মোঃ মহিবুল, পাথরঘাটা (বরগুনা) প্রতিনিধি:
অপূর্ব প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, বঙ্গোপসাগরের মোহনার হাতছানি এত কিছুর পরেও বরগুনা জেলার পাথরঘাটায় জনপ্রিয় হরিণঘাটা পর্যটন কেন্দ্রটি এখন পর্যটকশূন্য। এই স্পটটি দীর্ঘদিন ধরে সরকারি তদারকি ও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে জৌলুস হারাচ্ছে। বিশেষ করে, অবকাঠামোর বেহাল দশা এবং নিরাপত্তার ঘাটতির কারণেই মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন দূর-দূরান্ত থেকে আসা পর্যটকরা। হরিণঘাটা বনাঞ্চলটি তার মায়াবী চিত্রল হরিণ, বানর, বিভিন্ন প্রজাতির পাখি, ঘন ম্যানগ্রোভ বন এবং নদীর মোহনার মনোমুগ্ধকর দৃশ্যের জন্য পরিচিত। একসময় এখানে প্রতিদিন শত-শত পর্যটকের আনাগোনা থাকলেও বর্তমানে অব্যবস্থাপনার কারণে সেই ভিড় আর চোখে পড়ে না।
ঘন বনের ভেতরে পর্যটকদের জন্য ন্যূনতম নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেই। স্থানীয় পর্যটকদের অভিযোগ, নিরাপত্তার যথেষ্ট ঘাটতি থাকায় সপরিবারে বা নারী সদস্যদের নিয়ে এখানে আসতে বারবার ভাবতে হয়। এছাড়াও পাথরঘাটা থেকে হরিণঘাটা পর্যন্ত যোগাযোগ ব্যবস্থার বন বিভাগের পাথরঘাটা রেঞ্জ কার্যালয় সূত্র জানা যায়, জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাষ্ট ফান্ডের অর্থায়নে পাথরঘাটা উপজেলায় হরিণঘাটা-লালদিয়া সংরক্ষিত বনাঞ্চলে জীব ও বৈচিত্র্য রক্ষায় ও ইকোট্রররিজম সুযোগ বৃদ্ধি প্রকল্পে ২০১৩ সালের শেষ দিকে জলবায়ু প্রকল্পের আওতায় প্রায় তিন হাজার হেক্টর আয়তনের এই বনে পাঁচতলা একটি পর্যবেক্ষণ টাওয়ার (ওয়াচ টাওয়ার), বনে হাঁটার কাঠের ট্রেইল (ফুট ট্রেইল) এক কিলোমিটার দীর্ঘ হাঁটার পথ, চারটি পাকা বিশ্রামাগার, একটি পাকা সেতু, দশটি পাকা বেঞ্চ, একটি গণশৌচাগার নির্মাণ করা হয়।
পরবর্তীতে ফুট ট্রেইলের কাঠের পাটাতন নষ্ট হয়ে গেলে সিমেন্টের ডালাই পাটাতন দেয়া হয়। সরেজমিনে দেখা গেছে, বনের সৌন্দর্য উপভোগের জন্য এবং সমুদ্রতীরবর্তী লালদিয়ার চরে যাওয়ার জন্য নির্মিত দীর্ঘ পায়ে হাঁটার ট্রেইল (ফুট ট্রেইল)। বর্তমানে এই ট্রেইলের অধিকাংশ স্থানের পাটাতন ভেঙে গেছে। ফলে পর্যটকরা বন পেরিয়ে হেঁটে সমুদ্রের ধারে যেতে পারছেন না। দূর থেকে বনের দৃশ্য দেখার জন্য নির্মিত ওয়াচ টাওয়ারের বিভিন্ন স্থানে পলেস্তারা খসে পড়ছে। পর্যটকদের জন্য নির্মাণ করা বিশ্রামাগারগুলো পুরোপুরি ধ্বংস স্তপে পরিণত হয়েছে। পর্যাপ্ত এবং পরিচ্ছন্ন ওয়াশরুমের ব্যবস্থা না থাকায় বিশেষ করে নারী পর্যটকরা চরম বিব্রতকর পরিস্থিতির সম্মুখীন হচ্ছেন।
ঘুরতে আসা মোঃ রাব্বি পর্যটক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘‘এতো সুন্দর একটি প্রাকৃতিক স্থান শুধুমাত্র পরিকল্পনার অভাবে পর্যটক টানতে পারছে না। যেখানে নিরাপত্তার ঘাটতি আছে, সেখানে পর্যটক যাবে না, এটাই স্বাভাবিক। বনের ভিতরের ঝুলন্ত ব্রিজ ও ওয়াচ টাওয়ারের সিঁড়ি গুলোর অবস্থা শোচনীয়। এই প্রাকৃতিক পরিবেশকে যদি বাঁচিয়ে রাখতে হয়, তবে অবিলম্বে সংস্কার দরকার। না হলে পর্যটক হাড়াবে পর্যটন কেন্দ্রটি।’’ মোঃ সবুজ বলেন, ‘‘এতো সুন্দর একটা বন, একদিকে সাগর, অন্যদিকে নদীর মোহনার প্রকৃতির এত সমাহার।
কিন্তু ভেতরে হাঁটার যে কাঠের পথ বা ফুট ট্রেইল, সেটা এত ভাঙাচোরা যে বাচ্চাদের নিয়ে হাঁটাই মুশকিল। সব জায়গায় পলেস্তারা খুলে পড়ছে, বিশ্রামাগার গুলোর অবস্থা খুবই খারাপ, কোনো ওয়াশরুমের ব্যবস্থা নেই। এত অব্যবস্থাপনা থাকলে মানুষ কীভাবে স্বচ্ছন্দ্যে ঘুরবে? ন্যূনতম সুবিধাগুলোও নিশ্চিত করা হয়নি’’ হরিণঘাটা পর্যটন কেন্দ্রটিতে একই সঙ্গে বন এবং সমুদ্র দেখা যায়। এটি সুন্দরবনের পরেই দেশের অন্যতম প্রধান ম্যানগ্রোভ বনভূমি। পর্যটন বিশ্লেষকদের মতে, সরকারের পক্ষ থেকে সামান্য উদ্যোগ নিলেই এই স্থানটি কুয়াকাটার মতোই একটি আকর্ষণীয় পর্যটন স্পটে পরিণত হতে পারত, যা উপকূলীয় পাথরঘাটার অর্থনীতিতে বড় অবদান রাখত।
অপার সম্ভাবনাময় এই পর্যটন কেন্দ্রটি রক্ষায় সরকারী ও বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থা গুলোকে এগিয়ে আসতে হবে, তাহলেই পর্যটন কেন্দ্রটি আগের মত জৌলুস ফিরে পারে। পাথরঘাটা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. মিজানুর রহমান বলেন, ‘‘হরিণঘাটা পর্যটন কেন্দ্রের প্রবেশদ্বার থেকে সেতু পর্যন্ত সংস্কারের জন্য জেলা পরিষদ থেকে তিন লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
কাজের জন্য ইতিমধ্যে দরপত্র আহবান করা হয়েছে। এছাড়াও উপজেলা পরিষদ থেকে লালদিয়ায় উন্নয়ন কাজের উদ্দোগ নেয়া হয়েছে। তিনি আরো বলেন, বন বিভাগের জনবল সংকট থাকায় হরিণঘাটায় কিছুটা নিরাপত্তার ঘাটতি রয়েছে। এই পর্যটন স্পটটিতে পুলিশের একটি টহল টিম থাকা ধরকার। এখানে আসা পর্যটকদের কেউ উত্তক্ত করলে অভিযোগ পেলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।
