গোলাপ খন্দকার সাপাহার (নওগাঁ) প্রতিনিধি:
নওগাঁর সাপাহার—বাংলাদেশের অন্যতম বিখ্যাত আম উৎপাদন অঞ্চল। এ অঞ্চলের আম মানে শুধু রসাল স্বাদ নয়, এক টুকরো গর্বের গল্পও। আর সেই গল্পকে ঘরে ঘরে পৌঁছে দেওয়ার নিরব কিন্তু দুর্বার এক যোদ্ধার নাম—‘সাপাহার আমের হাট’। ফেসবুক ভিত্তিক এই অনলাইন ব্যবসা আজ শুধু একটি পেজ নয়, হয়ে উঠেছে ভোক্তার আস্থার প্রতীক এবং কৃষকের মুখে হাসি ফোটানোর মাধ্যম। ২০২০ সালের ১০ জুন একক উদ্যোক্তা হিসেবে সোহেল চৌধুরী রানা এই উদ্যোগের সূচনা করেন। প্রথম মৌসুমে হাতে গোনা কিছু অর্ডার পেলেও, সততা ও সুনামের সাথে প্রতিটি অর্ডার পৌঁছে দেন গ্রাহকের ঠিকানায়।
পরবর্তী মৌসুমে তিনি গঠন করেন একটি কার্যকর টিম, যেখানে ৫ থেকে ১০ জন পর্যন্ত সদস্য যুক্ত হন। তারা অর্ডার নেওয়া, বাগান থেকে আম সংগ্রহ, স্মার্ট প্যাকেজিং এবং নির্ভরযোগ্য কুরিয়ারে বুকিংসহ প্রতিটি ধাপে পেশাদারিত্বের ছাপ রাখেন। ‘সাপাহার আমের হাট’ থেকে সাপাহারে উৎপাদিত প্রায় সব জাতের আম অর্ডার করা যায়। উল্লেখযোগ্য জাতগুলোর মধ্যে রয়েছে—আম্রপালি বা রুপালি (সবচেয়ে জনপ্রিয়), হিমসাগর, ল্যাংড়া, গোপালভোগ, নাক ফজলি (জিআই স্বীকৃত), ব্যানানা ম্যাংগো, বারী-৪, গৌড়মতি, কাঁচামিঠা, সুরমা ফজলি, ফজলি এবং আশ্বিনা।
প্রশাসন ও কৃষি দপ্তরের নির্ধারিত তারিখ অনুযায়ী সম্পূর্ণ পরিপক্ব আম সংগ্রহ করাই এই উদ্যোগের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। ঢাকা, সিলেট, চট্টগ্রাম, মাদারীপুর, পাবনা থেকে শুরু করে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোতে পৌঁছে গেছে সাপাহারের বিশুদ্ধ আম। সিলেটের এক প্রবীণ গ্রাহক ৬০ কেজি আম্রপালি অর্ডার করে তা থেকে ১৫–২০ কেজি আম লন্ডনে তার নাতির জন্য নিয়ে যান। লন্ডন ফেরত হয়ে তিনি আবারও ফোন করে জানালেন তার সন্তুষ্টির কথা। মাদারীপুরের একজন নারী গ্রাহক প্রতিবছরই বিভিন্ন জাতের আম অর্ডার দিয়ে থাকেন। এবছর আম মৌসুম শুরুর আগেই তিনি খোঁজ নিয়েছেন কোন জাতের আম কবে পাওয়া যাবে। এমন গ্রাহকেরা শুধু ক্রেতা নন, ‘সাপাহার আমের হাট’-এর ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর হয়ে উঠেছেন আপন মনে। প্রতিটি অর্ডারে প্রতিশ্রুত সাইজ ও কোয়ালিটির আম ডেলিভারি নিশ্চিত করা হয়।
কাঁচামাল সরবরাহের এই জগতে যেখানে প্রতারণার গল্প অহরহ, সেখানে “আস্থা” এবং “বিশ্বাস” দিয়েই নিজেদের অবস্থান গড়ে তুলেছে ‘সাপাহার আমের হাট’। স্মার্ট ও মজবুত প্যাকেজিংয়ের পাশাপাশি দ্রুত ডেলিভারি এবং গ্রাহক সেবায় আন্তরিকতা তাদের আলাদা করেছে। সাপাহার আমের হাট এর উদ্যোক্তা সোহেল চৌধুরী রানা তাঁর ‘সাপাহার আমের হাট’ নিয়ে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা এ প্রতিবেদককে জানান, এই উদ্যোগের স্বপ্ন সীমিত নয়।
ভবিষ্যতে আরও উন্নত প্রযুক্তি ও প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে ‘সাপাহারের আম’কে একটি জাতীয় ব্র্যান্ড হিসেবে গড়ে তুলতে চায় ‘সাপাহার আমের হাট’। লক্ষ্য একটাই—দেশের বাইরেও যেন ‘সাপাহার আমের হাট’ হয়ে ওঠে বাংলাদেশের আমের গর্বিত প্রতিনিধি। তবে এই পথে আরও এগিয়ে যেতে উদ্যোক্তা সরকারি সহায়তা ও প্রযুক্তিগত সহযোগিতার প্রত্যাশা করছেন তিনি। তিনি আরও জানান, ‘সাপাহার আমের হাট’ শুধু একটি ফেসবুক পেজ নয়, এটি একটি কৃষি বিপ্লবের নাম, যেখানে প্রযুক্তি, আস্থা ও মানুষের ভালোবাসা মিলেছে এক বিন্দুতে। যেখানে বিশ্বাস আছে, সেখানেই সাফল্য। আর সাফল্যের গল্পের নাম—সাপাহার আমের হাট।