জবি প্রতিনিধি
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে (জবি) গ্লোবাল সাউথ স্টাডিজ এন্ড রিসার্চ সেন্টার (জিএসএসআরসি) এর উদ্যোগে ‘বাংলাদেশের খাদ্য নিরাপত্তা ও টেকসই উন্নয়ন’ বিষয়ক একাডেমিক আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে প্রখ্যাত জিন বিজ্ঞানী ড. আবেদ চৌধুরী তাঁর উদ্ভাবিত ‘পঞ্চব্রীহি’ ধানের বৈশিষ্ট্য ও সম্ভাবনা নিয়ে বিশদ আলোচনা করেন।
মঙ্গলবার (৪ জানুয়ারি) দুপুর ২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ভার্সুয়াল ক্লাসরুমে সেমিনারটি অনুষ্ঠিত হয়েছে। অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন গ্লোবাল সাউথ স্টাডিজ এন্ড রিসার্চ সেন্টার (জিএসএসআরসি) এর পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. রইছ উদ্দীন।
আলোচনায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. রেজাউল করিম, বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ট্রেজারার অধ্যাপক ড. সাবিনা শরমীন। স্বাগত বক্তব্য দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রিসার্চ সেলের পরিচালক অধ্যাপক ড. ইমরানুল হক। ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আনিসুর রহমান অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন।
বিজ্ঞানী ড. আবেদ চৌধুরী বলেন, আপনারা দেখে থাকবেন আমার পেটেন্ট গুলো দেশের বাহিরে থেকে নিবদ্ধকৃত, কিন্ত বাংলাদেশের সরকার আমাদের কোন সাহায্য করেনি অথচ এই গবেষণাটি করার জন্য আমার দেশের গ্রামের এলাকা বেছে নিয়েছি, যাতে আমার দেশ উপকৃত হয়। আমাদের দেশে কেউ ভালো কিছু করলে কেউ মূল্যায়ন করে না, কিন্তু আমাইটির পন্ডিতেরা বললে খুব মূল্যায়ন করে। কবিতা যেমন শুধু বাংলা বিভাগে যারা পড়ে তাদের জন্য নির্দিষ্ট না। সবাই লিখতে পারে। তেমনি বিজ্ঞানকেও জন সাধারনের হাতে তুলছ দিতে চাই।
আমরা ডেমোক্রেটাইজেশন অব ইনোভেশনে পঞ্চব্রীহি ধান উদ্ভাবন করেছি, এখন অন্যান্য ফসল যেমন জোয়ান, তিসি, বেগুন, ঢেড়স ইত্যাদি উদ্ভাবন করার চেষ্টা করছি, গবেষণা অব্যাহত রয়েছে। গত বছর পিতৃহীন বীজ উদ্ভাবন করেছি। আমাদের এই উদ্ভাবন কার্বন ও মিথেন মিটিগেশনে অত্যান্ত সহায়ক। তিনি দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, বাংলাদেশের সচিবালয়ে আমি অনেকবার গিয়েছি ও পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানের সাথে কথা বলার চেষ্টা করেছি কিন্তু আমার এক্সপেরিমেন্টাল ডকুমেন্ট মূল্যায়ন করার সুযোগ হয়নি।
তাই ইউরোপের দেশে শেয়ার করতে হয়েছে। তবে এখন যেহেতু সুযোগ আছে বাংলাদেশ সরকারের উপদেষ্টার নিকট এটা তুলে ধরা খুবই জরুরী। কিন্তু উপদেষ্টার কাছে পনেরো মিনিট সময় চেয়েও এখনো আমার এক্সপেরিমেন্ট তুলে ধরার সুযোগ পাইনি । বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বলেন, যেখানে এক বছরে দুইবার ফসল হয় সেখানে পাঁচবার ফসল হবে এটা ভাবতেই ভালো লাগে। এরকম আন্তর্জাতিক মানের আবিষ্কারকে সর্বোচ্চ মূল্যায়ন এবং যথাযথ কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণে সংবাদকর্মীদের উদ্যোগ গ্রহণেও তিনি আহ্বান জানান।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার বলেন, পঞ্চব্রীহির এই আবিষ্কার অর্থাৎ একবার চারা রোপন করলে তা থেকে পাঁচবার উৎপাদনশীল ধানের এই আবিষ্কার বাঙ্গালীদের জন্য অভাবনীয় এবং খুবই গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ভবিষ্যতে বিজ্ঞানের এইসব শাখায় কাজ করবেন বলে তিনি আশাবাদী। উল্লেখ্য, অনুষ্ঠানে বক্তারা একমত প্রকাশ করেন যে, পঞ্চব্রীহি ধানের মতো উদ্ভাবনী প্রযুক্তি সরকারি ও বেসরকারি সহযোগিতায় ব্যাপকভাবে সম্প্রসারিত হলে বাংলাদেশ খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করতে সক্ষম হবে। এছাড়া, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনেও এই ধান গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে বলে তারা উল্লেখ করেন।