মিয়া মোহাম্মদ ছিদ্দিক, কটিয়াদী (কিশোরগঞ্জ) প্রতিনিধিঃ দুই সপ্তাহের মধ্যে দাম বেড়েছে প্রায় তিনগুন। আর কাঁচা মরিচের দাম বেড়ে যাওয়ায় হাসি ফুটেছে কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী উপজেলার মরিচ চাষিদের মুখে। এদিকে বেশি দামে মরিচ বিক্রি করে চাষিরা খুশি হলেও সন্তুষ্ট নন ক্রেতারা। কাঁচা মরিচ নিত্য প্রয়োজনীয় হওয়ায় মানুষ বাধ্য হয়েই বেশি দামে কিনতে হচ্ছে ক্রেতাদের। মুনাফা বেশি পাচ্ছেন চাষিরা। ভারী বৃষ্টি আর প্রচন্ড শীতে উপজেলার প্রতিটি এলাকায় মরিচ ক্ষেত পানিতে ডুবে এবং কুয়াশায় নষ্ট হয়ে যাওয়ার ফলে বাজারে মরিচের যোগান অনেকটাই কম এবং মরিচের উৎপাদন কমে গেছে। তুলনামূলক উঁচু অঞ্চলের মরিচ ক্ষেতে এখনো মরিচ সংগ্রহ করছেন চাষিরা। উপজেলার সব এলাকায় কাঁচা মরিচের চাষাবাদ কিছুটা বেশি। তবে সব থেকে বেশি চাষাবাদ হয় চরাঞ্চলে।
চাষি,ক্রেতা ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়,এক সপ্তাহ আগেও কটিয়াদী বিভিন্ন হাটবাজারে যে মরিচ ৫০ থেকে ৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছিল সেই মরিচ বর্তমানে ১০০ থেকে ১৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।বর্ষাকালে বাজারজাত করতে চরাঞ্চলের চাষিরা উঁচু জমিতে চৈত্র মাসে জমি তৈরি করে মরিচের চারা রোপণ করেন। এরপর নিড়ানি,সেচ,সার দিয়ে পরিচর্যা করলে তিন মাসের মধ্যে ফল আসে। আবহাওয়া ভাল থাকলে এসব ক্ষেতের মরিচ ভাদ্র মাস পর্যন্ত বিক্রি করত। বর্ষাকালে মরিচ ক্ষেত বন্যায় ডুবে নষ্ট হওয়ায় এ সময় মরিচের বাজার দর বেড়ে যায়।
মঙ্গলবার সকালে উপজেলার সবচেয়ে বড় কাঁচা মরিচ বিক্রির পাইকারি বাজারে গিয়ে দেখা যায়,ক্ষেত থেকে মরিচ তুলে তা বিক্রির জন্য নিয়ে আসছেন চাষিরা। সেগুলো আবার ব্যবসায়ীরা কিনে দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করে থাকে। এই বাজারে প্রতি মন কাঁচা মরিচ ১০০ থেকে ১১০ টাকা কেজি দরে ব্যবসায়ীরা কিনছেন। ভালো দামে মরিচ বিক্রি করতে পেরে খুশি চাষিরাও।
মরিচ বিক্রি করতে আসা মানিক মিয়া বলেন, দুই সপ্তাহ আগে খরা ও কুয়াশা হওয়ায় মরিচের ফলন কমে গেছে। এক মাস আগে দুই বিঘা মরিচের খেত থেকে প্রতিদিন ৫০ কেজি মরিচ পেতাম,এখন পাচ্ছি মাত্র ২০ কেজি। তবে বাজারে এবার মরিচের দাম ভালো রয়েছে। আজকে ১০০ টাকা কেজি দরে ১৫ কেজি মরিচ বিক্রি করলাম।বাজারে যদি এ রকম মরিচের দাম থাকে তাহলে আমরা চাষিরা ভালো লাভবান হব।
মসুয়া গ্রামের মরিচ চাষি মকুল জানান,এক বিঘা জমিতে মরিচ চাষ করেছি। এক বিঘায় মরিচ চাষ করতে প্রায় ৩৫ থেকে ৪০ হাজার টাকা খরচ হয়। মরিচের ভালো ফলন হলে এক বিঘা জমি থেকে দেড় থেকে দুই লাখ টাকা মরিচ বিক্রি করা যায়।
আরেক মরিচ চাষি আক্কাস ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, এবার আমি দুই বিঘা জমিতে মরিচ চাষ করেছি। কিন্তু খরার কারণে মরিচের গাছে ফুল আসলে সেই ফুল লাল হয়ে ঝড়ে পড়ে যায়। ফলে ফলন তেমন নেই। তবে বাজারে মরিচের ভালো দাম আছে।
নদীরবাধ খুচরা সবজি ব্যবসায়ী বাবু মিয়া বলেন,কৃষকের কাছ থেকে আমাদের বেশি দামে মরিচ কিনতে হচ্ছে। এ কারণে বেশি দামে মরিচ বিক্রি করছি। অতিরিক্ত খরার কারণে মরিচের ফলন কমে গেছে। ফলে আমদানি কম।
অপরদিকে বাজার করতে আসা আলমগীর হোসেন বলেন,এক সপ্তাহ আগে কাঁচা মরিচের কেজি ছিল ৬০ থেকে ৭০ টাকা। আজ কিনতে হচ্ছে ১৪০ টাকা কেজি দরে। আমাদের মতো সাধারণ ক্রেতাদের জন্য খুবই কষ্টকর হয়ে পড়েছে।
কটিয়াদী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মুকশেদুল হক একাত্তর পোষ্টকে বলেন,চলতি বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় বাম্পার ফলন হয়েছে। বাজারদরও ভালো থাকায় বেশ মুনাফা পাচ্ছেন চাষিরা। উঁচু অঞ্চলের মরিচ ক্ষেত আরও এক মাস বা তারো অধিক সময় ফলন দিবে। সবমিলে লাভবান হচ্ছেন চাষিরা।