নিজস্ব প্রতিবেদক: নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার নওপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হাফসা বেগমের বিরুদ্ধে অনিয়ম, আর্থিক অসঙ্গতি, দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ তুলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন বিদ্যালয়ের ছয় শিক্ষক।
সোমবার (৮ ডিসেম্বর) সকালের দিকে ওই শিক্ষিকা আনিত অভিযোগ অস্বীকার করেন। এরআগে গত রবিবার বিকেল ৩টার দিকে এই অভিযোগ জমা দেওয়া হয়। তবে হাফসা বেগম অভিযোগগুলোর সবকটিই ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছেন।
অভিযোগকারী শিক্ষকদের দাবি- সহকারী শিক্ষক মোহাম্মদ আলমগীরের দীর্ঘ অনুপস্থিতি গোপন করা হয়েছে, বিদ্যালয়ের আয় ব্যাংকে জমা না রেখে হাতে রাখা হয়, তিন মাসের প্রভিডেন্ট ফান্ড বকেয়া, এক শিক্ষকের স্বাক্ষর জাল করে এনজিও থেকে ঋণ উত্তোলনের চেষ্টা, অতিরিক্ত সরকারি বই ও স্টোরের মালামাল বিদ্যালয় বন্ধের দিনে বিক্রি করা এবং বিদ্যালয়ের সব সিদ্ধান্ত এককভাবে নেওয়া হচ্ছে।
অভিযোগের বিষয়ে দ্রুত তদন্ত ও প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন শিক্ষকরা।
অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা হাফসা বেগম বলেন, “সব অভিযোগই মিথ্যা। ৫ আগস্টের পর থেকেই একটি মহল মব যাস্টিসের আদলে আমাকে সরিয়ে দিয়ে প্রধান শিক্ষকের পদ দখলের চেষ্টা করছে। সিনিয়র শিক্ষক শহিদুজ্জামান ভূঞার নেতৃত্বে তারা এসব মিথ্যা তথ্য সাজিয়ে বিদ্যালয়ের ঐতিহ্য ক্ষুন্ন করছে।”
তিনি দাবি করেন, অভিযোগে উত্থাপিত প্রতিটি বিষয়ের বিপরীতে যথাযথ কাগজপত্র, ব্যাংক স্টেটমেন্ট ও রেজুলেশন বিদ্যালয়ে সংরক্ষিত রয়েছে।
হাফসা বেগম অভিযোগকারীদের বিরুদ্ধেও অনৈতিক অর্থ আটকে রাখার অভিযোগ তোলেন।
তিনি বলেন, “২০২৫ সালের বার্ষিক পরীক্ষার আয় তারা নিয়মবহির্ভূতভাবে নিজেদের কাছে রেখেছেন। তারা বলেছেন, এই টাকা ফেরত দেবেন না। তথ্য ও গ্রন্থাগার শিক্ষক আলমগীর কবির নিয়ম মেনেই ছুটি নিয়েছেন। তার আবেদনপত্র, অনুমোদন এবং রেজুলেশন বিদ্যালয়ে সংরক্ষিত আছে।”
অতিরিক্ত বই ও মালামাল বিক্রির অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি বলেন, “বিক্রির দিন আমি ময়মনসিংহে ছিলাম। রেজুলেশন অনুযায়ী অভিভাবক সদস্য আবুল মিয়া ও দপ্তরি সুব্রত এসব বিক্রি করেছেন। মোট ১২ হাজার টাকা বিদ্যালয়ের ফান্ডে জমা হয়েছে। ‘লক্ষ লক্ষ টাকার মাল’ বিক্রির কথা সম্পূর্ণ মিথ্যা।”
হাফসা বেগম বলেন আরো বলেন, “স্কুলের ব্যাংক ফান্ডে টাকা না থাকায় তিন মাসের প্রভিডেন্ট ফান্ড দেওয়া যায়নি। ফান্ডে টাকা এলেই পরিশোধ করা হবে।”
নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর শিক্ষকদের অভিযোগ দায়ের প্রসঙ্গে নওপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের এডহক কমিটির সভাপতি মাইনুদ্দিন বলেন- আমার জানামতে নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর শিক্ষকদের দায়ের করা অভিযোগ গুলো ভিত্তিহীন ও উদ্দ্যেশ্য প্রনোদিত। স্কুলে সকল কাজের আবেদন এবং রেজুলেশন সংরক্ষিত আছে। আমি দায়িত্ব নেয়ার পর পরই স্কুলের ফিজিক্যাল টিচার শহিদুজ্জামান ভুইয়া আমাকে প্রস্তাব দিয়েছিলেন হাফসা বেগমকে সরিয়ে তাকে প্রধান শিক্ষক এর দায়িত্ব দেয়ার জন্য। কিন্ত আমি হাফসা বেগমের কর্মকান্ডে কোন প্রকার অসঙ্গতি খুঁজে পায়নি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয় অভিযোগ পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। প্রশাসনের একটি সূত্র জানায়, অভিযোগের বিষয়গুলো যাচাই করে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে।
অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগে বিদ্যালয়ের পরিবেশ অস্থিতিশীল হয়ে উঠেছে। দ্রুত তদন্ত ও পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার দাবি জানিয়েছেন অভিভাবক ও স্থানীয়রা।


