কে. এম. সাখাওয়াত হোসেন: ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে নেত্রকোণার কলমাকান্দায় চেয়ারম্যান পদে এক প্রার্থীর পক্ষে বিভিন্ন সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী-শিক্ষকদের বিরুদ্ধে নির্বাচনী কর্মকান্ড পরিচালনা করার এবং নেত্রকোণা-১ (দুর্গাপুর-কলমাকান্দা) আসনের সাংসদ আরেক প্রার্থীর পক্ষে এলাকায় অবস্থান করে নানাভাবে নির্বাচনী কর্মকান্ডে বাধা সৃষ্টির অপচেষ্টা, প্রকাশ্য সভায় এক প্রার্থী ও তার শুভাকাঙ্খিদের হাত-পা ভেঙে দেয়ার মত সন্ত্রাসী বক্তব্য প্রদান এবং সুকৌশলে প্রার্থীর পক্ষে ভোট চাওয়া এমন ধরণের অভিযোগ আনয়ন করা হয়।
নির্বাচনী আচরণ বিধি লঙ্ঘন এ ধরণের অভিযোগপত্র প্রাপ্তির সত্যতা নিশ্চিত করেন কলমাকান্দা ও দুর্গাপুর এই দুই উপজেলা পরিষদ নির্বচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা গোলাম মোস্তফা।
অভিযোগকারী চেয়ারম্যান প্রার্থীরা হলেন- কলমাকান্দা যুবলীগের সাবেক সদস্য মুহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান চয়ন। তিনি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) থেকে ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগে যোগদান করেন এবং এ নির্বাচনে তিনি ‘ঘোড়া’ প্রতীকের প্রার্থী।
অপরদিকে উপজেলা আওয়ামীলীগের সাবেক মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক সম্পাদক ও নেত্রকোণা-১ আসনের সাংসদ মোশতাক আহমেদ রুহী’র সম্পর্কে ফুফাতো ভাই হলেন ‘দোয়াত কলম’ প্রতীকের প্রার্থী আব্দুল কুদ্দুছ। তার পক্ষে বর্তমান সাংসদের ছেলে সাদমান মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। এছাড়াও এ আসনের সাংসদসহ উপজেলা আ.লীগ ও এর সহযোগী অঙ্গ সংগঠনের প্রার্থী হিসেবে আব্দুল কুদ্দুছের নাম ঘোষণা করার জনশ্রুতিও রয়েছে।
গত ৩০ এপ্রিল রিটার্নিং কর্মকর্তা বরাবরে বিভিন্ন সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী-শিক্ষকবৃন্দ প্রার্থী মুহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমানের পক্ষে নির্বাচনী কর্মকান্ড পরিচালনার অভিযোগ আনেন আব্দুল কুদ্দুছ।
অভিযুক্ত সরকারি কর্মচারী-শিক্ষকবৃন্দ হলেন- হরিণধরা সরকারি প্রাথমিক (স. প্রা.) বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক অঞ্জন সরকার, নাগডরা স. প্রা. বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক শাহান শাহ, নাগনী স. প্রা. স্কুলে সহকারি শিক্ষক নিক্সন খান সরকার, বটতলা স. প্রা. বিদ্যালয়ের শিক্ষক নাসির উদ্দিন আহম্মেদ মিন্টু, সচিত্রবালা স. প্রা. বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক শিরিন শাহ, গঙ্গানগর স. প্রা. বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক মৃণাল সরকার, হাজী সাদত আলী স. প্রা. বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক সাইফুল ইসলাম, কাকুরিমা মাছিম স. প্রা. বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক হাবিবুর রহমান, কলমাকান্দা সরকারি কলেজের অধ্যাপক খায়রুল আলম ও অফিস সহকারি লিটন দাস, কলমাকান্দা গার্লস হাই স্কুলের সহকারি শিক্ষক রাজিব আহমেদসহ আরও বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীগণ।
আব্দুল কুদ্দুছের অভিযোগে আরও উল্লেখ, অভিযুক্ত কর্মচারী-শিক্ষকবৃন্দ প্রকাশ্যে. স্ব-শরীরে ও বিভিন্ন অনলাইন মাধ্যমে নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন। যাহা নির্বাচনী আচরণ বিধিমালা-২০০৮ এর ২৪(২) বিধির স্পষ্ট লঙ্ঘন। এছাড়াও মুস্তাফিজুর রহমান চয়ন বিভিন্নভাবে বল প্রয়োগ, ভয়-ভীতি প্রদানের মাধ্যমে নির্বাচনের পরিবেশ বিশৃঙ্খলা করার অপচেষ্টায় লিপ্ত আছেন। প্রার্থী (চয়ন) নিজে এবং অভিযুক্ত সরকারি চাকুরীজীবিসহ আরও অন্যান্য ব্যক্তিবর্গ বিপুল সংখ্যক মোটরবাইক নিয়ে প্রায় প্রতিদিনই ঘোড়া প্রতীকের পক্ষে শোভাযাত্রা করেন।
