◻ আমিনুল ইসলাম,কিশোরগঞ্জ:
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ইতোমধ্যেই সর্বত্র চলছে আলোচনা-সমালোচনা। চায়ের স্টল থেকে শুরু করে সকল রাজনৈতিক কার্যালয় সবখানেই শোনা যাচ্ছে নির্বাচনী আমেজ। বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের তথ্যমতে,আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে ২০২৩ সালের ডিসেম্বরের শেষে অথবা ২০২৪ সালের জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে। আর সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হবে ২০২৩ সালের নভেম্বরে। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে ইতোমধ্যেই প্রার্থীরা তাদের জানান দিচ্ছেন। রাজনীতির মাঠ থেকে শুরু করে প্রত্যন্ত অঞ্চলেও প্রার্থীরা ঘুরেফিরে নানা প্রতিশ্রুতি দিয়ে আশা দেখাচ্ছেন ভোটারদের। এদিকে সাধারণ ভোটাররা নেতৃত্বে কেমন প্রার্থী চান এ নিয়েও চলছে নানা জল্পনা কল্পনা। ব্যাতিক্রম নেই কিশোরগঞ্জেও। জেলার ছয়টি আসনেই প্রার্থীরা তাদের দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন। অন্যন্য দলের প্রার্থী থাকলেও আলোচনায় এখন বড় দুই দল ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগ ও বিএনপির প্রার্থীরা। জেলার ছয়টি আসন ধরে রাখতে দৌড়ঝাঁপে পিছিয়ে নেই ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগ।
এদিকে বিরোধীদল বিএনপির নির্বাচনকে ঘিরে ঘোর প্রস্তুতি না দেখা গেলেও কেন্দ্রীয় কমিটির সিগন্যাল পেলেই তারা মাঠে নামবে বলে আশা করা যায়। জেলার ছয় আসনের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ একটি আসন কিশোরগঞ্জ-২ (কটিয়াদী-পাকুন্দিয়া)। ২০০৮ সালের আগে পর্যন্ত কিশোরগঞ্জে ৭ টি নির্বাচনী আসন ছিলো। শুধুমাত্র কটিয়াদী উপজেলা নিয়ে একক আসন ছিলো এটি। তৎকালীন হোসেনপুর এবং পাকুন্দিয়া দুই উপজেলা মিলে ছিলো কিশোরগঞ্জ-১ আসন। এবং কটিয়াদী উপজেলা নিয়ে গঠিত ছিলো কিশোরগঞ্জ-২ আসন। ২০০৮ সালের সংসদ নির্বাচনের পূর্বে কিশোরগঞ্জে ৭ টি আসনের পরিবর্তে ৬টি সংসদীয় আসনে রূপান্তর করা হয়।
যেখানে পাকুন্দিয়া-হোসেনপুর আসনকে পৃথক করে হোসেনপুরকে কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার সাথে সংযুক্ত করে কিশোরগঞ্জ-১ আসন এবং পাকুন্দিয়া উপজেলাকে কটিয়াদী উপজেলার সাথে সংযুক্ত করে কিশোরগঞ্জ-২ আসন গঠন করা হয়।
২০০৮ সালের পর কিশোরগঞ্জ-২ আসনটির সাথে পাকুন্দিয়া উপজেলা সংযুক্তির পর এ আসনে নিজেদের আধিপত্য দেখিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগ। ২০০৮ সালে আওয়ামীলীগের টিকিটে এই আসন থেকে সাংসদ নির্বাচিত হন মরহুম ডা. এম এ মান্নান। পরবর্তীতে ২০১৪ সালে এই আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এডভোকেট সোহরাব উদ্দিন।
সর্বশেষ ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের মনোনয়নে এই আসন থেকে সাবেক আইজিপি,রাষ্ট্রদূত ও সচিব নূর মোহাম্মদ নির্বাচিত হয়ে দলের ধারাবাহিকতা বজায় রাখেন। ফলে পুনরায় আসনটি ধরে রাখতে সর্বাত্মক চেষ্টা করবে ক্ষমতাসীনরা। আসনটিকে ঘিরে চলছে নানা আলোচনা। আসনটি পেতে ইতোমধ্যেই এলাকায় যোগাযোগ বাড়িয়ে দিয়ে গণসংযোগ করছেন প্রার্থীরা। বিভিন্ন সামাজিক কাজের সাথেও নিজেদের সম্পৃক্ত করে প্রার্থীতা জানান দিচ্ছেন তারা। ক্ষমতাসীন দলের অনেকের নাম শোনা গেলেও এই আসনে এখন পর্যন্ত আলোচনার শীর্ষে রয়েছেন বর্তমান সাংসদ নূর মোহাম্মদ। ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি এই আসনে আওয়ামীলীগের টিকিটে এমপি নির্বাচিত হন। এলাকার বেশকিছু উন্নয়ন কাজের জন্য প্রশংসিত হয়েছেন তিনি। ফলে তার কর্মী সমর্থকদের দাবি আগামীতেও এই আসনে অধিষ্ঠিত থাকবেন বর্তমান সাংসদ নূর মোহাম্মদ। এই আসনটিতে নূর মোহাম্মদের অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে শোনা যাচ্ছে সাবেক সাংসদ ও পাকুন্দিয়া উপজেলা আওয়ামীলীগের আহবায়ক এডভোকেট সোহরাব উদ্দিনের নাম। ২০১৪ সালে তিনি আওয়ামীলীগ থেকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সাংসদ নির্বাচিত হয়ে কটিয়াদী-পাকুন্দিয়া এলাকায় একাধিক রাস্তাঘাট,সেতু-কালবার্ট নির্মান করেছেন। ফলে আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সোহরাব উদ্দিনের যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে বলেও দাবী করছেন অনেকে।
বর্তমান ও সাবেক এমপির আলোচনা ছাপিয়েও আসনটি পেতে মরিয়া চেষ্টা করছেন আরোও একাধিক প্রার্থী। ফলে ইতোমধ্যেই আলোচনায় আসতে নিজেদের নির্বাচনী এলাকায় ব্যাপক যোগাযোগ রাখছেন প্রার্থীরা। ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দৌড়ে নাম লেখাতে পারেন অনেকেই।
যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য নাম হলো; কিশোরগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট এম এ আফজাল,আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালের অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল,বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট প্রসিকিউটর ও বাংলাদেশ বার কাউন্সিল এক্সিকিউটিভ কমিটির চেয়ারম্যান এডভোকেট মোখলেসুর রহমান বাদল,
বঙ্গবন্ধু হত্যামামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা,বাংলাদেশ পুলিশের সাবেক ডিআইজি বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল কাহার আকন্দ,সাবেক ব্যাংক কর্মকর্তা দেলোয়ার হোসেন এফসিএম,পাকুন্দিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম রেনু প্রমুখ নেতারা।
এদিকে বিরোধীদল হিসেবে ভোটের মাঠে উত্তাপ না ছড়ালেও আলোচনায় রয়েছেন বিএনপির একাধিক প্রার্থী। দলের সিদ্ধান্তের উপর নির্ভর করছে তাদের পরবর্তী নির্বাচনী কার্যক্রম। তবে এই তালিকায় শোনা যাচ্ছে অনেকের নাম। আসনটিতে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি থেকে ১৯৯১ এবং ১৯৯৬ সালে টানা দুইবার সাংসদ নির্বাচিত হন মেজর (অবঃ) আক্তারুজ্জামান রঞ্জন। বর্তমানে তিনি দলের বহিস্কৃত নেতা। তবে তার উপর থেকে বহিস্কার আদেশ প্রত্যাহার হলে তিনি এই আসনে প্রার্থী হবেন বলে শোনা যাচ্ছে। এই আসনে বিএনপির অন্যন্য সম্ভাব্য প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছেন কিশোরগঞ্জ জেলা বিএনপির সহ সভাপতি রুহুল আমিন আকিল,বিশিষ্ট শিল্পপতি ও আহমেদ এন্ড কোম্পানির কর্ণধার আশফাক আহমেদ (জুন),সুইডেন প্রবাসী বিএনপি নেতা শহিদুজ্জামান কাকন,পাকুন্দিয়া উপজেলা বিএনপির আহবায়ক ও পাকুন্দিয়া পৌরসভার সাবেক মেয়র এডভোকেট জালাল উদ্দিন প্রমুখ।
বড় দুই দলের লড়াইয়ের পাশাপাশি এই আসনটিতে জাতীয় পার্টি থেকে আলোচনায় রয়েছেন জেলা জাতীয় পার্টির সদস্য এডভোকেট জাহাঙ্গীর আলম শওকত,জেলা কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) থেকে আব্দুর রহমান (রুমী) অন্যন্য রাজনৈতিক দলের প্রার্থীদের আনাগোনা শোনা যাচ্ছে।
এদিকে আওয়ামীপন্থী স্থানীয় নেতাদের মতামত জানতে চাইলে তারা বলেন,আগামী নির্বাচন হবে একটি চ্যালেঞ্জিং নির্বাচন। যেখানে দলের একটি কার্যকর সিদ্ধান্তের উপর নির্ভর করবে কে হবেন আসনটির অভিবাবক? তাদের অভিমত প্রধানমন্ত্রী যাকে যোগ্য মনে করবেন তাকেই এই আসনটিতে মনোনয়ন দিবেন এবং দলের ধারাবাহিকতা বজায় রাখবেন।
স্থানীয় একাধিক বিএনপি নেতাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ একটি নির্বাচন এখন আলোচ্চ বিষয়। কেন্দ্রের সিদ্ধান্তের উপর নির্ভর করবে তাদের থাকা না থাকা। তবে দলীয়ভাবে আসনটি পুনরুদ্ধার করতে তৎপর থাকবে তারা। ফলে তারা আশাবাদী আসন্ন নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ এই আসনটিতে প্রার্থী যাচাইয়ে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে দল। এবং প্রার্থীতা যাচাইয়ে দলের দুর্দিনের প্রার্থীদের মূল্যায়ন করবে বলেও আশাবাদী স্থানীয় পর্যায়ের নেতারা।