নিজস্ব প্রতিবেদক: নেত্রকোনার বারহাট্টা উপজেলায় চাচা শ্বশুরকে ‘বাবা’ এবং চাচি শাশুরিকে ‘মা’ দেখিয়ে সাইফুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তির জন্ম নিবন্ধন দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে ইউনিয়ন পরিষদের এক প্রশাসনিক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে।
এমন ধরনের ভয়াবহ অনিয়মের অভিযোগে অভিযুক্ত প্রশাসনিক কর্মকর্তা হলেন বারহাট্টার আসমা ইউনিয়ন পরিষদের প্রশাসনিক কর্মকর্তা শুধাংশু কুমার রায়।
বিভিন্ন সূত্রে প্রাপ্ত অভিযোগে জানা যায়, সাইফুল ইসলাম এলাকায় অজ্ঞাত-পরিচয় ব্যক্তি। গত ১৫ অক্টোবর তার জন্মসনদ আসমা ইউনিয়নে নিবন্ধিত হয়। সনদে ওই ইউনিয়নের হরিয়াতলা গ্রামের জালাল মিয়াকে ‘বাবা’ ও শিউলী আক্তারকে ‘মা’ উল্লেখ করা হয়েছে। এ ঘটনায় অর্থের লেনদেন হয়েছে বলেও অনেকের অভিযোগ। এদিকে ঘটনার পর অভিযুক্ত সচিব শুধাংশু কুমার রায়কে বারহাট্টা সদর ইউনিয়নে পদায়ন (অতিরিক্ত দায়িত্ব) করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
জানা যায়, ঢাকায় একটি গার্মেন্ট ফ্যাক্টরিতে চাকুরির সুবাদে হরিয়াতলা গ্রামের রাবিয়া আক্তার নামের এক যুবতির সাথে সাইফুল ইসলামের প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। রাবিয়া আক্তার একই গ্রামের জালাল মিয়ার ভাতিজি এবং জয়নাল আবেদীন এর মেয়ে। একপর্যায়ে তারা বিয়ে করেন এবং কয়েক মাস আগে হরিয়াতলায় আসেন। সাইফুল ইসলামের জন্মসনদ ও জাতীয় পরিচয়পত্র ছিল না। হরিয়াতলা শ্বশুরবাড়িতে আসার পর ২০০২৭২১০৯১১০৪০৭৪২ নম্বর জন্মসনদ সংগ্রহ করেন সাইফুল ইসলাম।
জন্মসনদ হাতে পাবার পর জাতীয় পরিচয়পত্র করার জন্য বারহাট্টা উপজেলা নির্বাচন অফিসে যান সাইফুল ইসলাম। এখানে বাধে বিপত্তি। বিষয়টি সন্দেজনক মনে হওয়ায় অফিসের কর্মকর্তারা সাইফুল ইসলামকে আটক করা হয়। পরে এলাকার মেম্বার লিটন মিয়ার মধ্যস্থতায় জালাল মিয়া, শিউলী আক্তার ও রাবিয়া আক্তার মুচলেকা দিয়ে নির্বাচন অফিস থেকে সাইফুল ইসলামকে ছাড়িয়ে আনেন। পরে তারা শুধু জন্মসনদ নিয়ে ঢাকায় চলে যায়। সাইফুল ইসলাম মায়ানমারের নাগরিক (রোহিঙ্গা) হতে পারেন বলে এলাকার অনেকেরই ধারণা।
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী উলামা দলের নেত্রকোনা জেলা শাখার সদস্য হাফেজ মো. মিনারুল ইসলাম বলেন, ইউপি সচিব টাকার বিনিময়ে যে কোন কাজ করে দেয়। টাকা না দিলে সঠিক কাজটিও করে না।
এদিকে জালাল মিয়া বলেন, “আমার ভাতিজী বলল তার স্বামীর বাবা-মা নেই, আমি বাবা হলে নাকি ভোটার কার্ড করতে পারবে। পরে বুঝলাম বড় ভুল করেছি।”
এ ব্যাপারে সচিব শুধাংশু কুমার রায়ের ভিন্নরকম বক্তব্য পাওয়া যায়। প্রথমবার তিনি বলেন, “মেম্বারের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী নিবন্ধন করা হয়েছিল।” পরে তিনি অস্বীকার করে বলেন, “এই নামে এক ব্যক্তি জন্ম নিবন্ধন করতে এসেছিল, কিন্তু তথ্য না মিলায় আমি নিবন্ধন করিনি।” তবে অনলাইনে অনুসন্ধান করে সাইফুল ইসলামের জন্মসনদটি পাওয়া গেছে।
মেম্বার লিটন মিয়া বলেন, সাইফুল ইসলাম বাংলাদেশেরই নাগরিক। তার পূর্বের একটি জন্মসনদ আছে। এখানে এসে জালিয়াতি করে নতুন একটি জন্ম নিবন্ধন করেছিল। বিষয়টি জানতে পেরে আমরা সেটি বাতিলের আবেদন করেছি।
বারহাট্টার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) খবিরুল আহসান বলেন, জন্ম সনদটি বাতিল করা হয়েছে। এ বিষয়ে অভিযোগ সংশ্লিষ্ট ইউপির প্রশাসনিক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
পরে এ বিষয়টি গণমাধ্যমে প্রকাশিত হলে অভিযোগের প্রয়োজন হবে কি? প্রতিবেদকের এমন প্রশ্নে “সংবাদ প্রকাশ হোক, পরে বিষয়টি দেখা যাবে” বলে জানান ইউএনও।
