আরিফুল ইসলাম রনক, নওগাঁ প্রতিনিধি :
নওগাঁয় বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে শিক্ষিকাকে ধর্ষণ ও গর্ভপাতসহ প্রায় ২৫ লক্ষাধিক টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে ইন্সট্রাক্টর জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে। তিনি বর্তমানে জয়পুরহাটের আক্কেলপুর উপজেলা রিসোর্স সেন্টারের কর্মরত আছেন।
ঘটনার পর ভুক্তভোগী আদালতে মামলা দায়ের করেছেন। নওগাঁ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২ এর আদালতের বিচারক মেহেদী হাসান তালুকদার মামলাটি আমলে নিয়ে ধামইরহাট থানায় এজাহার হিসাবে নথিভুক্ত করার আদেশ দেন।
ভুক্তভোগী জানান, মামলার পর অভিযুক্ত জাহাঙ্গীর শিক্ষিকাকে মামলা তুলে নেয়ার জন্য নানাভাবে ভয়ভীতি ও হুমকি দিচ্ছেন। এমতাবস্থায় তিনি অসহায়ভাবে জীবন যাপন করছেন।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, নওগাঁর ধামইরহাটের উত্তর চকযদু গ্রামের স্কুল শিক্ষিকা ফাতেমাতুজ জহুরা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন। আর আসামী পত্নীতলার ঘোষনগর গ্রামের মোহাম্মদ আলীর ছেলে জাহাঙ্গীর আলম সে সময় ধামইরহাট উপজেলা রিসোর্স সেন্টারে ইন্সট্রাক্টর পদে চাকুরী করতেন। সেই সুবাদে তাদের পরিচয় ঘটে।
এক পর্যায়ে তাকে বিয়ের প্রস্তাব দিলে তিনি তা প্রত্যাখান করলেও চরিত্রহীন প্রতারক জাহাঙ্গীর তাকে ফুসলাতে থাকে এবং বিয়ের প্রলোভন দেয়। জাহাঙ্গীর তাকে বিয়ে করার মিথ্যা আশ্বাস দিলে তিনি সৌদি প্রবাসী স্বামীকে গত ২০ মার্চ ২০২৩ তারিখে তালাক দেন। এমতাবস্থায় ২৮ ফেব্রুয়ারী ২০২৪ তারিখে ওই স্কুল শিক্ষিকার নিজ বাড়িতে জাহাঙ্গীর তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে বিয়ের প্রলোভনে জোরপূর্বক ধর্ষন করে এবং ধর্ষনের বিষয়ে চুপ থাকার জন্য হুমকি দেয়।
এভাবে দিনের পর দিন তাকে ধর্ষন করতে থাকে। ফলে শিক্ষিকা গর্ভবতী হলে ওই সুযোগে জাহাঙ্গীর তাদের সন্তানের সুখের জন্য রাজশাহীতে একটি ফ্ল্যাট দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে টাকা চায়। সেই সুবাদে শিক্ষিকার কাছ থেকে ১২ ভরি স্বর্ণালংকার বিক্রির প্রায় সাড়ে ১১ লাখ টাকা, ব্যাংকে ঋণ করে ৫ লাখ টাকা, চাকুরীর বেতন থেকে জমানো প্রায় ৯ লাখ টাকা। অর্থাৎ মোট প্রায় ২৫ লাখ টাকা আসামী জাহাঙ্গীর আত্নসাৎ করে।
এ সময় তাকে বিয়ের কথা বারবার বললেও তার কথায় কর্ণপাত না করে জোরপূর্বক ২৩মে ২০২৪ তারিখে নজিপুর হলি হসপিটালে ডিএনসির মাধ্যমে গর্ভপাত করায়। বিষয়টি মামলার আসামী জাহাঙ্গীর আলম ছাড়াও মামলার স্বাক্ষী ধামইরহাটের আমইতাড়া গ্রামের সাইদুর রহমানের ছেলে মোস্তাফিজুর রহমান, চকযদুর খিতিশ চন্দ্র দাসের ছেলে উত্তম কুমার দাস, উত্তর জাহানপুর গ্রামের জিল্লুর রহমানের ছেলে মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ, চকউমর গ্রামের সাদেক আলীর মেয়ে জুলেখা বেগম ও কাজীপুর গ্রামের হাবিবুর রহমানের মেয়ে জোসনা আক্তার অবগত রয়েছেন।
এরপর ৮ আগষ্ট ২০২৪ তারিখে ওই শিক্ষিকার নিজ বাড়িতে আসামী আবারো আসলে তাকে বিয়ের কথা বললে তা সরাসরি অস্বীকারের পাশাপাশি তার কাছ থেকে নেয়া প্রায় ২৫ লাখ টাকাও অস্বীকার করে বাড়ি থেকে চলে যান। তাই তিনি পরদিন ধামইরহাট থানায় মামলা করতে গেলে থানা মামলা নেয়নি। আর এ বিষয়ে স্থানীয়ভাবে আপোষ মিমাংসার চেষ্টা করে ব্যর্থ হওয়ায় তিনি নিরুপায় হয়ে ৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ তারিখে নওগাঁ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২ এ মামলা দায়ের করেন।
ওই মামলায় আদালতের বিচারক মেহেদী হাসান তালুকদার মামলাটি আমলে নিয়ে ধামইরহাট থানায় এজাহার হিসাবে নথিভুক্ত করার আদেশ দেন এবং আসামীকে গ্রেফতারের নির্দেম দেন। ওই আদেশের প্রেক্ষিতে থানা ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪ তারিখে মামলাটি নথিভুক্ত করেন।
স্কুল শিক্ষিকা ফাতেমাতুজ জহুরা বলেন, তার জন্য আমি স্বামী-সন্তান ছেড়েছি। আমাকে সে নিঃস্ব করে ফেলেছে। এখন বিভিন্নভাবে তালবাহানা ও ভয়ভীতি দেখানোর জন্য বাধ্য হয়ে আদালতের স্মরনাপন্ন হয়েছি। কিন্তু এক কথায় আমি তাকে বিয়ে করে ঘর-সংসার করতে চাই। নতুবা তার উপযুক্ত বিচার চাই। অভিযুক্ত জাহাঙ্গীর আলমের সাথে কথা বলার চেষ্টা করা হলেও তার মোবাইল ফোন বন্ধ থাকায় যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।