মিয়া মোহাম্মদ ছিদ্দিক, কটিয়াদী(কিশোরগঞ্জ)প্রতিনিধিঃ
কার্যাদেশ পাওয়ার এক বছরের মধ্যে রাস্তাটির নির্মাণ কাজ শেষ করার শর্ত থাকলেও নির্ধারিত সময়ের সাড়ে তিন বছর পরও শেষ হয়নি কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী উপজেলার মানিকখালী জেসি হতে চরিয়াকোনা-শিবনাথ সাহার বাজার ভায়া মাগুরা রাস্তাটি। র্বতমানে বন্ধ রয়েছে নির্মাণ কাজ। এতে করে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন উপজেলার ১৫ গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ।
জানা গেছে,ময়মনসিংহ অঞ্চলের পল্লী অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় উপজেলার মানিকখালী জেসি হতে চরিয়াকোনা-শিবনাথ সাহার বাজার ভায়া মাগুরা পর্যন্ত প্রায় ৭ কিলোমিটার রাস্তা নির্মাণে প্রাক্কলন ব্যয় ধরা হয়েছিল ৬ কোটি ৬৫ লাখ টাকা। মের্সাস ডলি কনষ্ট্রাকশান নামে ঢাকার একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজটি পায়। রাস্তাটি নির্মাণের জন্য প্রতিষ্ঠানটিকে ২০১৮ সালের নভেম্বরে কার্যাদেশ দেওয়া হয়। শর্তানুযায়ী ২০১৯ সালের ১৩ নভেম্বর কাজ সমাপ্ত হওয়ার কথা ছিল। প্রতিষ্ঠানটি যথাসময়ে কাজ শুরু করলেও তা শেষ করেনি। রাস্তার আংশিক কাজ করে একটি চলতিবিল (আংশিক) উঠিয়ে নেয় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। স্থানীয় সরকার প্রকৌশলী অধিদপ্তরের প্রতিবেদন অনুযায়ী, এ পর্যন্ত ওই সড়কের কাজ হয়েছে ৩৫ শতাংশ।
স্থানীয়রা জানান, দেশ স্বাধীনের আগে থেকেই এ সড়কটি কাঁচা। দীর্ঘদিন ধরে সড়কটি পাকা করার জন্য আবেদন জানালে কাজ শুরু হওয়ায় আমরা খুশি হয়েছিলাম। কিন্তু রাস্তাটি খোঁড়াখুঁড়ি পর বন্ধ রয়েছে কাজ। দীর্ঘদিন ধরে রাস্তাটি খুঁড়ে ফেলে রাখায় তৈরি হয়েছে অসংখ্য ছোট-বড় গর্ত ও খানাখন্দের। বর্তমানে ওই রাস্তা হেঁটে চলাচলেরও অনুপোযোগী হয়ে পড়েছে। এখন মনে হচ্ছে, আগের কাঁচা রাস্তাই ভালো ছিল।
স্থানীয় বাসিন্দা অ্যাডভোকেট সোহেল আবেদীন রানা বলেন,রাস্তার নির্মাণ কাজ যথাসময়ে শুরু হলেও শুধুমাত্র মাটি খুঁড়ে কাজ বন্ধ হয়ে যায়। এতে এলাকাবাসী পড়েছে মহাবিপাকে। গ্রীষ্মকালে যেমন তেমন, কিন্তু বর্ষাকালে পরিস্থিতি আরও ভয়ানক হয়। বৃষ্টির পানি জমে হাঁটু পর্যন্ত কাদা তৈরি হয়,যার উপর দিয়ে যাতায়াত করতে মানুষকে অবর্ণনীয় দুর্ভোগের শিকার হতে হয়। রাস্তাটি উপজেলার একটি বিস্তীর্ণ অঞ্চলের জীবন-রেখা। রাস্তার নির্মাণ কাজ শেষ করার জন্য বেশ কয়েকবার মানববন্ধনও করেছে এলাকাবাসী । জনদুর্ভোগ লাঘব করতে জরুরী ভিত্তিতে রস্তিাটি দ্রুত নির্মাণের দাবি জানান তিনি।
মুমুরদিয়া ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য সামসুদ্দিন ভূইয়া বলেন,কমরভোগ,মাগুরা,চাড়িয়া,ভাংনাদী, কুড়িখাই,জোয়ারিয়াসহ ১৫ গ্রামের মানুষ নিত্য যাতায়াত করে এই রাস্তা দিয়ে। বর্তমানে রাস্তার দুরবস্থার কারণে অনেক কষ্টে,ঘুরপথে এলাকার শিক্ষার্থীসহ সকলকে যাতায়াত করতে হয়। গ্রামের অসুস্থ মানুষকে হাসপাতালে নেওয়ার দরকার হলে সমস্যায় পড়েন তারা। আর প্রসূতি মা’দের নিয়ে সমস্যা আরও জটিল। ভাঙাচোরা,ছোট-বড় অসংখ্য গর্ত ও খানাখন্দে ভরা এই রাস্তায় প্রতিনিয়ত বাড়ছে দুর্ঘটনার ঝুঁকি। একই সঙ্গে বাড়ছে মানুষের ভোগান্তি।
এ বিষয়ে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ডলি কনষ্ট্রাকশানের বক্তব্য জানতে অফিসিয়াল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করলে কেউ ফোন রিসিভ করেনি।
উপজেলা প্রকৌশলী অন্তু বল জানান,ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান কাজ সমাপ্ত না করায় কার্যাদেশ বাতিল করা হয়েছে। যেহেতু নির্মাণ সামগ্রীর মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে তাই প্রকল্পটি সংশোধন করে অবশিষ্ট কাজের প্রক্কালন তৈরী করে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট প্রেরণ করা হয়েছে। অনুমোদন হলে রাস্তাটি নির্মাণ করা হবে।
কিশোরগঞ্জ এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আমিরুল ইসলাম বলেন,ডলি কনষ্ট্রাকশান জেলার বিভিন্ন উপজেলায় কাজ নিলেও কোন কাজই শতভাগ সম্পন্ন করেনি। এ ব্যাপারে কয়েক বার নোটিশ করেও কোন উত্তর পাওয়া যায়নি। তাই উক্ত প্রতিষ্ঠানের ঠিকাদারী লাইসেন্স বাতিলসহ জরিমানা করা হয়েছে। প্রকল্পটির অবশিষ্ট কাজের প্রক্কালন অনুমোদনের জন্য প্রকল্প পরিচালকের দপ্তরে প্রেরণ করা হয়েছে,অনুমোদন পেলে দরপত্র আহ্বান করে দ্রুত কাজটি বাস্তবায়ন করা হবে।
মিয়া মোহাম্মদ ছিদ্দিক
কটিয়াদী(কিশোরগঞ্জ)প্রতিনিধিঃ
তারিখঃ ১০-০৪-২০২৩ইং