নিজস্ব প্রতিবেদক: চাঁদা না পেয়ে নেত্রকোনার সদর উপজেলায় মাদরাসা সুপারকে মারধর ও লাঞ্চিতের ঘটনার প্রতিবাদে মিছিলে অংশগ্রহণ ও মিডিয়ায় বক্তব্য প্রদানের জেরে বাংলাদেশ হেফাজত ইসলামীর এক নেতাকে মারধর ও তার বাড়ী-ঘর ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। বর্তমানে আহত হেফাজত নেতা নেত্রকোনা সদর হাসপাতাল চিকিৎসাধীন।
ভুক্তভোগী হেফাজত নেতা হাফেজ কারী মো. আনিছুর রহমান সদর উপজেলার মৌগাতি ইউনিয়নে ছোট গরদী গ্রামের মৃত গোলপ খানের ছেলে এবং তিনি মৌগাতি ইউনিয়ন হেফাজত ইসলামের যুগ্ম সম্পাদক। ২০১৩ সালে ঢাকার মতিঝিলে হেফাজত ইসলামীর প্রোগ্রামে গুলিবিদ্ধ কর্মী।
বৃহস্পতিবার সরেজমিনে ভুক্তভোগীর বাড়িতে গেলে হেফাজত নেতার বাড়িঘর ভাঙচুরে দৃশ্য দেখা যায় এবং হাটখলা বাজারে হেফাজত ইসলামের জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের নেতাকর্মীরা হাটখলা বাজারে একত্রিত হন এবং পরে বিক্ষোভ মিছিল সহকারে ভুক্তভোগীর ভাঙচুরকৃত বাড়ি-ঘর পরিদর্শন করেন।
অভিযুক্ত আবুল কালাম আজাদ ওরফে রেনু মিয়া ভুক্তভোগীর একই গ্রামের প্রতিবেশি। তিনি মৌগাতি ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি এবং পার্শ্ববর্তী রৌহা ইউনিয়নে আমলী মধুপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের অফিস সহকারি (কেরানী)।
এরআগে মিছিলে অংশগ্রহণ ও মিডিয়ায় বক্তব্য প্রদানের জেরে গত বুধবার সন্ধ্যায় ক্ষিপ্ত হয়ে ইউপি বিএনপি’র সভাপতি রেনু মিয়ার নেতৃত্বে তার ছেলেরাসহ অনুগত অনেক সহযোগী বেআইনি জনতাবদ্ধে দেশী অস্ত্র নিয়ে অনধিক প্রবেশ করেন। পরে হেফাজত নেতার বাড়ী-ঘরে হামলা করে ভাঙচুর ও ক্ষতি সাধন এবং অর্থ লুট করে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ উঠে বিএনপি’র ওই নেতার ওপর।
জানা যায়, গত ৮ এপ্রিল (মঙ্গলবার) বেলা ১১টার দিকে মৌগাতি ইউনিয়ন বিএনপি’র সভাপতি রেনু মিয়ার নেতৃত্বে ছয়টি মোটরসাইকেল যোগে মাদরাসায় আসেন সাত থেকে আটজন সন্ত্রাসী। পরে তারা মাদারাসার অফিসে অনধিকার প্রবেশ করে চাঁদা দাবী করে সন্ত্রাসী কায়দায় বেদড়ক মারধর করে সুপারকে টেনে হিছরে বের করে দেন এবং অফিস কক্ষ তালাবদ্ধ করে দেওয়ার ঘটনা ঘটে।
এ ঘটনার পর নেত্রকোনার সদর উপজেলায় গরদী ইসলামীয়া দাখিল মাদরাসার সুপার মো. আব্দুল খালেক খান মঙ্গলবার থানায়, উপজেলা নিবাহী কর্মকর্তা ও সেনা ক্যাম্পে লিখিত অভিযোগ দাখিল করেন। এ ঘটনার পরেরদিন বুধবার গরদী দাখিল মাদরাসা প্রাঙ্গনে শিক্ষার্থীরা মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করে। এতে হেফাজত নেতা আনিছুর রহমান বিক্ষোভ মিছিলে অংশ নেন এবং তার শিক্ষককে মারধর ও লাঞ্চিত করার ঘটনা প্রতিবাদ জানিয়ে উপস্থিত মিডিয়া কর্মীদের বক্তব্য প্রদান করেন।
এ বিষয়ে ভুক্তভোগী স্ত্রী ঘটনার বর্ণনা দিয়ে বলেন, আসরের নামাজের পরে রেনু মিয়া তার ছেলেরাসহ দলবল নিয়ে ঘরের চতুরদিকে কোপাকুপি শুরু করে। ঘরের বাহিরে চেয়ে দিখি রেনু মিয়া ও তার দুই ছেলে আশিক ও অনিক, কাঞ্চন ও তার ছেলে সিফাত, রতন, রুয়েল, শামীম, ফরহাদ অনেক মানুষ। লোকের কোন কুল কিনারা নাই। ডর-ভয় দেখিয়ে বলতে থাকে আমার স্বামী কোথায়। স্বামীকে খবর দিতাম বাড়িতে আসার জন্য। পাশের এলাকার অটোরিকশা চালক এদিকে দিয়ে যাওয়ার সময় আমার স্বামীকে ফোন দেয় এবং সাথে সাথে বাড়ি আসেন তিনি। বাড়িতে আসার সাথে আমার স্বামীকে দৌঁড়াইয়া ঘরে ঢুকাইছে। কোমর ও পিঠে পাঁচ থেকে ছয়টা বাড়ি মারছে একপর্যায়ে খাটের নিচে আশ্রয় নিয়েছে। ড্রেসিং টেবিলের ড্রয়ারে টাকা ছিল। ড্রেসিং টেবিল ইট দিয়ে ভেঙে যা টাকা ছিল সব নিয়ে গেছে।
