জেলা প্রতিনিধি, নড়াইল:
প্রতি বছরের ন্যায় এবারও বর্ষায় খাল-বিল পানিতে টই-টম্বুর। নড়াইলের কালিয়ায় নৌকা তৈরি করছে কারিগরেরা। হাতুড়ি-বাটালের ঠুকঠাক শব্দে মুখর কালিয়ার বড়নাল ও গাজীরহাটসহ বিভিন্ন এলাকা। বর্ষা মৌসুমে নিচু এলাকার লোকজনের যোগাযোগের মাধ্যম হয়ে ওঠে নৌকা। চারদিকে বর্ষায় যখন রাস্তাঘাট তলিয়ে যায়, তখন নৌকা, কলাগাছের ভেলা হয়ে ওঠে পারাপারের ভরসা।
গত বুধবার (১৪ আগষ্ট) বিকালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কালিয়ার বড়নাল গ্রামে কারিগররা নৌকা তৈরি করছে। যেগুলা বিক্রি হয় কালিয়া উপজেলার গাজীরহাট বাজারে ও নড়াইল সদরে রামসিদ্দি বাজারে। প্রতি বুধবার নতুন ও পুরাতন নৌকার হাট বসে এখানে।
কাঠের ব্যবসায়ী কিসলু মোল্যা বলেন, বছরের ৮ মাস কাঠের ব্যাবসা করি, আর বর্ষা কালে কারিগর দিয়ে নৌকা তৈরি করে বিক্রি করি। ১০ বছর ধরে কাজ করি। একটা নৌকা ৬ হাজার থেকে শুরু করে ১২ হাজার টাকা বিক্রি করি। ১১ ফিট থেকে ১৪ ফিট সাইজ নৌকা। মেহগনি কাট দিয়ে নৌকা তৈরি করি।
আরেক কাঠের ব্যবসায়ী মিটু মোল্যা বলেন, আমি পেশায় কাঠ ব্যবসায়ী, আর বর্ষা এলে নৌকা বানাইয়ে বিক্রি করি। ৪ বছর ধরে এ কাজ করছি। আমি নিজেও নৌকা তৈরি করি। জুন মাস থেকে নৌকা তৈরি কাজ শুরু হয় আগস্ট মাসের শেষ পর্যন্ত তৈরি ও বিক্রি হয়। একটা নৌকা সাত থেকে বারো হাজার টাকায় বিক্রি করি। এবার ৮ থেকে ৯ হাত দৈর্ঘ্য’র নৌকা সাত থেকে দশ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। নৌকা বড় হলে দামও বাড়ে। গত দুই মাসে ৩০টি নৌকা বিক্রি করেছি।
নৌকার কারিগর মিন্টু মল্লিক জানান, তিনি পেশায় রাজমিস্ত্রী। বর্ষাকালে ৩ মাস নৌকা তৈরির কাজ করেন। বর্ষায় নৌকা আর বছরের বাকি সময়টা রাজমিস্ত্রির কাজ করে চলে তার সংসার। একটা নৌকা তৈরি করতে একজনের ২ দিন সময় লাগে। মজুরি পাই ২ হাজার ৫শ টাকা।
আরেক কারিগরি মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, আমি পেশায় কাঠ মিস্ত্রি বছরে ৮ মাস ঘরের কাজ করি বাকি চার মাস নৌকার কাজ, দিনে ২ জনে একটা নৌকা বানাই।
নৌকা ক্রেতা উথলী গ্রামের রিয়াজ মোল্যা জানান, বন্যায় নিচু সড়ক ডুবে যায়। বিলের ধান আনা, পরিবারের সদস্যদের পারাপার করার জন্য ১০ হাজার টাকা দিয়ে নৌকা কিনেছেন।
এ ব্যাপারে নড়াইল বিসিক-এর উপব্যবস্থাপক প্রকৌশলী সোলায়মান হোসেন বলেন, নৌকা তৈরির কারিগরদের প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করা ও তাদের দক্ষতা বৃদ্ধিসহ এ শিল্পের উন্নয়নের জন্য যা যা করা দরকার, তা করা হবে।