অনলাইন ডেস্ক: সাম্রাজ্যবাদ , সামন্তবাদ বিরোধী আন্দোলনের অগ্রসেনানী জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট-এনডিএফ নেত্রকোনা জেলার আহবায়ক মাস্টার মতিউর রহমান আজ রবিবার (৭ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় শোক ও শ্রদ্ধায় চির বিদায় নেন। অসংখ্য শ্রমিক-কৃষক-জনগণের অশ্রু বিসর্জন ও শোক-নিরতায় বর্ণাঢ্য জীবনের ইতি টানেন সর্বজন শ্রদ্ধেয় মাস্টার মতিউর রহমান। সকাল ৬ টায় শহরের আরামবাগে তিনি তাঁর নিজ বাসভবনে মৃত্যুবরণ করেন।
মতিউর রহমানের মৃত্যুতে বিভিন্ন ব্যক্তি ও সংগঠন সমাধিতে শ্রদ্ধার্পণ করেন। জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট-এনডিএফ’র ময়মনসিংহ জেলা কমিটির পক্ষে সমাধিতে পুস্পার্পণ করেন এনডিএফ কেন্দ্রিয় নেতা ও কৃষক সংগ্রাম সমিতির ময়মনসিংহ জেলা সভাপতি কামরুজ্জামান সাজ, ট্রেড ইউনিয়ন সংঘের কেন্দ্রিয় যুগ্ম-সম্পাদক ও ময়মনসিংহ জেলা এনডিএফ’র সেক্রেটারী তফাজ্জল হোসেন, গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতির কেন্দ্রিয় সহ-সম্পাদক ও ময়মনসিংহ জেলা কমিটির আহবায়ক বাবলি আকন্দ, এনডিএফ’র নেত্রকোণা জেলার যুগ্ম-আহবায়ক আনোয়ার হোসেন, ট্রেড ইউনিয়ন সংঘ নেত্রকোনা জেলা কমিটির সভাপতি ও জেলা ট্রাক শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি তরিকুল ইসলাম তারা ও জেলা নৌযান শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক রতন মিয়া, নেত্রকোনা জেলা হোটেল রেস্টুরেন্ট মিষ্টি বেকারী শ্রমিক ইউনিয়নের পক্ষে পুস্পার্পন করেন ইউনিয়নের নেতা রবি পাল, আশরাফুল ইসলাম, সুনীল বর্মণ, আবুল কাসেমসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ, নেত্রকোনা জেলা দর্জি শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি তাপস দাস, যুগ্ম-সম্পাদক রুহুল আমিন এবং জেলা মটরসাইকেল মেকান্কিস ইউনিয়নের সাংগঠনিক সম্পাদক তাপস সরকারসহ বিভিন্ন সংগঠন ও নেতৃবৃন্দ পুস্পার্পন করেন। প্রয়াতের প্রতি গভীর শোক প্রকাশ করে সমাধিতে দাঁড়িয়ে এক মিনিট শোক নিরবতা পালন করা হয় এবং শপথ পাঠ করানো হয়। শপথ পাঠ করান এনডিএফ’র কেন্দ্রিয় সদস্য তফাজ্জল হোসেন।
উল্লেখ্য, জাতীয় পরিচয় পত্র অনুযায়ী প্রয়াতের পুরো নাম আজিজুল হক খান হলেও তিনি মাস্টার মতিউর রহমান নামেই পরিচিত। তিনি ১৯৫১ সালের ১ মার্চ জন্মগ্রহণ করেন। ছাত্রজীবনে তিনি ১৯৬৭ সালে পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নের সাথে যুক্ত হোন। এ সময় বিশ্বব্যাপী কমিউনিস্ট আন্দোলনে ক্রুশ্চেভ সংশোধনবাদের বিরুদ্ধে মতাদর্শিক সংগ্রাম শুরু হয়। এদেশের মণিসিং-খোকারায় প্রমুখ নেতৃবৃন্দ ক্রুশ্চেভ সংশোধন বাদের লাইন গ্রহণ করেন এবং কমরেড আবদুল হক ও কমরেড অজয় ভট্টাচার্য প্রমুখ নেতৃত্ব মার্কসাবাদ-লেনিনবাদের অবস্থান থেকে ক্রুশ্চেভ সংশোধনবাদের বিরুদ্ধে দাঁড়ান। এর প্রভাবে ছাত্র ইউনিয়নের মধ্যে বিতর্ক শুরু হয় এবং ছাত্র ইউনিয়ন বিভক্ত হয়ে পড়লে মতিউর রহমান ক্রুশ্চেভ সংশোধনবাদ বিরোধী মতাদর্শ গ্রহণ করেন। এর মধ্য দিয়ে উচ্চ মাধ্যমিকের ছাত্র অবস্থায় ৬৯ এর গণ আন্দোলন ও গণ অভ্যুত্থাানে তিনি সাহসি ভূমিকা পালন করেন।
৭১’এ সশস্ত্র সংগ্রাম শুরু হলে তিনি পূর্ব পাকিস্তান কমিউনিস্ট পার্টি (এমএল) এর পক্ষে বিপ্লবী যুদ্ধে অংশগ্রহণের প্রেক্ষিতে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর হাতে গ্রেফতার হোন। এ সময় শারীরিকভাবে তিনি নির্মম নির্যাতনের শিকার হোন। ৭১’ পরবর্তী সময়ে তিনি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা পেশায় যুক্ত হোন। তাঁর সহধর্মিণীও ছাত্রজীবনে ছাত্র ইউনিয়নের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন। তিনিও পরবর্তীতে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা পেশার সাথে যুক্ত হোন।
নেতৃবৃন্দ বলেন, শিক্ষকতা করার সময়ে রাজনীতিতে তিনি সক্রিয় ভূমিকা নিতে না পারলেও রাজনৈতিক যোগাযোগ অব্যাহত রাখেন। তিনি এবং তাঁর সহধর্মিণী উভয়েই প্রগতিশীল ও বিপ্লবী রাজনীতির পৃষ্ঠপোষকতাসহ বিভিন্ন সহযোগিতা অব্যাহত রাখেন। চাকুরি থেকে অবসর নেয়ার পর ২০১১ সালে নেত্রকোনা জেলায় জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্টের কমিটি গঠন হলে তিনি আহবায়কের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এনডিএফ’র আহবায়ক হিসেবে জেলায় জাতীয় ছাত্রদল, বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন সংঘ ও হোটেল শ্রমিক ইউনিয়ন প্রতিষ্ঠায় উদ্যোগী ভূমিকা পালন করেন। ২০১৯ সালে জেলায় হোটেল রেস্টুরেন্ট মিষ্টি বেকারি শ্রমিকরা কর্মবিরতি পালন করলে তিনি সার্বিকভাবে নেতৃস্থানীয় ভূমিকা পালন করেন। নেত্রকোনা জেলা হোটেল রেস্টুরেন্ট মিষ্টি বেকারি শ্রমিক ইউনিয়নের সর্বশেষ ৭ দফার আন্দোলন অগ্রসর করতে এবং ইউনিয়নের সভাপতি আনোয়ার হোসেনকে গ্রেফতারের প্রতিবাদের আন্দোলনে তিনি নেতৃস্থানীয় ভূমিকা পালন করেন। নেতৃবৃন্দ বলেন, মাস্টার মতিউর রহমানের আকাঙ্ক্ষা ছিল শ্রমিক-কৃষক-জনগণের রাষ্ট্র, সরকার ও সংবিধান প্রতিষ্ঠার। তাঁর এই আকাঙ্ক্ষা অসমাপ্ত থেকেছে। আমাদের দায়িত্ব তাঁর অসমাপ্ত লড়াইকে অগ্রসর করে নেয়া।
