তানভীর আহমেদ: সুনামগঞ্জ:
সোহেল মিয়া (৪৭), পেশায় দিনমজুর। সারাদিন কাজ করে যা উপার্জন করেন, তা দিয়েই অভাবের সংসার চলে তার। ১ম রমজানে সেহেরি খাওয়ার জন্য বাজারে এসেছেন মুরগি নিতে। দোকানে গিয়ে মুরগির দাম শুনেই মাথায় হাত পড়ে সোহেল মিয়ার। বাজারে প্রতিকেজি মুরগি খুচরা বিক্রি হচ্ছে ২৪০ থেকে ২৫০ টাকা। গত একমাসের ব্যবধানে দাম বেড়েছে ১০০ টাকারও বেশি।
সোহেল মিয়া বলেন, ‘আগে মুরগির দামডা কম আছিল। প্রতি সপ্তাহে কিইন্যা খাইবার পাইছি। অহন তো দাম খালি বাইড়াই যাইতাছে। চাল কিনলে মুরগি কিনবার পাই না, মুরগি কিনলে চাল কিনবার পাই না। পুলাপান তো হেইডা বুঝে না। মাসেও একবার কিনবার পারি না। বেশকিছু দিন আগেও গরুর মাংস কিনতে না পারলে একটা মুরগি কিনে বাড়ি ফিরতাম। দাম কম ছিল বলে গরুর মাংসের বদলে মুরগিই ছিল গরিবের একমাত্র ভরসা। মুরগি বাড়িতে নিলে ছেলে-মেয়েরাও বেশ খুশি হয়। পরিবারে দুইটা ছেলে ও একটা মেয়ে আছে। তারা মাংস খুব পছন্দ করে। আগে ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা হলেই একটা মুরগি নিতে পারতাম। এখন এক কেজির দাম ২৫০ টাকা।’
আরেক ক্রেতা জসীম মিয়া বলেন, ‘দাম বাড়ায় আগে যে মুরগিটা কিনতে ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা লাগতো, এখন ওই মুরগি কিনতে ৫০০ থেকে ৫৫০ টাকা লাগে। গরুর মাংস, হাঁস, সোনালি কক, কোয়েল পাখিসহ সবধরনের মাংস গরিবের জন্য বিলাসিতা। তাই আমাদের মতো গরিব মানুষেরা এখন আর মাংস খাওয়ার সাহস করতে পারি না। যে হারে মাংসের দাম বেড়েছে, তাতে বুঝাই যাচ্ছে মাংস এখন আর গরিব মানুষের খাবার নয়। চাইলেই গরিব মানুষেরা মাংস খেতে পারবে না।’
খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এতটা বাড়তি দামে ব্রয়লার মুরগি কখনো বিক্রি হয়নি। তবে শুধু ব্রয়লারের ক্ষেত্রেই নয়, বরং বাজারে বেড়েছে সোনালি মুরগির দামও। পাশাপাশি চাল, ডাল, আটা, ময়দা ও সয়াবিনসহ অন্যান্য নিত্যপণ্যের দামও বেড়েছে।
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, এক মাসের ব্যবধানে ব্রয়লার মুরগির দাম বেড়েছে একশো টাকারও বেশি। সোনালি মুরগির দাম কেজিতে বেড়েছে ৪০ থেকে ৫০ টাকার মতো। বিক্রি হচ্ছে প্রতিকেজি ৩১০ থেকে ৩৩০ টাকায়। পাশাপাশি দেশি মুরগি মাঝারি সাইজের বিক্রি হচ্ছে প্রতি পিস ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকায়।
প্রতিনিয়ত মুরগির এই দাম বৃদ্ধির কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে খুচরা বিক্রেতারা জানান, পোলট্রি খাদ্য, বাচ্চা, ওষুধসহ সবকিছুর দাম বেড়ে গেছে। তাই ব্রয়লার মুরগির দাম বেড়েছে।
সাধারণ ভোক্তারা বলছেন, বাজারে ‘সস্তা মাংস’ বলে পরিচিত ছিল ব্রয়লার মুরগি। রমজানে অন্যান্য মাসের তুলনায় মাংসের চাহিদা থাকে বেশি। তবে এই সস্তা মুরগি এখন সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে। রমজানের আগে মাংসের এমন দাম বৃদ্ধিতে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন সাধারণ ভোক্তারা।
ভাটি তাহিরপুর গ্রামের আব্দুল বারিক মিয়া বলেন, ‘রাতে সেহেরি খাবো, ভাবলাম মাছের সাথে একটা মুরগি নিবো। দোকানে গেলাম, দাম শুনে মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়লো। আগে যেই মুরগি ৩০০ টাকায় নিতে পারতাম, এখন সেই মুরগি ৫০০ টাকার বেশি লাগছে।’
আনোয়ারপুর বাজারে মুরগি নিতে আসা সাইদুর রহমান বলেন, ‘ব্রয়লার মুরগির দাম যে হারে বেড়েছে, ক্রয়ক্ষমতা সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। এমনিতেই রুজিরোজগার নাই, সব জিনিসপত্রের দাম শুধু বাড়ছে। কেমনে পরিবার চলবে?’