত) মধ্যে তা সম্পন্ন করার কথা জানতে পেরেছি। আমরা ক্যাম্পাসে এসে তদন্ত কমিটির সাথে সাক্ষাৎ করেছি। আমাদের তদন্ত কমিটির উপর আস্থা আছে। আমরা চাই নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সুষ্ঠু তদন্ত করে সাজিদের মৃত্যুর কারণ উদঘাটন হোক।
তারা আরও জানান, তদন্তের পর যদি মনে হয় অস্বাভাবিক মৃত্যু তাহলে আমরা এ হত্যার সুষ্ঠু বিচারের জন্য যা করা প্রয়োজন তা করবো। আপাতত থানায় একটি জিডি করা আছে। তদন্তের পর পরিস্থিতি অনুযায়ী আমরা সিদ্ধান্ত নিব যে মামলা করা যায় কিনা।
তারা জানান, ক্যাম্পাসের ১৬ হাজার শিক্ষার্থী আমাদের সন্তানের মতো। তারা এখানে পড়াশোনার জন্য এসেছে। সাজিদের এ মর্মান্তিক ঘটনায় সকলেই ব্যথিত। তারা সাজিদের মৃত্যুর কারণ জানতে ও বিভিন্ন দাবিতে আন্দোলন করছে। কিন্তু সাজিদের লাশ নিয়ে রাজনীতি করে ক্যাম্পাসে কোনো অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি হোক এটা আমরা চাই না। আমরা চাই ক্যাম্পাসে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় থাকুক এবং সাজিদের আকস্মিক মৃত্যুর তদন্ত কার্যক্রম দ্রুত ও সঠিকভাবে চলতে থাকুক।
মতবিনিময়কালে উপস্থিত ছিলেন সাজিদের বাবা আহসান হাবিবুল্লাহ দেলওয়ার, সাজিদের চাচা, ভগ্নিপতি, প্রতিবেশী, ধর্মতত্ত্ব অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. আ ব ম ছিদ্দিকুর রহমান আশ্রাফী, আল কুরআন অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. নাসির উদ্দীন মিঝি শিক্ষকসহ সাংবাদিকবৃন্দ।
এদিকে বেলা ১১ টার দিকে প্রশাসন ভবন চত্বরে তিন দফা দাবিতে মুখে কালো কাপড় বেঁধে মৌন অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন শিক্ষার্থীরা। তাদের দাবি- সাজিদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ, দ্রুত সময়ে সুষ্ঠু তদন্ত সমাপ্ত ও দায়িত্ব অবহেলায় প্রশাসনের ক্ষমা চেয়ে স্পষ্ট বিবৃতি দিতে হবে।
পরে বেলা সাড়ে বারোটার দিকে প্রশাসন ভবন থেকে মৌন মিছিল শুরু করে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে প্রধান ফটকে এসে শেষ হয়।
আন্দোলনকারীরা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার এক ভাইকে হত্যা করা হয়েছে। তার হত্যার রহস্য দ্রুত উদঘাটনে প্রশাসনকে বারবার বলা হলেও আমাদের কথা শুনছে না। তখন বাধ্য হয়ে আন্দোলন করলে সেটাকে আবার মব বলে। অথচ আমরা মব করতে আসিনি। আমরা চাই প্রশাসন তাদের অপারগতা স্বীকার করুক। আপনারা আমাদের সাথে কথা বলেন। সাজিদের মৃত্যুর তদন্তের অগ্রগতি কতটুকু, আমাদেরকে জানান।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ইবির সহ-সমন্বয়ক সায়েম আহমেদ বলেন, শিক্ষার্থীরা মেইন গেইটে আন্দোলন করে আর একজন প্রক্টর তিন ঘন্টায় সেখানে আসতে পারলেন না, কোনো সন্তোষজনক উত্তর দিতে পারলেন না। অথচ রাতের বেলা আলোচনা করে নির্ধারণ করছেন আন্দোলন কারা করবে। এই নোংরামি আর আমাদের জীবন নিয়ে ছেলেখেলা কইরেন না। রাতের রাজনীতি আমরা আওয়ামীলীগ আমল থেকে দেখে আসছি। এগুলো আপনাদের রক্তের সাথে যায়না।
তিনি আরও বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি লন্ডনে বসে এখন পর্যন্ত একটা ভিডিও বার্তা বা বিবৃতি বা শোক বার্তা দিতে পারলেন না। এর চেয়ে লজ্জা কোথায় রাখবো আমরা। আমরা কত নগণ্য। আমাদের কারো জীবন চলে গেলে, আন্দোলন করলে আপনারা আবেগী এসব কথা বলেন। শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা দিতে আপনারা ব্যর্থ হয়েছেন, এখন পর্যন্ত আপনাদের এটা ভুল হইছে এই কথা বললেন না। আপনাদের অবশ্যই নিঃশর্ত ক্ষমা চাওয়া উচিত।
এর আগে গত ১৮ জুলাই সকাল সাড়ে ৯টায় সাজিদের লাশ পোস্টমর্টেম করা হয়।কুষ্টিয়া সদর হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ডা. রুমন রহমান জানান, সাজিদের ময়নাতদন্তের প্রাথমিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, পোস্টমর্টেমের প্রায় ৩০ ঘণ্টা পূর্বে (অর্থাৎ ১৬ জুলাই আনিমানিক দিবাগত রাত সাড়ে তিনটার আগে) সাজিদের মৃত্যু হতে পারে। এ ঘটনায় বিকেলে ৪টার দিকে ক্যাম্পাসের প্রধান ফটক আটকে বিক্ষোভ শুরু করেন তারা। পরে সন্ধ্যা ৭ টার দিকে ফটকের তালা খুলে দেয় তারা। এসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ছাত্রদল, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, ছাত্রশিবির, ছাত্র ইউনিয়ন ও ইসলামী ছাত্র আন্দোলনসহ অন্যান্য ছাত্রসংগঠনের নেতাকর্মীরা বিক্ষোভে অংশ নেন।
উল্লেখ্য, ১৭ জুলাই বিকেল সাড়ে ৬ টায় শাহ আজিজুর রহমান হল পুকুর থেকে আল কুরআন অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের ২০২১-২২ বর্ষের শিক্ষার্থী সাজিদের লাশ উদ্ধার করা হয়। সাজিদ টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার আহসান হাবিবুল্লাহ দেলওয়ারের একমাত্র ছেলে। পরে সাজিদের মৃত্যুর প্রকৃত কারণ উদঘাটনের দাবিতে উত্তাল হয়ে উঠেছে ক্যাম্পাস। ১৮ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও হল প্রশাসন থেকে দুইটি তদন্ত কমিটি করা হয়। ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছে উভয় কমিটি। এদিকে এই ঘটনায় ক্যাম্পাসে বহিরাগত প্রবেশ নিষিদ্ধ ও পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত পুকুরে নামা নিষিদ্ধ করে মাইকিং করেছে প্রশাসন। এর আগে ১৯ জুলাই সাজিদের মৃত্যুকে ‘হত্যাকাণ্ড’ দাবি করে সুষ্ঠু তদন্ত ও নিরাপদ ক্যাম্পাসের দাবিতে টানা পাঁচ ঘণ্টা বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা।