তানভীর আহমেদ:: সুনামগঞ্জ::
২০১৭ সালের প্রলয়ংকরী আগাম বন্যায় সুনামগঞ্জের বোরো ধানের সম্পূর্ণ ফলন নষ্ট হওয়ার পর সংশোধন হয় ‘কাজের বিনিময়ে টাকা (কাবিটা) নীতিমালা’। সংশোধিত নীতিমালায় বাঁধের কাজ শুরু ও শেষের সময় বেঁধে দেওয়া হলেও বিলম্ব হচ্ছে প্রতি বছরই। আর বিলম্বের অজুহাত হিসেবে থাকে হাওরের পানি ধীরে নামার বিষয়টি। এবছরও তার ব্যতিক্রম হয়নি। নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে বাঁধের জরিপের কাজ শুরু হওয়ার কথা থাকলেও জেলার বেশিরভাগ উপজেলায় এখনও শুরু হয়নি বাঁধের জরিপের কাজ। এমনকি উপজেলা পর্যায়ে এখনও নিয়োগ দেওয়া হয়নি ট্যাগ অফিসার, ট্যাগ সার্ভেয়ার ও ট্যাগ ওয়ার্ক এসিস্ট্যান্ট। এ-সব পদে নিয়োগ না দেওয়ায় বাঁধের জরিপের কাজ শুরু হতে বিলম্ব হচ্ছে। তবে কবে নাগাদ নিয়োগ হবে তা স্পষ্ট জানা যায়নি। পাউবো থেকে জানানো হয়েছে নিয়োগ প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।
এদিকে বাঁধের জরিপের কাজ যথাসময়ে পুরোদমে শুরু না হওয়ায় বাঁধের স্কিম প্রনয়ণ ও পিআইসি গঠনেও বিলম্ব হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। যদিও গতবছর এমন সময় ট্যাগ অফিসার নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল, তবে তারা বাঁধের জরিপের কাজ শুরু করেন ১৯ নভেম্বর। জেলার ১২টি উপজেলার মধ্যে ধর্মপাশা উপজেলায় বাঁধের জরিপের কাজ শুরু হয়েছে বলে জানা গেছে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ধর্মপাশা উপজেলার উপ-সহকারী প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আলম। অন্যদিকে তাহিরপুর উপজেলায় সার্ভেয়ার না থাকায় বাঁধের জরিপ কাজ শুরু হয় নি বলে জানা যায়। তাহিরপুর উপজেলায় রয়েছে বৃহত্তর শনি, মাটিয়ান, মহালিয়াসহ ছোট-বড় বেশ কয়েকটি হাওর। এই উপজেলাটিতে যথাসময়ে বাঁধের জরিপের কাজ শুরু করতে না পারায় যথাসময়ে জরিপ অনুযায়ী প্রকল্প গ্রহণ করা সম্ভব হবে না বলে আশঙ্কা রয়েছে।
সূত্র জানায়, হাওরের ক্ষতিগ্রস্ত ফসল রক্ষা বাঁধ মেরামতের লক্ষ্যে উপজেলা পর্যায়ে বাঁধের জরিপের জন্য পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় কর্তৃক নিয়োগ দেওয়া হয় ট্যাগ অফিসার, ট্যাগ সার্ভেয়ার ও ট্যাগ ওয়ার্ক এসিস্ট্যান্ট। নিয়োগের পর তারা হাওরের ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ মেরামতের লক্ষ্যে জরিপ করে থাকেন। পরে সেই জরিপ অনুযায়ী প্রকল্প গ্রহণ করা হয়।
কাবিটা নীতিমালা অনুযায়ী, ৩০ নভেম্বরের মধ্যে প্রি-ওয়ার্ক (সম্ভাব্যতা যাচাই) শেষ করে প্রকল্প গ্রহণ ও বাঁধের নিকটবর্তী জমির মালিক ও উপকার ভোগীদের সম্পৃক্ত করে পিআইসি অনুমোদন করে ১৫ ডিসেম্বর থেকে কাজ শুরু করে আবশ্যিক ভাবে ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে বাঁধের নির্মাণ কাজ সমাপ্ত করার কথা রয়েছে। যদিও প্রতিবারই এটি পালনে ব্যর্থ হয় জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড।
সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, এবছর জেলায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের অধীনে ১১শ কিলোমিটার হাওরের ফসলরক্ষা বাঁধ জরিপ করার লক্ষ নির্ধারণ করা হয়েছে। জেলার ১২টি উপজেলার মধ্যে ৪-৫ টি উপজেলায় জরিপের কাজ শুরু হয়েছে বলেও জানানো হয় পাউবোর পক্ষ থেকে।
বাঁধ জরিপের মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ চিহ্নিতকরণ, বাঁধের আকার আকৃতি ও উচ্চতা মাপা হয়ে থাকে। যার উপর ভিত্তি করে ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধে প্রকল্প প্রণয়ন করা হয়। বাঁধের সার্ভে কাজ বিলম্বে শুরু হওয়ায় প্রকল্প প্রণয়ন ও কাজ শুরু নিয়ে শঙ্কা তৈরি হবে বলে জানিয়েছেন হাওরের কৃষক ও সচেতন নাগরিকরা। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বাঁধের সার্ভে কাজ শেষ করে দ্রুত প্রকল্প প্রণয়ন করে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি (পিআইসি) গঠন এবং বাঁধের নির্মাণ কাজ শুরু করাতে সংশ্লিষ্ট পাউবোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তারা।
হাওর বাঁচাও আন্দোলন কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক বিজন সেন রায় বলেন, বাঁধের জরিপ থেকে শুরু করে প্রতিটি কাজেই সময়মতো শুরু করা না গেলে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বাঁধের নির্মাণ কাজ শেষ করা সম্ভব হবে না। আর সময়মত বাঁধের কাজ শুরু এবং শেষ করতে না পারলে ফসলের সুরক্ষা নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়। আমরা চাইবো এবছর অন্তত সময়মতো পিআইসি গঠন করে পাউবো যেন বাঁধের নির্মাণ কাজ শুরু করে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী এবং জেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন ও মনিটরিং কমিটির সদস্য সচিব মো. মামুন হাওলাদার বলেন, হাওর থেকে পানি দেরিতে নামায় সার্ভের কাজে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়েছে। তবে, ৪-৫ টি উপজেলায় জরিপের কাজ শুরু হয়েছে। ট্যাগ অফিসার, ট্যাগ সার্ভেয়ার ও ট্যাগ ওয়ার্ক এসিস্ট্যান্ট নিয়োগের বিষয়ে জানতে চাইলে এই কর্মকর্তা নিয়োগ প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে বলে জানিয়েছেন।
উল্লেখ্য, সুনামগঞ্জ জেলায় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে দুই লাখ ২৩ হাজার ৪শ ১০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।