এরআগে গত ২৭ এপ্রিল রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ দায়ের করেন প্রার্থী মুহাম্মদ মুস্তাফিজুর রহমান চয়ন। তার অভিযোগে উল্লেখ, স্থানীয় সাংসদ মোশতাক আহম্মেদ রুহী নির্বাচনী এলাকায় অবস্থান করছেন। সাংসদ প্রকাশ্য সভায় তার (চয়ন) ও তার শুভাকাঙ্খিদের হাত-পা ভেঙে দেওয়ার মত সন্ত্রাসী বক্তব্য প্রদান করেন। গত ২৬ এপ্রিল সাংসদের ছেলেকে দিয়ে প্রকাশ্যে প্রার্থীকে (চয়ন) প্রতিহত করার ঘোষনা দেন। এ সকল বিষয়গুলো বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। সাংসদ সুকৌশলে কলমাকান্দার বিভিন্ন জায়গা যাচ্ছেন ও চয়নের বিরুদ্ধে সাংসদের পছন্দের প্রার্থীর পক্ষে ভোট চাচ্ছেন। যা নির্বাচনী আইনে সুস্পষ্ট লঙ্ঘন উল্লেখ করে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ তথা নির্বাচনে সুষ্ঠ পরিবেশ ফিরিয়ে আনার দাবী করেন ‘ঘোড়া’ প্রতীকের প্রার্থী চয়ন।
এ বিষয়ে কলমাকান্দার প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জাহানারা খাতুন বলেন, অভিযোগের কপি পায়নি। তবে এ বিষয়ে খোঁজ দিয়ে দেখা হবে।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বলেন, কলেজ ও মাধ্যমিক স্কুলের যেসব কর্মচারী-শিক্ষকদের নাম বললেন তাদের মধ্যে রাজিব আগে থেকে বিতর্কিত। অভিযুক্তরা সরকারি চাকুরি করে প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিতে পারেন না। এ মুহুর্তে নির্বাচনী প্রশিক্ষণে আছি। প্রশিক্ষণ শেষে ইউএনও মহোদয়কে বিষয়টি অবগত ও অভিযুক্তদেরকে মৌখিকভাবে সতর্ক করা হবে।
কলমাকান্দার নির্বাহী কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান বলেন, অভিযোগ বিষয়ে তথ্য জানা নাই। তবে আপনি (প্রতিবেদক) যেসব কর্মচারী-শিক্ষকদের নাম জানালেন তাদের মধ্যে কয়েকজনকে গত সংসদ নির্বাচনে নির্বাচনী দায়িত্ব থেকে বাদ রাখা হয়েছিল। নির্বাচনী আচরণ বিধি সংঙ্ঘনের অভিযোগগুলো জেলা প্রশাসক মহোদয়কে অবগত করা হবে।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মিজানুর রহমান খান বলেন, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী নির্বাচনী প্রার্থীর পক্ষে কোন কার্যক্রমে অংশ নিতে পারেন না। অভিযুক্ত শিক্ষকদের বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়ে প্রতিবেদন প্রেরণ করার জন্য উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে পত্র দেওয়া হয়েছে। প্রতিবেদন পাওয়ার পর পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণে রিটার্নিং কর্মকর্তাকে অবগত করা হবে।
এ ব্যাপারে সাংসদ মোশতাক আহম্মেদ রুহী’র মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। খুদে বার্তা পাঠিয়েও বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
গত ২৮ এপ্রিল ‘কৈ মাছ’ প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী মো. রফিকুজ্জামান খোকন কলমাকান্দা বাজার ধান মহাল রোডে নির্বাচনে নামধারী আওয়ামী লীগ নেতার মিথ্যাচার ও নির্বাচনী আচরণ বিধি লংঙ্ঘনের প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন করেন। এতে তিনি বলেন, কলমাকান্দায় একটি কুচক্রী মহল ‘দোয়াত কলম’ প্রতীকের প্রার্থী আব্দুল কুদ্দুছকে আওয়ামীলীগ ও সাংসদ মোশতাক আহম্মেদ রুহী’র মনোনীত প্রার্থী হিসেবে প্রচার করায় নির্বাচন প্রভাবিত হতে পারে।