তাসলিমুল হাসান সিয়াম, গাইবান্ধা প্রতিনিধি:গাইবান্ধায় চলতি বোরো মৌসুমে ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। ফলন ভালো হলেও কৃষকদের মুখে হতাশার ছাপ। কৃষি শ্রমিকের মজুরি দ্বিগুণ ও সময় মতো শ্রমিক না পাওয়াসহ সেচ পাম্প মালিক ও পাওয়ার টিলার মালিকদের বেঁধে দেওয়া অতিরিক্ত ভাড়ার চাপে কৃষকের চোখে মুখে এখন হতাশার ছাপ। এ ছাড়াও দীর্ঘ খড়ার পর সামনে কালবৈশাখী ঝড় ও শীলাবৃষ্টির আশঙ্কার কথা জানান দিচ্ছে আবহাওয়া অধিদফতর।
ধান কাটার উপযুক্ত সময় হলেও পর্যাপ্ত কৃষি শ্রমিক না থাকায় ধান ঘরে ওঠানো নিয়ে বেশ ভয়ের মধ্যে আছেন কৃষকরা। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে গাইবান্ধা জেলার বিভিন্ন উপজেলায় শ্রমিক সংকট রয়েছে ।ধান চাষীরা জানান একটি এলাকায় গুটিকয়েক শ্রমিক পুরো এলাকার ধান কাটার কাজ করছে তাই তাদের কাছ থেকে অগ্রীম সিরিয়াল নিতে হচ্ছে ।
হঠাৎ শিলাবৃষ্টি কিংবা কালবৈশাখী শুরু হলে ধানের যে ক্ষতি হবে তা বলা বাহুল্য। গাইবান্ধা সদর উপজেলার রামচন্দ্রপুর ইউনিয়নের আরিফখা বাসুদেবপুর গ্রামের ধানকাটা শ্রমিক ইসলাম সরকার বলেন, ‘ধানকাটা শ্রমিকরা পেশা বদল করায় শ্রমিক-সঙ্কট দেখা দিয়েছে। এ ছাড়া একই সময়ে ধান কাটা শুরু হয়। তাই শ্রমিকের চাহিদা বেশি থাকে। কৃষি শ্রমিক মামুন মিয়া বলেন , ‘আমি আগে ধান কাটাসহ বিভিন্ন কাজ করতাম। এখন ধান কাটার কাজে অনেক কষ্ট। অটোরিকশা চালানো সহজ। এ ছাড়া আয়ও বেশি।’
পলাশবাড়ী উপজেলার মনোহরপুর ইউনিয়নের কৃষক মাজেদুল ইসলাম বলেন, ‘আমি চার বিঘা জমিতে ,জিরাশাইল ধান আবাদ করেছিলাম। এখনো পর্যন্ত এক বিঘা জমির ধান ঘরে তুলতে পারিনি। এর মধ্যে কালবৈশাখী কিংবা শিলাবৃষ্টি হলে আমি নিঃস্ব হয়ে যাব। ধারকর্জ করে , সার কিনে ফসল বুনেছি। কৃষি শ্রমিক সঙ্কট ও মজুরি বৃদ্ধির কারণে ধান ঘরে তুলতে না পাড়লে অপূরণীয় ক্ষতি হবে। ঘোড়াবান্দা গ্রামের কৃষক আশরাফ মিয়া বলেন, ‘প্রায় এক একর জমিতে ধান রোপণ করেছিলাম। অতিরিক্ত মূল্য দিয়েও ধান কাটার জন্য কোনো শ্রমিক পাচ্ছি না ।
আরিফখা বাসুদেবপুর গ্রামের কৃষক রশিদুল ইসলাম বলেন, আকাশের গর্জন শুনলেই ভয়ে বুকটা কেঁপে ওঠে- এই বুঝি শিলাবৃষ্টি শুরু হবে! জমিতে পাকা ধান অথচ কৃষি শ্রমিক সঙ্কটে ধান কাটতে পারছি না। হারভেস্টার মেশিন দিয়ে কেন ধান কাটছেন না- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমাদের এলাকায় ধানকাটার মেশিন কম। তিনি আরো বলেন, আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে ও সময় মতো কৃষি শ্রমিক পাওয়া গেলে আশা করা যাচ্ছে দুই-এক সপ্তাহের মধ্যে সব বোরো ধান কেটে ও মাড়াই করে সুষ্ঠুভাবে ঘরে তুলতে পারবেন কৃষকরা।
।
উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল মোমিন বলেন, কৃষি শ্রমিকের বিকল্প কম্বাই-হারভেস্টার মেশিন। কিন্তু সব কৃষক একই জাতের ধান না লাগানোয় এই মেশিন তেমন কোনো কাজে আসছে না।
পলাশবাড়ী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ফাতেমা কায়সার মিশু বলেন, শ্রমিক সঙ্কটের বিষয়টি শুনেছি। কৃষি বিভাগ উপজেলায় ইতোমধ্যে ১০টি হারভেস্টার মেশিন বিতরণ করেছে। হারভেস্টার মেশিন দিয়ে কৃষকরা ধান কেটে নিতে পারবেন। সমলয় প্রকল্পের আওতায় কৃষকদের ক্ষেতের ধান কেটে দেয়ার কথা থাকলেও হারভেস্টার মেশিন দিয়ে ধান কাটছে না কেন- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কোনো কৃষক ধান কেটে না নিলে আমাদের কী করার আছে?
উল্লেখ্য, চলতি মৌসুমে গাইবান্ধায় বোরো অর্জন হয়েছে এক লাখ ২৮ হাজার ২০৫ হেক্টর জমিতে। এ থেকে প্রায় ১০ লাখ মেট্রিক টন ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।