নিজস্ব প্রতিবেদক: নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার নওপাড়া ইউনিয়নের দনাচাপুর গ্রামে অবস্থিত একটি ঐতিহাসিক স্থান ধ্বংসপ্রাপ্ত পঞ্চরত্ন মন্দির, কালিমন্দির ও একটি বিশাল আয়তনের দিঘি। এটি প্রাচীন গান্ধার শিল্পধারার অনন্য নিদর্শন। প্রায় ২০০ বছর আগের এই স্থাপনাগুলো ইতিহাস, ঐতিহ্য ও শিল্পকর্মের নিঃশব্দ সাক্ষী হিসেবে টিকে রয়েছে। বর্তমানে অযত্ন-অবহেলায় পড়ে থাকা এই সম্পদগুলো যথাযথভাবে সংরক্ষণ করা একান্ত প্রয়োজন।
দনাচাপুর গ্রামের প্রাচীন পঞ্চরত্ন মন্দিরটি এক সময় তিনতলা বিশিষ্ট ছিল। সময়ের বিবর্তনে এবং নানা প্রাকৃতিক কারণে মন্দিরটির দুটি তলা মাটির নিচে চাপা পড়ে গেছে। বর্তমানে কেবল এক তলা দৃশ্যমান। মন্দিরটির দেয়ালজুড়ে রয়েছে টেরাকোটা ও মাটির তৈরি নানা নকশা। যা তৎকালীন সময়ের শিল্প ও স্থাপত্যকলার পরিচয় বহন করে। এই মন্দিরটি গান্ধার শিল্পধারার একটি দুর্লভ নিদর্শন বলে প্রতীয়মান হয়।
পঞ্চরত্ন মন্দিরের পাশেই অবস্থিত একটি প্রাচীন কালিমন্দির ও বিশাল দিঘি। দিঘিটি স্থানীয়ভাবে নওপাড়া জমিদার বাড়ির পুকুর নামে পরিচিত। প্রায় ২০০ কাঠা জমিতে বিস্তৃত এই পুকুরটি নেত্রকোনা জেলার অন্যতম বৃহত্তম পুকুর হিসেবে পরিচিত। এটি এলাকার মানুষের কাছে শুধু একটি জলাধার নয়। বরং একটি ঐতিহ্যবাহী ইতিহাসের অংশ।
এতিহাসিক এই স্থানটি কেন্দুয়া উপজেলা সদর থেকে প্রায় সাত কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। নেত্রকোনা-কেন্দুয়া প্রধান সড়ক ধরে দুর্গাপুর মোড় থেকে ডানদিকে মোড় নিয়ে সোজা নওপাড়া ইউনিয়ন পরিষদ কমপ্লেক্সের প্রায় পাঁচশো গজ পেছনে এ নিদর্শনগুলো দেখা যায়।
এত সব মূল্যবান নিদর্শন বর্তমানে সংরক্ষণের অভাবে বিলুপ্তির পথে। মন্দিরগুলোর স্থাপত্যশৈলী, শিল্পকর্ম এবং ঐতিহাসিক গুরুত্ব নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে হলে জরুরি ভিত্তিতে এগুলোর সংস্কার ও সংরক্ষণের উদ্যোগ নিতে হবে। স্থানীয় জনগণ, গবেষক এবং পর্যটকদের কাছে এই স্থানগুলো আকর্ষণীয় করে তুলতে সরকার এবং প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের হস্তক্ষেপ একান্ত কাম্য।
প্রাচীন পঞ্চরত্ন মন্দির, কালিমন্দির ও ঐতিহ্যবাহী দিঘি শুধু দনাচাপুর বা কেন্দুয়ার নয়, বরং এটি বাংলাদেশের একটি মূল্যবান ঐতিহ্য। এসব নিদর্শন শুধু ইতিহাসের সাক্ষী নয়, বরং আমাদের সংস্কৃতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। যথাযথ সংরক্ষণ ও উন্নয়নের মাধ্যমে এগুলোকে পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব এবং তাতে স্থানীয় অর্থনীতিও উপকৃত হবে। এখনই সময় ঐতিহ্য রক্ষায় কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের।