একজন মুসলিম হিসেবে যে দায়িত্ব আমার, যে কাজ আমার করা উচিত ছিল সেই কাজ একজন খ্রিস্টান মিল্টন সমাদ্দার করছেন সেজন্য আমি লজ্জিত। এমন মহান সেবামূলক কাজের জন্য আল্লাহ আমাকে মনোনীত না করে একজন খ্রিস্টান মিল্টন সমাদ্দারকে মনোনীত করেছেন সেজন্য আমি লজ্জিত।
আমি লজ্জিত কারণ আমার দেশে ১৬ কোটি জনগণের ১৫ কোটি মুসলিম, ১.৩ কোটি হিন্দু, ৬০ লাখ বৌদ্ধ আর ৪০ লাখ খ্রিস্টান। এতো মানুষের মধ্যে আল্লাহ শুধু মিল্টন সমাদ্দারকে এই দায়িত্ব দিয়েছেন। আমি লজ্জিত ১৬ কোটি মুসলিমের মধ্যে একজন মিল্টন জন্ম নেয়নি, ১.৩ কোটি হিন্দুর মধ্যে একজন মিল্টন জন্ম নেয়নি কিন্তু ৪০ লাখ খ্রিস্টানের মধ্যে একজন মহান মিল্টনের জন্ম হয়েছে।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘তোমরা ক্ষুধার্তকে খাবার দাও, অসুস্থ (প্রতিবন্ধি) ব্যক্তির খোঁজ খবর নাও এবং বন্দিদের মুক্ত করে দাও।’ (বুখারি)
অসহায় নারী, প্রতিবন্ধি ও পাগলদের প্রতি অত্যাচার-নির্যাতন করলে যেমন আল্লাহর আরশ কেঁপে ওঠে তেমনি তাদের প্রতি দয়া প্রদর্শন করলে দুনিয়া ও পরকালের মুক্তিও সুনিশ্চিত। শুনেছি পাগল মানুষ নাকি আল্লাহর অলি। সাক্ষাৎ আল্লাহর অলিদের সেবার জন্য আল্লাহ মিল্টন সমাদ্দারকে পছন্দ করেছেন। এতে মুসলমানদের লজ্জিত হওয়া উচিত।
ছোটবেলা আমরা পড়েছি, বিচারের দিন আল্লাহ মানুষকে প্রশ্ন করবেন; “আমি ক্ষুধার্ত অবস্থায় তোমার কাছে সাহায্য চেয়েছিলাম, তুমি আমাকে খেতে দাওনি”। আমি রোগগ্রস্ত হয়ে যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছিলাম তুমি আমার সেবা করোনি। তখন মানুষ আল্লাহকে বলবে; “হে আল্লাহ আপনিতো অন্নদাতা ‘আর রাযযাক’, আপনি তো মহা রোগ নিরাময়কারী ‘আস শাফি’ আমরা কিভাবে আপনার ক্ষুধা এবং রোগ নিরাময় করতে পারি?” তখন আল্লাহ বলবেন; “সেদিন তোমার সামনে যে ক্ষুধার্ত কাতরাচ্ছিল তাকে যদি অন্ন দিতে, যে রোগি যন্ত্রণাকাতর ছিল তাকে যদি সেবা করতে তাহলে তা আমাকেই খাবার দেয়া, আমারই সেবা করা হতো” তখন মানুষ লজ্জিত হয়ে পড়বে।
আমরা জানি আল্লাহর ইচ্ছায় হযরত ইসা আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুষ্ঠ রোগীদের ভালো করতেন, তাদের গায়ে হাত দিয়ে তাদের সেবা করতেন, আমাদের সমাজে অসংখ্য পীর, মাওলানা, মৌলবি আছেন তারা কি কুষ্ঠ রোগীর গায়ে হাত দিবেন? আমাদের নবী সাঃ-এর বাসায় এসে এক মুশরিক ব্যক্তি বিছানায় পায়খানা করে নষ্ট করেছেন, সেই বিছানা তিনি নিজহাতে পরিষ্কার করেছেন, এটা বাংলাদেশের কোনো পীর, হুজুর যারা আছে তারা করবে? ইহুদি বুড়ী প্রতিদিন তার চলার পথে কাটা বিছিয়ে নবীকে কষ্ট দিতো, সেই বুড়ী অসুস্থ হলে তিনি নিজহাতে সেবা করেছেন, এটা কোনো মুসলিম এখন সহ্য করবে?
আমরা বলি ইসলাম শান্তির ধর্ম, মানবতার ধর্ম, তাহলে সে শান্তি ও মানবতার উদাহরণ কে সৃষ্টি করবে? আপনি নাকি মিল্টন সমাদ্দার? আপনি বাংলাদেশে একজন খ্রিস্টান বাবা মা বের করে আনতে পারবেন যারা এভাবে অঙ্গহানী, পঁচা ও পোকা ধরা শরীর নিয়ে রাস্তায় পড়ে আছে? মিল্টনের আশ্রমে যত অসহায় বাবা মা, পাগলী, প্রতিবন্ধী এবং শিশু আছে তারা সবাই মুসলিম ঘরের লোক, তাদের রাস্তা থেকে তুলে এনে সেবা দিচ্ছে লালন পালন করছে মিল্টন এতে আপনার লজ্জা হয় না?
আপনি মুসলিম বেহেশত আপনার দখলে আর মিল্টন খ্রিস্টান সে যাবে দোযখে এই চিন্তা নিয়ে আছেন? আপনি মুসলিম, পঙ্গু পিতা মাতাকে রাস্তায় ফেলে দিয়ে বেহেশত? আর তুলে নিয়ে আশ্রয় দেয় মিল্টন তার ভাগে দোযখ? আপনি মুসলিম, রাস্তায় পোকা ধরা মানুষ পড়ে আছে একবার চেয়েও দেখেননি, আপনার জন্য বেহেশত? আর মিল্টন তুলে সেবা দিয়ে সুস্থ করে তার জন্য দোযখ? আপনি মুসলিম, পাগলীকে প্রেগন্যান্ট করেছেন আপনার জন্য বেহেশত? আর মিল্টন তাকে বোন আর বাচ্চাকে পিতৃ পরিচয়ে মানুষ করে মিল্টনের ভাগে দোযখ? শুনেন আপনি যে-ই লোভে ঘোড়েন ঐ লোভে সব মানুষ ঘোড়ে না। আল্লাহ প্রত্যেক বিষয়ে জাররা জাররা হিসাব নিবেন।
কোনো সন্দেহ নেই, যারা বিশ্বাস করেছে এবং যারা ইহুদী, খ্রিস্টান, সাবিইন — এদের মধ্যে যারা আল্লাহকে এবং শেষ দিনে বিশ্বাস করে এবং ভালো কাজ করে, তাদের পুরস্কার তাদের প্রভুর কাছে রয়েছে। তাদের কোনো ভয় নেই, তারা দুঃখও করবে না। [আল-বাক্বারাহ ৬২]
অতএব সবসময় মনে রাখতে হবে যে বেহেশতে কে যাবেন এটা আল্লাহর এখতিয়ারে। আল্লাহ যে কাউকে বেহেশতে পাঠাতে পারেন।
পরকাল মানে হচ্ছে জবাবদিহিতা। আমি যা কাজ করছি এটার হিসাব ঠিক আছে কিনা? সেই হিসাবটা চিন্তা করবেন। তাহলেই দেখবেন যে আপনি ভালো কাজ করতে পারছেন। অন্যকে নিয়ে বেশি চিন্তা যদি করেন যে সে বেহেশতে যাবে না দোজখে যাবে, তার কোথায় যাওয়া উচিত না উচিত তাহলে আপনার কাজ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এজন্যে সবসময় নিজেকে নিয়ে চিন্তা করবেন যে আপনি কী কাজ করছেন, আপনি কোথায় যাবেন।
লেখক: এইচ এম শামীম
সম্পাদক সমাজদর্পণ নিউজ