নতুন ভূমি সংক্রান্ত আইন নিয়ে দীর্ঘদিন আলোচনা থাকায় অনেকের মধ্যে নানাবিধ কৌতুহল এবং ভিন্ন ভিন্ন ধারনা রয়েছে।তাই এই আইনের মৌলিক বিষয়বস্তু তুলে ধরার চেষ্টা করছি।সাধারনত অনেকে ধারনা করে থাকেন যেহেতু এই আইনটি ভূমি সংক্রান্ত তাই এটি একটি দেওয়ানী প্রকৃতির(Civil nature) আইন।কিন্তু আইনটি দেওয়ানী প্রকৃতির(Civil Nature) আইন না,এটি একটি ফৌজদারী প্রকৃতির(Criminal Nature) আইন।এই আইন কেউ ভূমির বৈধ মালিক কিনা তা নির্ধারন করবে না তবে অন্যান্য দেওয়ানী প্রকৃতির আইন বা বিধি বিধান দ্বারা নির্ধারিত বৈধ মালিকদের কিছু আইনগত প্রতিকার এবং ভূমি সংক্রান্ত অপরাধ প্রতিরোধের কতিপয় ফৌজদারী বিধান অত্র আইনে সন্নিবেশিত আছে।আইনটির নাম(Title) দ্বারাও এবিষয়ে কিছু ধারনা পাওয়া যায়,আইনটির পুরো নাম হলো- বাংলাদেশ ভূমি সংক্রান্ত অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইন-২০২৩।উক্ত আইনে বৈধ মালিকানাকে গুরুত্ব দিয়ে অবৈধ দখলকে অপরাধ হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে যা ভূমির বৈধ মালিকদের অধিকার নিশ্চিত করে এবং অবৈধ দখলকে নিরুৎসাহিত করে।২০২৩ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর আইনটি মহামান্য রাষ্ট্রপতির সম্মত্তি লাভ করে এবং গেজেট আকারে প্রকাশিত হয়েছে।সাধারনত যেকোন আইনের প্রস্তাবনায় সেই আইন প্রনয়নের উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য সম্পর্কে সংক্ষেপে বর্ননা দেয়া হয়।এই আইনটিও এর ব্যতিক্রম নয়। এই আইনের প্রস্তাবনায় উল্লেখ আছে -যেহেতু সরকারী,আধা- সরকারী, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান এবং নাগরিকের স্বীয় মালিকানাধীন ভূমিতে দখল ও প্রাপ্য অধিকার নিশ্চিতকরনে ভূমি সংশ্লিষ্ট অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রয়োজনীয় প্রতিকারের লক্ষ্যে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহনসহ সুসংহত বিধান করা প্রয়োজন এবং যেহেতু ভূমি বিরোধ দ্রুত নিরসন করা সমীচীন ও প্রযোজন বিধায় অত্র আইন প্রনয়ন করা হয়েছে।প্রস্তাবনা এবং বিধি বিধান বিশ্লেষণ করলে এটি পরিষ্কার যে ভূমির মালিকানাই হলো ভূমি দখল করার বা দখলে রাখার মূল ভিত্তি,বৈধ মালিকানা ব্যাতীত কোন জমি দখল করা কিংবা দখলে রাখা কিংবা ভূমি সংক্রান্ত যেকোন ধরনের প্রতারনা বেআইনি এবং অত্র আইনের বিধান দ্বারা তা অপরাধ হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে।যুগের পর যুগ ধরে আইনগত দুর্বলতা এবং প্রক্রিয়া গত জটিলতার সুযোগে কিছু লোক মালিকানা না থাকলেও জবরদখলের মাধ্যমে অন্যর মালিকানাধীন জমি দখল করতো কিংবা দখলে রাখতো বা প্রতারনার মাধ্যমে কাগজপত্র সৃজন কিংবা সঠিক তথ্য গোপন করত যা থেকে ভূমি সংক্রান্ত নানা ধরনের বিরোধ সৃষ্টি হতো এবং ফৌজদারী অপরাধ সংঘটিত হতো। বর্তমান আইনে উক্ত বিষয়াবলীর সুস্পষ্ট প্রতিকার ও নিরসন সংক্রান্ত বিধান রয়েছে।পাশাপাশি আইনটি যেহেতু ফৌজদারী প্রকৃতির(Criminal Nature)আইন তাই ফৌজদারী বিচার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এর প্রতিকার লাভ করার বিষয়ে বিধান দেয়া আছে।প্রক্রিয়াগত জটিলতা কমিয়ে আইনটির যথাযথ প্রয়োগ হলে ভূমি ব্যবস্থাপনায় ইতিবাচক পরিবর্তন আনবে বলে আমি মনে করি।
লেখক:এডভোকেট মোঃ কাওসার হোসাইন
আইনজীবি,সুপ্রিমকোর্ট অব বাংলাদেশ।