কে. এম. সাখাওয়াত হোসেন: নেত্রকোণার কেন্দুয়ায় স্বামী, ভাসুর ও ননাসের হাতে নির্মম নির্যাতনের শিকার হয়েছেন বান্দনাল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক রুনা আক্তার। যৌতুকের জন্য অমানুষিক নির্যাতন চালিয়েছে তারই স্বামী, ভাসুর (স্বামীর বড় ভাই) ও ননাস (স্বামীর বড় বোন) দাবী ওই ভুক্তভোগীর।
এ ঘটনায় রবিবার (১১ ফেব্রুয়ারি) কেন্দুয়া থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী নিজে। এর আগের দিন (শনিবার) দুপুরের দিকে উপজেলার বলাইশিমুল ইউনিয়নের কচনধরা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
অভিযুক্তরা হলেন- ভুক্তভোগীর স্বামী রিয়াজ আহমেদ সিরাজ (৪০), ভাসুর অলি উল্লাহ (৪৫) ও ননাস শিল্পী আক্তার (৪৭)। অপরদিকে রুনা আক্তারের বাবার বাড়ি একই জেলার কলমাকান্দার কৈলাটি ইউনিয়নে।
অভিযোগে রুনা আক্তার উল্লেখ করেন, ১৩ বছর পূর্বে পারিবারিকভাবে কেন্দুয়ার কচনধরা গ্রামের রিয়াজ আহমেদ সিরাজের সাথে তার বিয়ে হয়। দাম্পত্য জীবনে তাদের এক পুত্র ও তিন কন্যা সন্তান রয়েছে। বিয়ের পরে তার স্বামী বিভিন্নভাবে চাপ প্রয়োগের কারণে বাবার বাড়ি থেকে প্রায় পাঁচ লক্ষ টাকা এনে দেন রুনা। এরই মধ্যে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চাকুরী হলে বেতনের সম্পূর্ণ টাকা ভোগ করেন ভুক্তভোগীর স্বামী। তাতেও ক্ষান্ত হয়নি রিয়াজ আহমেদ।
সম্প্রতি রুনাকে চার লাখ টাকা ঋণ তুলে দিতে বাধ্য করেন তার স্বামী। এখন আরো টাকা লাগবে। বাবার বাড়ি থেকে আরো ১০ লাখ টাকা এনে দেওয়ার জন্য চাপ দিতে থাকে রিয়াজ। গত শনিবার দুপুরে এই টাকার জন্য আবার চাপ দিলে অস্বীকৃতি জানায় রুনা আক্তার। এতে ভুক্তভোগীর প্রতি প্রচন্ড ক্ষিপ্ত হয়ে একপর্যায়ে ভুক্তভোগীকে লোহার রড দিয়ে বেধড়ক মারপিট করে ভুক্তভোগীর স্বামী, ভাসুর ও ননাস।
এবিষয়ে কেন্দুয়ার নারী নির্যাতন প্রতিরোধ কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও স্কুল শিক্ষক কল্যাণী হাসান বলেন, ভুক্তভোগী একজন মহিলা স্কুল শিক্ষক। যৌতুকের জন্য নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে তাকে। কোন সমাজে বসবাস আমরা করছি? আমি তাঁর শরীরের সব আঘাতের চিহ্নগুলো দেখেছি।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জামিরুল ইসলাম এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেন, ভুক্তভোগী রুনা আক্তার একজন মেধাবী শিক্ষক। স্বামী, ভাসুর ও ননাসের দ্বারা এমন নির্যাতন কাম্য নয়।
কেন্দুয়া থানার ওসি মো. এনামুল হক অভিযোগ প্রাপ্তির সত্যতা নিশ্চিত কর বলেন, ঘটনাটি খুবই দুঃখজনক। মামলা দায়ের প্রক্রিয়াধীন। ভুক্তভোগীকে সকল ধরণের আইনি সহায়তা করা হবে বলে জানান তিনি।