নীলফামারীতে ৫ম শ্রেনীর ছাত্রী রোজিনা আক্তারকে (১৩) ধর্ষন করে হত্যা করার ৩ মাস পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত কোন বিচার পায়নি তার পরিবার। এদিকে ধর্ষন ও হত্যাকান্ডের সাথে জড়িতরা এলাকায় সাহস নিয়ে ঘুরছে বলেও অভিযোগ ভূক্তোভুগী পরিবার সহ এলাকাবাসীর। ঘটনাটি ১২ ডিসেম্বর ২২ ইং তারিখ সোমবার সন্ধ্যায় সদর টুপামারী ইউনিয়নের মোড়লের ডাঙ্গা পাঠানপাড়া এলাকায় ঘটেছে। রোজিনা আক্তার ওই এলাকার মোঃ রবিউল ইসলামের মেয়ে ও আফাজ উদ্দিন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্রী।
ঘটনার পর ১৫ ডিসেম্বর সদর থানায় ধর্না দিয়েও মেয়ে হত্যার এজাহার দাখিল করতে না পারায় রোজিনার পিতা মোঃ রবিউল ইসলাম গত ২৮/০২/২৩ ইং তারিখে বাদি হয়ে আদালতে একই এলাকার সাইফুল ইসলামের ছেলে মোঃ হাবিবুর রহমান(১৮), আইনুল ইসলামের ছেলে ইয়ামিন হোসেন (১৯) ও আলীর স্ত্রী মোছাঃ শাহানাজের (২৫) বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। যার মিস পিটিশন মামলা নং- ০৩/২০২৩। আদালত সার্বিক পর্যালোচনা করে মামলাটি এজাহার হিসেবে গণ্য করে ফৌজদারী কার্যবিধির ১৭৩ ধারামতে তদন্ত পূর্বক প্রতিবেদন দাখিলের আদেশ দেন সদর থানাকে।
এজাহার সুত্রে জানা যায়, এলাকার বখাটে মোঃ হাবিবুর রহমান রোজিনাকে প্রায় সময় প্রেম নিবেদন সহ বিভিন্ন ভাবে উত্যক্ত করেন এবং একাধিক প্রেমপত্র দেয়। বিষয়টি রোজিনা তার পিতা-মাতাকে জানালে ছেলের বাবা সাইফুল ইসলামকে জানান এবং তার ছেলেকে শাসন করতে বলেন। কিন্তু সাইফুল ইসলাম তাদের কথায় কোন গুরুত্ব না দিয়ে ধমক দিয়ে বলেন মেয়েকে সাবধানে রাখতে। সে সময় রোজিনার বার্ষিক পরীক্ষা হওয়ায় বাড়ীতে পরীক্ষার প্রস্তুতি ও পড়াশুনা করছিলো। হাবিবুর রহমান ও ইয়ামিন হোসেনের কু-প্রস্তাবে সাড়া না দেওয়ায় তারা রোজিনার সর্বনাশ করার জন্য সুযোগ খুঁজতে থাকেন। এমতাবস্থায় গত ১২/১২/২০২২ ইং সোমবার সন্ধ্যায় বাড়ী ফাঁকা পেয়ে রোজিনার ঘরে প্রবেশ করে ওড়না দ্বারা মুখ বেঁধে বিছানায় ফেলে পড়নের পায়জামা খুলে উভয়ে পালাক্রমে জোর পূর্বক ধর্ষন করেন এবং তার বুকে কামড় দিয়ে দাঁত বসিয়ে দেয়। ধর্ষনের ফলে রোজিনা আক্তার অজ্ঞান হয়ে য়ায় এবং তাকে মৃত ভেবে ঘটনা ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার জন্য ঘরের তীরে রোজিনার গলায় ওড়না দিয়ে ফাঁস লাগিয়ে দরজা খোলা রেখে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়।
রোজিনার মা নাসিমা খাতুন বলেন, আমি বাজারে খরচ করার জন্য যাই। বাড়ী ফিরে দেখি দুজন বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে। তারমধ্যে হাবিবুর রহমানকে চিনতে পারি আর একজনকে চিনতে পারি নাই। বাড়ির ভেতরে যেয়ে দেখি রোজিনার ঘরের দরজা খোলা। ঘরের তীরে মেয়ে ঝুলানো অবস্থায় আছে। তখন আমি চিৎকার করে অজ্ঞান হয়ে পড়ে যাই। আমার চিৎকার শুনে প্রতিবেশি সবাই এগিয়ে আসে। আমরা গরীব মানুষ বলে মেয়ে হত্যার বিচার কি পাব না?
পিতা মোঃ রবিউল ইসলাম বলেন, আমি সংবাদ পেয়ে বাড়ি ছুটে যাই। মেয়েকে বাঁচানোর জন্য দ্রুত অটোযোগে নীলফামারী সদর জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যাই। ডাক্তার দেখে তাকে মৃত ঘোষনা করেন। তারপর আমি নীলফামারী থানায় ১৫ ডিসেম্বর মামলা দিতে গেলে থানায় এজাহার গ্রহন করেন নাই। তাই আমি নিরুপায় হয়ে আদালতে মামলা করি। আমার মেয়ের হত্যার বিচার চাই যেন আমার মেয়ের মত অন্য কার সন্তানের জীবন এভাবে চলে না যায়।
এলাকার নাজমিনা বেগম বলেন, হাসপাতালে তদন্ত করার সময় আমি পুলিশের সাথে ছিলাম। রোজিনার বুকে দাঁতের দাগ ও জরায়ুর মুখে রক্ত পাওয়া যায়। অবশ্যই রোজিনাকে ধর্ষণ করে হত্যা করা হয়েছে। মামলা হওয়ার এতোদিন হয়ে গেলো কিন্তু কোন বিচার পায়নি পরিবারটি। অথচ ধর্ষক বুক ফুলিয়ে এলাকায় ঘুরে বেরাচ্ছে। আমরা এলাকাবাসী দ্রুত বিচার চাই।
আফাজ উদ্দিন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোছাঃ জোৎনা বেগম বলেন, রোজিনার আচার ব্যাবহার অনেক ভালো ছিলো।তার সাথে এমন ঘটনা ঘটবে আমরা কল্পনা করতে পারিনি।যারা এই ধর্ষণ ও হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত তাদের দ্রুত বিচার করা হোক। যাতে আর কেউ এমন কাজ করতে সাহস না পায়।
জানতে চাইলে নীলফামারীর সদর থানার অফিসার ইনর্চাজ মুক্তারুল আলম (ভারপ্রাপ্ত) বলেন, আদালতের আদেশ পেয়েছি। তদন্ত করে প্রতিবেদ দেওয়া হবে।
সোহাগ ইসলাম/নীলফামারী