হাসপাতাল বেডে শয্যাশায়ী ভুক্তভোগী আনিছুর রহমান বলেন, আমার শিক্ষাগুরু মাদরাসা সুপারকে মেরেছে ও লাঞ্চিত করেছে। এর প্রতিবাদে বুধবার বিক্ষোভ মিছিলে অংশ নেই এবং স্কুল মাঠে শিক্ষার্থীদের মানববন্ধনে উপস্থিত মিডিয়ায় বক্তব্য দেওয়ার কারণে ইউপি বিএনপি’র সভাপতি রেনু মিয়া ও তার ছেলেরা এবং সহযোগীরা আমার বাড়িতে হামলা করে ভাঙচুর করেছে। আমাকে কোমর ও পিঠে লাঠি দিয়ে মেরেছে এবং মাথায় আঘাত করেছে। শ্বশুরবাড়ি থেকে দেওয়া টাকা ঘরে ছিল। সেই টাকা তারা দিয়ে গেছে।
২০১৩ হেফাজত ইসলামী মতিঝিল গ্রোগ্রামে অংশ নিয়ে পায়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হওয়া কথা জানিয়ে তিনি আরও বলেন, ফ্যাসিস্ট আওয়ামীলীগের সময় মার খেয়েছি। অন্যায়ের প্রতিবাদ করায় এখন বিএনপির লোকজনের হাতে মার খেয়েছি। ঘর-বাড়ি ভাঙচুর করে ক্ষতি সাধন করেছে।
এসময় উপস্থিত নেত্রকোনা মডেল থানার ওসিকে কান্না জড়িত কন্ঠে অপরাধীর দ্রুত গ্রেফতার ও শাস্তি দাবি জানান এই হেফাজত নেতা।
হেফাজতে ইসলাম নেত্রকোনা সদরের যুগ্ম-আহবায়ক মাওলানা আসাদুর রহমান আকন্দ ভুক্তভোগী বাড়ি পরিদর্শনের সময় বলেন, মাদরাসার কমিটিকে কেন্দ্র করে ইউনিয়নের কিছু লোকজন অর্থ নিতে চেয়েছিল। চাঁদার বিষয়টি মূখ্য বিষয়। চাঁদার বিষয়টি সরাসরি বলতে না পারায় কমিটির দোহাই দিচ্ছে। আমরা যতটুকু জানি কমিটি সরকারি নিয়মের মধ্যে গঠিত হয়েছে। চাঁদার বিষয়টি বলতে না পেরে কমিটিকে কেন্দ্র মাদরাসা সুপারের উপর অতর্কিত হামলা করেছে। আমাদের জানা মতে মাদরাসা সুপার দীর্ঘদিন প্রায় ৩৬ বছর যাবত তিনি সুপারের দায়িত্ব পালন করছেন। বিএনপি দলীয়ভাবে রেনু মিয়াসহ জড়িতদের বিরুদ্ধে দলীয়ভাবে সিদ্ধান্ত নিবেন এবং জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে এলাকায় গণআন্দোলন গড়ে তুলবে এই আশবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
বাংলাদেশ হেফাজতে ইসলাম নেত্রকোনা সদরের সদস্য সচিব মাওলানা মাজহারুল ইসলাম বলেন, হাফেজ আনিছুর রহমান হেফাজত ইসলামের মৌগাতির এলাকার নেতা। তার বাড়িতে হামলা করে ভাঙচুর করা হয়েছে। পাশাপাশি গরদী মাদরাসার সুপার সাহেবকে আক্রমণ, তাকে অপমানিত ও লাঞ্চিত করা হয়েছে। এরই প্রেক্ষিতে ইতোমধ্যে আমরা বিক্ষোভ করেছি। হেফাজত ইসলামির একজন নেতা-কর্মীর উপর আঘাত করা মানে ভিমরুলের চাকে আঘাত করা। গোটা বাংলাদেশ ফুসে উঠবে ইনশাল্লাহ। অনতিবিলম্বের ইউপি বিএনপির সভাপতি রেনু মিয়াসহ জড়িত সকলের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন তিনি।
নেত্রকোনা মডেল থানার ওসি কাজী শাহনেওয়াজ বলেন, ভাঙচুরে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠিয়েছি। আজ (বৃহস্পতিবার) হাসপাতালে আহত হেফাজত নেতাকে দেখে এসেছি এবং কথা বলেছি। অভিযোগের ভিত্তিতে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের কথা জানান তিনি।