আহমেদুজ্জামান,কমলগঞ্জঃ
টানা বৃষ্টিপাতের কারণে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলের পানিতে কমলগঞ্জের ধলাই নদীর প্রতিরক্ষা বাঁধের একাধিক স্থানে ভাঙ্গনের ফলে দেখা দিয়েছে বন্যা, পানি বন্ধি হয়ে পড়েছে কয়েক হাজার মানুষ।
গতকাল ও আজ বৃষ্টিপাত কিছুটা কম হওয়ায়,উজানের পানি নামা শুরু হলেও পানি বেড়েছে উপজেলার পতনউষার ইউনিয়নের নিন্মাঞ্চল।
গত কয়েকদিনের টানা বর্ষনে ধলই নদীর পানি বিপদ সীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে গত মঙ্গলবার সকালের দিকে উপজেলার ইসলামপুর ইউনিয়ন এর কুরমাঘাট চেক পোস্ট এলাকায় দুটি জায়গায় ভাঙন দেয়, এর পর দুপুরের শামসুর দোকান ও মকাবিল এলাকায় আরো দুটি ভাঙন দিলে মুহূর্তেই ইসলামপুর ও আদমপুর এ দুটি ইউনিয়নের শ্রীপুর,কোনাগাঁও, গঙ্গানগর, গোলের হাওর,দক্ষিন গোলের হাওর, কুরমাঘাট, ভান্ডারিগাঁও, বনগাঁও, মধ্যভাগসহ অর্ধশতাধিক গ্রাম বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়ে হাজারো পরিবার পানিবন্ধী হয়ে পড়ে।
এছাড়াও মাধবপুর ইউনিয়নের ছয়ছিড়ি,বাঘবাড়ি, মাঝেরগাঁও,ধলাইপাড়, মাধবপুর চা বাগান,মদনমোহন চা বাগান সহ বেশ কয়টি এলাকায় বন্যার পানি ঢুকে পড়ে।
এছাড়াও বেশ কয়েকটি এলাকায় রাস্তার ওপর দিয়ে পানি উপছে পড়ে সড়ক যোগাযোগ বিঘ্নিত হয়। নিন্মাঞ্চল প্লাবিত হয়ে ফসলি জমি সহ মানুষ জন পানি বন্ধি হয়ে পড়ে।
উপজেলার ৯টি ইউনিয়নের প্রায় অর্ধ শতাধিক গ্রাম বন্যা আক্রান্ত। শতাধিক পুকুরে মাছ ভেসে গেছে। ৬ হাজার হেক্টর আমন ও ২ হাজার হেক্টর আউস ধান নিমজ্জিত। ৩৫ টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পানি থাকায় শ্রেণি কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। ৩টি হাইস্কুলও বন্যা কবলিত।
উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম তালুকদার জানান, বন্যায় উপজেলায় প্রায় ৩৫টি প্রাথমিক বিদ্যালয় এখন পর্যন্ত বন্যা আক্রান্ত। এসব বিদ্যালয়ে শ্রেণী কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।উপজেলা কৃষি কর্মকর্কা জয়ন্ত কুমার রায় বলেন, এখন পর্যন্ত ৮ হাজার হেক্টর আউস ও আমন ধান পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে।
এদিকে ধলাই নদীর প্রতিরক্ষা বাঁধের মাধবপুর ইউনিয়নের হিরামতি,পাঠনিকোণা, আদমপুর ইউনিয়ন এর কাটাবিল, মুন্সিবাজার ইউনিয়নের সুরানন্দপুর, লক্ষিপুর, চৈত্রঘাট ও রহিমপুর ইউনিয়নের শ্যামেরকোনা ও ছয়কুট,কমলগঞ্জ পৌরসভার কুমড়াকাপন, উজিরপুর, আলেপুর, নরেন্দ্রপুর ও রামপাশা, কমলগঞ্জ সদর ইউনিয়নের চৈতন্যগঞ্জ, নারায়নপুর, রামপুর, রানীরবাজার এলাকায় প্রতিরক্ষা বাঁধ অধিক ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শাকিব আহমেদ বলেন, শুক্রবার(২৩ আগস্ট)সন্ধ্যা ৬টায় ধলাই নদীর পানি বিপদসীম ১৫৩ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহীত হচ্ছে,তিনি আরও জানান পানি কমে আসলে ধলাই নদীর প্রতিরক্ষা বাঁধের ভাঙ্গন এলাকা ও ঝুঁকিপুর্ণ স্থান বরাদ্ধ পাওয়া সাপেক্ষে দ্রুত মেরামত করা হবে।
কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জয়নাল আবেদীন বলেন,ধলাই নদীর আকস্মিক পানি বেড়ে গিয়ে বেশ কয়েকটি জায়গায় ভাঙ্গন দেখা দিয়ে ইসলামপুর ও আদমপুর ইউনিয়ন এ বেশ কয়েকটি গ্রামে প্লাবিত হয়ে মানুষ পানিবন্ধী হয়ে পড়ে।উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সার্বিক সহযোগিতা করা হচ্ছে।
ইতোমধ্যে কমলগঞ্জে বন্যার্থদের জন্য ৬০ মেঃটন চাল ও নগদ ৩ লক্ষ পঞ্চাশ হাজার টাকা বরাদ্ধ দেওয়া হয়েছে।বরাদ্ধ পাওয়া চাল ও টাকা বিতরণ কর্যক্রম চলমান রয়েছে। এছাড়াও বিভিন্ন ব্যক্তি,প্রতিষ্ঠান,রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের উদ্যোগে ত্রাণ কর্যক্রম চলমান রয়েছে।