নিজস্ব প্রতিবেদক :
নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে কোনো ধরনের ইজারা ছাড়াই সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার ২ নং পশ্চিম জাফলং পিয়াইন নদীতে ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন করায় হুমকির মধ্যে পড়েছে গ্রামবাসী।
নদী তীর সংলগ্ন ২ নং পশ্চিম জাফলং ইউনিয়নের নদী গেসা গ্রামের ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, স্থানীয় প্রশাসনকে ‘ম্যানেজ’ করেই ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা ‘বালু লুটের মহোৎসব’ চালাচ্ছেন।
তাতে তাদের বাড়িঘর, জমি,মাদ্রাসা, কবরস্থান বিলীন হওয়ার পাশাপাশি পরিবেশ ও জীব-বৈচিত্র্যের ওপরও মারাত্মক প্রভাব পড়ছে।
দিন-রাত প্রশাসনের চোখের সামনে এ ঘটনা ঘটলেও ‘অজানা কারণে’ তারা নীরব রয়েছেন। গ্রামের মানুষ বলছে, বালু লুটকারীরা প্রভাবশালী।অতীতে লুটে বাধা দেওয়ায় উত্তোলনকারীদের সঙ্গে মারামারির ঘটনাও ঘটেছে।
২ নং পশ্চিম জাফলং ইউনিয়নের ভুক্তভোগীরা বলেন, সন্ধ্যার শুরু থাকি সকাল ৯টা পর্যন্ত শতাধিক বোমা মেশিন (স্থানীয়ভাবে তৈরি ড্রেজার) চলে নদীতে। একটার পর একটা নৌকা লাগিয়ে মেশিন চালানো হয়।
এর পেছনে কারা জড়িত জানতে চাইলে ভুক্তভোগীদের অনেকেই বলেন ২ পশ্চিম জাফলং ইউনিয়নের যুবলীগ নেতা দেলোয়ার হোসেন কিবরিয়া ও বিছনাকান্দি ইউনিয়নের প্রসাসক বদরুল হোসেনের ভাই খাইরুল ও ফয়জুলের ইশারায় চলছে বালু লুটের মহা উৎসব।
ঘাটে ঘাটে বাঁধা ড্রেজার সরজমিনে গোয়াইনঘাট উপজেলার ২ নং পশ্চিম জাফলং ইউনিয়নে গিয়ে দেখা যায়, পিয়াইন নদীর এপার-ওপারে বেঁধে রাখা হয়েছে অন্তত ৩০ টি নৌকা, যেগুলো ড্রেজার মেশিন হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
হাদারপাড় বাজার থেকে নৌকায় করে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের পাহাড়ের পাদদেশে দিকে এগিয়ে গেলে নদী তীরবর্তী গ্রামগুলোতে ড্রেজারের দেখা মেলে। দিনের বেলায়ও ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন করতে দেখা যায়।
মনাইকান্দি বড় মাদ্রাসার সামনে নৌকায় (বাল্কহেড) বসানো ড্রেজার দিয়ে বালু তুলতে দেখা গেছে। স্থানীয়রা জানান, দিনের বেলা ১০ থেকে ১৫টি ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু তুলে নৌকা ভরাট করা হয়।নদীর বিভিন্ন স্থানে ভাঙনও দেখা দিয়েছে। মনাইকান্দি ও নোয়াগ্রামের কবরস্থান ভেঙে নদীতে বিলীন হচ্ছে।
২ নং পশ্চিম জাফলং ইউনিয়নের মনরতল থেকে সোনারহাট পর্যন্ত চলছে অবৈধ বালু উত্তোলনের মহা উৎসব, যুবলীগ নেতা দেলোয়ার হোসেন কিবরিয়া ও বিছনাকান্দি ইউনিয়নের প্রসাসক বদরুল হোসেনের ভাই খাইরুল ও ফয়জুল সহ একটি সঙ্গবদ্ধ চক্র অবৈধভাবে ড্রেজার মেশিন দিয়ে প্রকাশ্যে চালাচ্ছে বালু লুটের মহোৎসব।
সরকার ঘোষিত পরিবেশ সংকাটাপন্ন এসব এলাকায় অবৈধভাবে দিনের পর দিন ড্রেজার মেশিন দিয়ে নদী থেকে অপরিকল্পিত ভাবে বালু উত্তোলনের ফলে বড় ধরনের হুমকির মুখে পড়ছে হাদারপার ইউনিয়নের নদী তীরবর্তী গ্রামের বাসিন্দারা।
এলাকাবাসীর অভিযোগের প্রেক্ষিতে জানা যায় গোয়াইনঘাট উপজেলার হাদারপার ইউনিয়নের পিয়াইন নদী থেকে দীর্ঘদিন যাবত দেলোয়ার খাইরুল ও ফয়জুলের সঙ্গবদ্ধ চক্র প্রকাশ্যে অবৈধভাবে নদী থেকে বালু উত্তোলন করে আসছে।
অত্র এলাকার নদীতে প্রতিদিন গড়ে এক থেকে দেড়শত বালুবাহী স্টীল বডির ইঞ্জিন নৌকা প্রশাসনে নাকের ডগায় চলাচল করলেও অদৃশ্য কারণে নিরব ভূমিকা পালন করছে স্থানীয় প্রশাসন।
আর প্রশাসনের এমন নির্বিকার ভূমিকায় চিন্তিত নদী তীরবর্তী গ্রামবাসী। এলাকাবাসীর অভিযোগ করে বলেন এভাবে অবৈধভাবে ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলনের ফলে হুমকির মুখে পড়তে যাচ্ছে তাদের বাড়িঘর,স্কুল,মসজিদ,মাদ্রাসা সহ একাধিক প্রতিষ্ঠান ও বসতবাড়ি।
এ ব্যাপারে স্থানীয় এলাকাবাসী প্রশাসনের সদয় দৃষ্টি কামনা করেন।
খোঁজ নিয়ে জানাজায় হাদারপাড় ইউনিয়নের পিয়াইন নদীর যে স্থান থেকে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে সেই স্থানের কোন ইজারা সিলেট জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে দেয়া হয়নি।
অভিযুক্ত দেলোয়ার হোসেনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি অভিযোগের অস্বীকার করে বলেন আমার কোন বাল্কহেড ও ড্রেজার মেশিন নেই। আমাকে ষড়যন্ত্র করে ফাঁসানো হচ্ছে।
তারপরও ভূয়া রশিদের মাধ্যমে এই সিন্ডিকেট প্রতি ফুট বালু থেকে দুই টাকা হার রাজস্ব আদায় করে প্রতিদিন গড়ে প্রায় আট থেকে দশ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।
অভিযুক্ত খাইরুল ইসলামের মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন করার পরেও রিসিভ না করায় তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
এবিষয়ে গোয়াইঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রফিক বলেন আমরা একাধিকবার ইউএনও মহোদয়ের উপস্থিতিতে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে অবৈধভাবে ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন করার দায়ে জরিমানা করা হয়েছে।তারপরেও সুনির্দিষ্ট অভিযোগের পরিপেক্ষিতে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এ বিষয়ে গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী অফিসারের মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন দেওয়ার পরেও রিসিভ না করায় উনার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।