কে. এম. সাখাওয়াত হোসেন: “বৈচিত্র্যই শক্তি। বাংলাদেশের জন্য এটা আশীর্বাদ যে এখানে বহু ধর্মের লোক বাস করে। আমাদের বৈচিত্র্যের পক্ষে থাকতে হবে এবং বৈষম্যের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে হবে।”
বৃহস্পতিবার (২৮ নভেম্বর) দুপুরের দিকে নেত্রকোনা শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয়ে (শেহাবি) রজনীগন্ধার স্নিগ্ধতায় বরণ করে নেওয়া হয় নবীন শিক্ষার্থীদের ‘প্রবেশিকা-২০২৪’ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় প্রতিথযশা অর্থনীতিবিদ ও বিশিষ্ট সমাজ বিশ্লেষক অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ একথা বলেছেন।
অনুষ্ঠানের প্রথমে আমন্ত্রিত অতিথি, অনুষ্ঠানের সভাপতি, আহবায়ক, স্বাগত বক্তা এবং বিভাগীয় চেয়ারম্যানগণের আসন গ্রহণ ও উত্তরীয় পরিধানের মধ্যে দিয়ে আরম্ভ হয় ‘প্রবেশিকা অনুষ্ঠান-২০২৪’এর আনুষ্ঠানিকতা।
রজনীগন্ধার স্নিগ্ধতায় বরণ করে নেওয়া হয় নবীন শিক্ষার্থীদের। জাতীয় সংগীত পরিবেশন করেন শিক্ষার্থীরা। পাঠ করা হয় ধর্মগ্রন্থ। নীরবতা পালন করা হয়’২৪ এর জুলাই-আগস্টে শহীদ সকলের আত্মার শান্তি প্রার্থনা করা হয়।
শেহাবির উপচার্য অধ্যাপক ড. খন্দকার মোহাম্মদ আশরাফুল মুনিমের সভাপতিত্বে ‘প্রবেশিকা অনুষ্ঠান-২০২৪’ অনুষ্ঠানের স্বাগত বক্তব্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ড. মোহাম্মদ হারুন-অর-রশিদ বলেন, “আজকের দিন স্মরণীয় একটা দিন। নবীন শিক্ষার্থীদের জন্য তো স্মরণীয় বটেই আমাদের জন্যও স্মরণীয়। নতুন বাংলাদেশের স্পিরিট তোমরা। তোমাদের ধারণ করতে হবে এই বাংলাদেশেরস্বা ধীনতাকে। পাঁচশত একরেরে এই বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস তোমাদের পদচারণায় মুখোরিত হবে।”
এতে নবাগত শিক্ষার্থীদের মধ্যে সিএসই বিভাগের মাহিন খান জীবন ও অর্থনীতি বিভাগের ঈশিতা ভৌমিক এবং শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকে সিএসই বিভাগের ৩য় বর্ষের শিক্ষার্থী মো.রাজীব মিয়া বক্তব্য রাখেন।
এছাড়াও সিএসই বিভাগের চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল সিয়াম বলেন, “পরিবর্তনই জীবনের নিয়ম। ঠিক এই নিয়মে প্রতি পাঁচ বছর পরপর পরিবর্তন হচ্ছে তথ্য প্রযুক্তিতে। ক্যারিয়ার উন্নয়নে যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে সিএসই বিভাগের শিক্ষার্থীদের।”
অর্থনীতি বিভাগের চেয়ারম্যান শোভন রায় বলেন, “আমরা এমন একটা উপমহাদেশে বাস করি যেখানে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে পৃথিবীর প্রথম বিশ্ববিদ্যালয়। যার নাম নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়। জিরো আবিষ্কার হয় আমাদের এই উপমহাদেশে। জ্ঞানকে মানব সভ্যতার উন্নয়নে ব্যবহার করতে হবে। জ্ঞানের সাথে মন্যুষত্বের উত্তরণের সম্পর্ক রয়েছে।”
