নিজস্ব প্রতিবেদক: নেত্রকোনার বারহাট্টা উপজেলায় কোরআন মাজীদ অবমাননার মামলার প্রধান আসামিকে গ্রেফতার করেছে বারহাট্টা থানা পুলিশ। প্রধান আসামির নাম আবু বক্কর (৫৫) তিনি সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা উপজেলার মৃত লালু মুন্সির ছেলে।
বুধবার ( ১৬ জুলাই) বারহাট্টা মধ্য বাজার এলাকা থেকে একটি শট পেন্ট পড়া অবস্থায় এই ব্যক্তিকে আটক করে সাধারণ মানুষ। পরে উৎসুক জনতা তাকে পিটুনি দিয়ে বারহাট্টা থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করলে তাকে নেত্রকোনায় প্রেরণ করে বারহাট্টা থানা পুলিশ।
আবু বক্করকে আটকের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে বারহাট্টা থানার ওসি কামরুল হাসান।
এরআগে এ ঘটনায় নাজমা আক্তার নামের একজনকে গত ১৩ জুলাই আটক করে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে। বাকী দুই জন আসামি পলাতক রয়েছে। পলাতক আসামিদের গ্রেফতার করতে না পারায় তাদের বাড়িঘর ভাঙচুর করেছে তৌহীদি জনতা। পলাতক আসামীরা হলো চন্দ্রপুর গ্রামের বেগমা আক্তার ও জয় কৃষ্ণ নগর গ্রামের হাবিবুর রহমান।
জানা যায়, গত ১২ জুলাই রাতে হাবিবুর রহমানের মাছের আড়ৎএ প্রধান আসামির কাছে বাজার মসজিদ থেকে একটি কোরআন শরিফ নিয়ে দিলে এই কোরআনের উপর পা রাখে ও নানা ভাবে অবমাননা করে। এরপর এ ঘটনাটি দ্রুত এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে সবাই এই আবু বক্কর নামে পাগলকে খুঁজতে থাকে। গত ১৩ জুলাই চন্দ্রপুর বাজারে তৌহীদি জনতা বিক্ষোভ মিছিল করে। সন্ধ্যায় জীবনপুর গ্রামের মাওলানা তরিকুল বাদী হয়ে তিনজনকে আসামি করে বারহাট্টা থানায় একটি মামলা করে। ওই দিন রাতেই নাজমা আক্তার নামে এক আসামিকে গ্রেফতার করে জেল হাজতে পাঠায় পুলিম। বাকীরা পলাতক থাকলেও এই পাগল বারহাট্টা বাজারেই ঘুরাঘুরি করছিলো।
তবে পুলিশ দাবী করছে এই ব্যক্তি পাগল না। সে তার নাম ঠিকানা বলতে পারে। পুলিশ এও বলেছে পাগলকে জিজ্ঞেস করার পর পাগল জানিয়েছে ঘটনার পর স্থানীয় কয়েকজন তাকে পাগলের ভান করতে বলেছিল।
গতকাল (বুধবার) দুই পলাতক আসামীকে গ্রেফতার করতে না পারায় তৌহীদি জনতার ব্যনারে চন্দ্রপুর বাজারে একটি বিক্ষোভ মিছিল হয়। মিছিলের একপর্যায়ে তারা হাবিবুর, নাজমা ও বেগমের বাড়ি ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। এসময় হাবিবুরের মাছের আড়ৎএর ঘরটিও ভেঙে ফেলে।
সিংধা ইউনিয়ন হেফাজতে ইসলামের সভাপতি মাওলানা আরমান বাক্কি বলেন, মিছিলের পর তাদের বাড়িতে হামলা করা হয়েছে। তবে তারা সবাই সাধারণ মুসুল্লি। তাদেরকে আমি চিনিনা। আর এই বিক্ষোভ মিছিলের সভাপতি ছিলেন মাওলানা তরিকুল।
ভাংচুরের ঘটনায় ১৭ জুলাই হাবিবুর রহমানের ছোট ভাই শফিকুল নেত্রকোনা আদালতে একটি মামলা দায়ের করেছে বলে জানা গেছে এবং নাজমা আক্তারের বাড়ি ভাংচুরের ঘটনায়ও নেত্রকোনা আদালতে মামলা করতে গিয়েছে বলে জানা গেছে।
বারহাট্টা থানার অফিসার ইনচার্জ কামরুল হাসান বলেন, আমরা প্রধান আসামীকে গ্রেফতার করে আদালতে প্রেরণ করেছি। আসামীদের বাড়িতে ভাংচুরের ঘটনাটি ন্যাক্কারজনক। তাদেরকে পুলিশ বাঁধা দেয়ায় পুলিশের উপর হামলা করতে চেয়েছিলো। ঘটনাস্থল তাৎক্ষণিক সেনাবাহিনী পরিদর্শন করেছে। ভুক্তভোগী দুই পরিবার এখনও থানায় কোন লিখিত অভিযোগ দায়ের করেনি। অভিযোগ করলে আমরা আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
তিনি আরও বলেন, আবু বক্কর পাগল নয়। তিনি ভিক্ষা করে জীবিকা চালাতেন। ঘটনার পর দায় এড়াতে কারো প্ররোচনায় পাগলের অভিনয় করছিলেন বলে জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছেন।