নিজস্ব প্রতিবেদক: নেত্রকোনার মোহনগঞ্জ উপজেলার তেতুলিয়া ইউনিয়নের হানবীর গ্রামে দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে জাল দলিলের মাধ্যমে দখল করে রাখা সাত একর জমি উদ্ধার হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দা ও ঢাকা কলেজ ছাত্রদলের সাবেক সহ-সভাপতি দেওয়ান রিয়াদের উদ্যোগে দুই গ্রামের মানুষ একত্রিত হয়ে জমিটি প্রকৃত মালিকের হাতে বুঝিয়ে দেন। একইভাবে উদ্ধার হয় আরও এক সংখ্যালঘু পরিবারের ২২ শতক জমি।
গত মঙ্গলবার থেকে কয়েক দিনের প্রচেষ্টায় এসব জমি উদ্ধার করে ভুক্তভোগীদের কাছে বুঝিয়ে দেওয়া হয়।
অভিযুক্ত ব্যক্তি মদন উপজেলার বাসিন্দা মোমেনুর রহমান খান স্বপন। ঢাকায় বসবাস করলেও মামার বাড়ি মোহনগঞ্জ উপজেলার তেতুলিয়া ইউনিয়নের বড় পাইকুড়া গ্রামে। তার মামা একই ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ইমরান খান চৌধুরী। ফলে স্থানীয় প্রভাবকে কাজে লাগিয়ে তিনি এসব জমি দখলে রেখেছিলেন বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের।
দখল হওয়া জমির অন্যতম মালিক গৌরাঙ্গ চৌধুরীর বাবা ছিলেন তেতুলিয়া ইউনিয়নের প্রথম চেয়ারম্যান রামধন চৌধুরী।
ভুক্তভোগী গৌরাঙ্গ চৌধুরীর ছেলে রাজিব চৌধুরী জানান, তাঁর বাবা গোরাঙ্গ চৌধুরীর মালিকানাধীন ৭ একর জমি বহু বছর আগে ইজারা দেওয়া হয়েছিল স্বপনদের কাছে। “ইজারার টাকা পুরোপুরি পরিশোধ না করেই তারা নকল দলিল তৈরি করে জমি দখল করে নেয়। মামা-ভাগ্নের প্রভাব থাকায় জমিটি ফেরত পাওয়া আমাদের জন্য কঠিন হয়ে পড়েছিল,” বলেন রাজিব।
তিনি আরও বলেন, “দেওয়ান রিয়াদের উদ্যোগে পাইকুড়া ও হানবীর গ্রামের লোকজন বসে কাগজপত্র যাচাই করেন। পরে সবাই সিদ্ধান্ত নিয়ে জমিটি আমাদের হাতে বুঝিয়ে দেন। গ্রামবাসী উদ্যোগ না নিলে এই জমি আমরা হয়তো কোনোদিনই ফেরত পেতাম না।”
আরেক ভুক্তভোগী রামধম চন্দ্র দাসের ছেলে অনুকূল চন্দ্র দাস বলেন, “একই ব্যক্তি আমাদের ২২ শতক জমিও জাল দলিল করে অনলাইনে নামজারি করে ফেলেছিলো। বিষয়টি নজরে আসার পর গ্রামবাসীকে নিয়ে আলোচনা করি। বিশেষ করে দেওয়ান রিয়াদ এ ঘটনায় দৃঢ় ভূমিকা নেন। এখন আমাদের জমির মিসকেস করে নামজারি ভাঙানোর প্রক্রিয়া চলছে।”
তেতুলিয়া ইউনিয়ন বিএনপির ৩ নম্বর ওয়ার্ড সভাপতি বেনু তালুকদার বলেন, “দখলদাররা এলাকায় প্রভাবশালী হওয়ায় সংখ্যালঘু পরিবারগুলো ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছিলো। কাগজপত্র যাচাই করে জমির প্রকৃত মালিকানা নিশ্চিত হওয়ার পর গ্রামবাসী একসঙ্গে দাঁড়ানোয় এই দখলমুক্তি সম্ভব হয়েছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে এমন ভূমি দস্যুতার ঘটনা ঘটছে। সচেতন মানুষ উদ্যোগ নিলে সাধারণ মানুষ উপকৃত হয়।”
এ বিষয়ে দেওয়ান রিয়াদ বলেন, “সংখ্যালঘু দুই পরিবারের জমি দীর্ঘদিন ধরে দখলে থাকায় তারা ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছিলেন। বিষয়টি জানার পর আমরা দুই গ্রামের মানুষকে নিয়ে বসে কাগজপত্র যাচাই করি। স্পষ্ট হয়- জমিগুলো জাল কাগজে দখল করে রাখা হয়েছে। তাই গ্রামবাসীকে সঙ্গে নিয়ে শান্তিপূর্ণভাবে জমিগুলো প্রকৃত মালিকের হাতে ফিরিয়ে দিই। সাধারণ মানুষের অধিকার রক্ষায় সবাই একসঙ্গে দাঁড়ালে কোনো অন্যায়ই টিকে থাকতে পারে না।”
অভিযুক্ত মোমেনুর রহমান খান স্বপনের মোবাইলফোনে গত তিন দিন ধরে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাঁকে পাওয়া যায়নি।
