নিজস্ব প্রতিবেদক: স্থানীয় আলেম-ওলামাদের বাধায় নেত্রকোনার মোহনগঞ্জ পৌরশহরের ‘পাংখা মামা’র মাজারে ওরশ অনুষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে।
সোমবার সন্ধ্যা থেকে ওই মাজারে ওরশ শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু স্থানীয় অলেম-ওলামারা মাজারে ওরশের পরিবর্তে ওয়াজ মাহফিল করার ঘোষণা দেন। তবে এনিয়ে গত রবিবার থেকে উভয় পক্ষ মুখোমুখি অবস্থান নিলে অনাকঙ্খিত পরিস্থিতি এড়াতে প্রশাসন ওরশ বন্ধ রাখতে বলেন। এদিকে অন্য পক্ষকে ওয়াজ মাহফিল না করে শান্ত থাকতে বলা হয়।
গত ১৯ বছর যাবত ওরশ অনুষ্ঠান হয়ে আসছে ‘পাংখা মামা’র মাজারে। আশপাশের নানা জায়গা থেকে প্রতিবছর ওরশে হাজার হাজার মানুষ উপস্থিত হয়। তবে প্রতিবছরের মতো এবারও নির্বিগ্নে ওরশ পালনে জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত আবেদন করেছেন মাজারের ওরশ আয়োজন কর্তৃপক্ষ। পাশাপাশি বিষয়টি উপজেলা প্রশাসনকেও অবহিত করেছেন তারা।
এ দিকে উপজেলার বেশ কয়েকজন আলেম-ওলামা মাজারে ওরশ বন্ধ রাখার জন্য উপজেলা প্রশাসনের কাছে আবেদন জানিয়েছেন। ওরশের জায়গায় ওয়াজ মাহফিল করারও দাবি জানিয়েছেন তারা।
আলেম-ওলামাদের দাবি-মাজারে কবরস্থান রয়েছে। সেখানে ওরশের নামে গান-বাজনা করা হয়। সেইসাথে ওরশ চলাকালে মদ-গাঁজার আসর বসে। ইসলামের দৃষ্টিতে এসব গোনাহের কাজ। তাই তারা ওরশ বন্ধ রাখার দাবি জানান তারা।
উভয় পক্ষের পাল্টাপাল্টিতে পরিস্থিতি শান্ত রাখতে উপজেলা প্রশাসন আপাতত ওরশ বন্ধ রেখেছে।
এ বিষয়ে ওরশ আয়োজন কমিটির সভাপতি রফিকুল ইসলাম বলেন, গত ১৯ বছর ধরে এখানে ওরশ পালন হয়ে আসছে। এখানে মিলাদ-দোয়ার পাশাপাশি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়ে থাকে। বিভিন্ন জেলা থেকে হাজার হাজার মানুষ ওরশে আসেন। বেআইনি কিছু এখানে হয় না। এমনকি ইসলাম বিরোধী কোন কার্যকলাপও এখানে হয় না। আমাদের মাজার কমিটির একজন মাজারের টাকা পয়সা এদিক ওদিক করে ফেলে। পরে তাকে হিসেব দিতে বলায় ষড়যন্ত্র করে হুজুরদের সাথে হাত মিলিয়ে এখন ওরশ বন্ধ করে দিতে চাইছে। না হলে গত ১৯ বছর ওই আলেমরা তো এই শহরের ছিলেন। তখন তো বাধা দিলেন না।
তিনি আরও বলেন, উপজেলায় আরও অনেক মাজার আছে। প্রত্যেকটাতে ওরশ হয়। সেগুলোতে তো আলেমরা ওরশ বন্ধ করেন না। ওরশ বন্ধ হলে সব মাজারে বন্ধ করা হোক। তবে তাদের কমিটির ওই সদস্যর নাম বলতে চাননি তিনি।
উপজেলার আলেম-ওলামাদের একজন পাংখা মামার মাজারে ওরশ বন্ধের বিষয়ে সক্রিয় মাওলানা মাসুম আহমদ বলেন, ওই মাজারে কবরস্থান রয়েছে। কবরস্থান পবিত্র স্থান হিসেবে গণ্য। তাই ওখানে গান-বাজনা করা গোনাহের কাজ। ওরশে মদ-গাঁজার আসর বাসে। তাই এসব কাজ বন্ধে আমারা উপজেলার আলেম-ওলামারা মিলে উপজেলা প্রশাসনকে বলেছি। ওরশের পরিবর্তে সেখানে ওয়াজ মাহফিল করার ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু প্রশাসন ওরশ বন্ধ রেখেছে। পরিস্থিতি বিবেচনায় আমরা ওয়াজ মাহফিল বন্ধ রেখেছি। যদি ওরশ শুরু করা হয় তাহলে সেটি বন্ধ করে আমরা সেখানে ওয়াজ মাহফিল করব। তাদেরকে ইসলাম বিরোধী কাজ করতে দেওয়া হবে না। এ সিদ্ধান্ত আমাদের সবার।
উপজেলার অন্যান্য মাজারের ওরশ বন্ধ করা হবে কিনা, নাকি শুধুমাত্র পাংখা মামার মাজারে বিষয়ে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এমন প্রশ্নের জবাবে মাওলানা মাসুম আহমদ বলেন, অন্যান্য মাজারের ওরশ বন্ধ করা হবে কিনা জানি না। এ বিষয়ে আমাদের কোন সিদ্ধান্ত হয়নি।
সোমবার এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোসা. হাফিজা জেসমিন বলেন, ওরশ আয়োজনের জন্য মাজার কর্তৃপক্ষ রোববার জেলা প্রশাসকের (ডিসি) কাছে আবেদন করেছেন। এখনো কোন সিদ্ধান্ত আসেনি। তাই আজ ওরশ বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে। মঙ্গলবার হয়তো কোন একটা জবাব পাওয়া যাবে। ডিসি স্যার যে সিদ্ধান্ত দেবেন সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।