ইংরেজি বিভাগের চেয়ারম্যান হাফসা আক্তার বলেন, “প্রত্যেকটা মানুষ স্বতন্ত্র ভাবেই সম্ভাবনা ময়। আমাদের অনুষঙ্গ নিয়ে হাজার অভিযোগ। কিন্তু তোমাদের দেখলে সব কিছু ভুলে যাই। ইংরেজি এখন একটা টেকনোলজি। তাই সকল বিভাগের শিক্ষার্থীদের ইংরেজি রপ্ত করতে হবে। আমি চাই আমার শিক্ষার্থীরা যেন কোথাও পিছিয়ে না যায়।”
বাংলা বিভাগের চেয়ারম্যান মো. আঙ্গুর হোসেন বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয় বুদ্ধি ভিত্তিক জ্ঞান চর্চার জায়গা। বাংলা বিভাগ মনের খোরাক জোগায়। যেখানে সমস্ত বঙ্গীয় সংস্কৃতি জানা যায়। সামাজিক নিরাপত্তা, অর্থনৈতিক নিরাপত্তা এবং ব্যক্তিত্ব বোধ গড়ে তুলতে সহায়ক হিসেবে কাজ করে আমাদের শিক্ষা।”
এ অনুষ্ঠানের আহবায়ক ও শেহাবি’র ট্রেজারার অধ্যাপক ড. আনিছা পারভীন বলেন, “আমরা আছি শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীদের নির্বিঘ্নে কাজ করার সহযোগিতা করবার জন্য। বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থীরা কখনো বেকার থাকে না। বিসিএস, কলেজ, প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় সবখানে চাকরির সুযোগ আছে। এমন কি ব্যাংকেও চাকরির সুযোগ রয়েছে। আমরা চাই এই ধরনের কিছু উদ্যোগ গ্রহণ করতে- যেখানে কিছু কোর্স থাকবে যেটা শিক্ষার্থী চাইলেই করতে পারবেন। সকল ন্যায্য সুবিধা দেওয়া হবে শিক্ষার্থীদের।”
বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক নুরুল হক বলেন, “পৃথিবীতে কোনো কিছু ফ্রিতে পাওয়া যায় না। মেডিটেশন এবং ইয়োগা করে মনকে শান্তির জায়গায় নিয়ে যেতে হবে। আমরা এখন ভুলে গেছি ‘আরলি টু বেড এন্ড আরলি টু রাইজ’। নিজেকে হেলদি করতে হবে।”
বিশিষ্ট পরিবেশ বিজ্ঞানী ও জলবায়ু বিশেষজ্ঞ ড. আহসান উদ্দিন আহমেদ বলেন, “জ্ঞানের দুয়ারে স্বাগত নয় জ্ঞান অর্জনের ফলে যে জীবন বোধ তৈরি হয় সেই দুয়ারে স্বাগত জানাই তোমাদের। শিখতে শিখতে চলতে থাকা, চলতে চলতে শিখতে থাকা। সব শিখা পরীক্ষায় আসে না। কিন্তু জীবনের অনেক ক্ষেত্রে খুব কাজে আসে। বিশ্বজনীন নাগরিক হিসেবে কর্তব্য পালনের জন্য তৈরি থাকতে হবে আমাদের। পরমত সহিষ্ণুতা, বন্ধুত্ব এবং দেশ প্রেমের শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে। সংকীর্ণতার উর্ধ্বে উঠতে হবে।”
এ অনুষ্ঠানের সভাপতি শেহাবি’র উপাচার্য ড. খন্দকার মোহাম্মদ আশরাফুল মুনিম নবীন শিক্ষার্থীদের স্বাগত জানান এবং সকল বৈষম্যের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান। তিনি বলেন, “কোন প্রকার বৈষম্য থাকবে না এই বাংলাদেশে।”
আলোচনা অনুষ্ঠান ও মধ্যাহ্ণ ভোজের শেষে শিক্ষার্থীদের আয়োজন ও অংশগ্রহণে পরিবেশিত হয় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।