তানভীর আহমেদ:
নির্ধারিত সময়ের মধ্যে শেষ হয়নি সুনামগঞ্জের তাহিরপুরে ফসলরক্ষা বাঁধের কাজ। কাজের বিনিময়ে টাকা (কাবিটা) আওতায় গেল বছরের ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে নির্মাণ কাজ শুরু করে চলতি বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে এসব বাঁধ তৈরির কাজ শতভাগ শেষ করার কথা। কিন্তু ৪ মার্চ (শনিবার) সকাল পর্যন্ত এসব বাঁধের মাত্র ৬০-৬৫ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। যদিও প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, ২৮ ফেব্রুয়ারীর মধ্যে ৭০ ভাগ কাজ সম্পন্ন হয়েছে এবং ৭ মার্চের মধ্যে সবক’টি বাঁধের মাটি ভরাটের কাজ শেষ হবে।
তবে স্থানীয় লোকজনের দাবি, এই পর্যন্ত ৬০ থেকে ৬৫ ভাগ কাজ হয়েছে। অনেক বাঁধে এখনো মাটির কাজই শেষ হয়নি। নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ না হওয়ায় আগাম পাহাড়ি ঢলে ফসল রক্ষাবাঁধ ভেঙে বোরো ফসলের ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, হাওরের গুরুত্বপূর্ণ অনেক বাঁধের কাজে ঢিলেমি লক্ষ করা গেছে। বাঁধের কাজে ঢিলেমিতে অসন্তুষ্ট ‘হাওর বাঁচাও আন্দোলন’-এর নেতারাও। তারা বলছেন, পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) বরাবরই নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ করে না। ফলে এই নিয়ে লাখ লাখ কৃষক উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা ও আতঙ্ক থাকে। সেইসঙ্গে ঝুঁকিতে থাকে হাওরাঞ্চলের বোরো ফসল।
এদিকে, শুক্রবার (৩মার্চ) সকাল ১১টায় ফসলরক্ষা বাঁধের নির্মাণ কাজে অনিয়ম ও কাজ চলমান না থাকায় মহালিয়া হাওরের ১৬ ও ১৯ নম্বর প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি (পিআইসি)-এর সভাপতি ফজলুল হক ও মোসাহিদকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্দেশে আটক করা হয়েছে। পরে আগামী ৬ মার্চের মধ্যে বাঁধের কাজ শেষ করবেন মর্মে মুচলেকা দেন আটকরা। দুইজনকে এক হাজার টাকা করে দুই হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে। ঐদিন রাতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুপ্রভাত চাকমা নিজ কার্যালয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে জরিমানা ও মুচলেকার এ রায় দেন।
তাহিরপুরের টাঙ্গুয়ার হাওর পাড়ের কৃষক নাজমুল ইসলাম বলেন, ‘এখনো বাঁধ নির্মাণ কাজ শেষ হয়নি। আমরা খুবই চিন্তায় আছি আগাম বন্যার আশঙ্কায়। সরকার প্রতিবছর বাঁধ নির্মাণ ও মেরামতের জন্য কোটি কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়। কিন্তু ঠিকমতো কাজ হয় না।’ তিনি বলেন, ‘বাঁধের কাজ তো শেষ হয়ইনি। উল্টো বাঁধের নামে এখানকার পরিবেশ নষ্ট করা হচ্ছে। বাঁধ নির্মাণের নামে এক্সভেটরের তাণ্ডবে ধ্বংস হচ্ছে প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন টাঙ্গুয়ার হাওর। হাওর সংলগ্ন পাটলাই নদীর পাড় কেটে নিয়মনীতি লঙ্ঘন করে মাটি তোলায় নদী ও নদীর পাড়ের গাছগুলো হুমকিতে পড়েছে।’
শনি হাওরের কৃষক রিপন মিয়া বলেন, ‘সারাবছর কষ্ট করে জমিতে ফসল ফলাই। সেই ফসলগুলো যদি অকাল বন্যায় তলিয়ে যায়, তাহলে তো মাথায় হাত পড়বে আমাদের। তখন কিন্তু না খেয়ে মরতে হবে। তাই বলছি দ্রুত হাওরের ফসলরক্ষা বাঁধের কাজ শেষ করে আমাদের ফসলগুলো নিরাপদ করুন।’
উপজেলার মাতিয়ান হাওরের কৃষক রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘যত দ্রুত সম্ভব, বাঁধের কাজ শেষ করা প্রয়োজন। বৃষ্টিপাতের দিন আসছে, বৃষ্টি হলে তো পরে বাঁধ মজবুত হবে না। ফসলরক্ষা করার কথা মাথায় রেখে দ্রুত বাঁধের কাজ শেষ করার দাবি জানাই।’
সংশ্লিষ্টরা জানান, চলতি বছরে তাহিরপুর উপজেলায় ১১০টি পিআইসি গঠন করা হয়েছে। এসব প্রকল্পে প্রাক্কলন ব্যয় ধরা হয়েছে ২০ কোটি টাকা।
তাহিরপুর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন ও মনিটরিং কমিটির সদস্য সচিব ও পাউবোর উপ-সহকারী প্রকৌশলী শওকত উজ্জামান বলেন, ‘২৮ ফেব্রুয়ারি বিকেল পর্যন্ত ৭০ ভাগ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। আশা করছি, ৭ মার্চের মধ্যেই প্রতিটি বাঁধে মাটি ভরাটের কাজ শেষ হবে।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং প্রকল্প বাস্তবায়ন ও মনিটরিং কমিটির সভাপতি সুপ্রভাত চাকমা’র সঙ্গে একাধিকবার মুঠোফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।