ডিমলা (নীলফামারী) প্রতিনিধি:
নীলফামারী জেলার ডিমলা উপজেলায় অসংখ্য অনুমোদনহীন মিনি পেট্রোল পাম্প দিন দিন বেড়েই চলেছে ফলে জীবনের ঝুঁকিতে এলাকাবাসী। মানছেনা সরকারের নিয়ম-নীতি। অবৈধ মিনি পেট্রোল পাম্প গড়ে ওঠার বিষয়ে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এগুলোর কয়েকটিতে অভিযান চালিয়ে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে জড়িমানা ও সিলগালা করা হয়। প্রশাসনের কঠোর বিধি নিষেধ থাকা সত্ত্বেও মানা হচ্ছে না তা। কিছুতেই বন্ধ হচ্ছে না অবৈধ পাম্পগুলো।
সিলগালা করে বন্ধ রাখা অবৈধ পেট্রোল পাম্পগুলো সচল করে আইন অমান্য করে অল্প কিছুদিনের ব্যবধানে আবারও জমজমাট অবৈধ ব্যবসা পরিচালনা করা হচ্ছে কোনকিছু তোয়াক্কা না করে। এসব অবৈধ পেট্রোল পাম্প যত্রতত্র ও রাস্তার ধারে গড়ে ওঠায় নিরাপত্তাহীনতা ও চরম জীবনের ঝুঁকিতে এলাকাবাসী। এগুলো যেন এক একটি জ্বলন্ত বারুদের স্ফিঙ্গ। বর্তমানে এ অবৈধ প্রতিষ্ঠানগুলো গোটা উপজেলা দখল করে বসে আছে।
উপজেলাজুড়ে অনুমোদনহী অন্তত প্রায় নতুন পুরাতন মিলে অসংখ্য মিনি পেট্রোল পাম্প রয়েছে। এগুলো মিনি পাম্পে প্রতিদিন ব্যবহার করা হচ্ছে আত্যাধুনিক ডিসপেনসার মেশিন, বিক্রি হচ্ছে ডিজেল, পেট্রোল ও অকটেনসহ অন্যান্য দাহ্য পদার্থ। অবৈধ কার্যক্রমের সরকারি ভাবে কোন অনুমোদন, অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা কিংবা নেই পরিবেশগত ছাড়পত্র। পথচারিরা সর্বদাই আতঙ্কের মধ্যে বসবাস করছে, যেকোন মুহূর্তে ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কায় করা হচ্ছে। উপজেলা প্রশাসন এসব ঝুঁকিপূর্ণ অবৈধ মিনি পেট্রোল পাম্পগুলো বন্ধ করার উদ্যোগ নিয়েও চেষ্টা করি ব্যর্থ হন।
বাস্তবে কোন কাজের কাজ হচ্ছ না। ডিমলা বাসীর দাবি, দ্রুততম সময়ের মধ্যে অবৈধ মিনি পেট্রোল পাম্পগুলো বন্ধে কার্যকরি পদক্ষেপ গ্রহণ করবে উপজেলা প্রশাসন কর্তৃপক্ষ। ইতিপূর্বে ডিমলা সদর ইউনিয়নের বাবুরহাট বাজারসংলগ্ন টিএনটি সড়কে অবস্থিত ‘মেসার্স বক্কর অ্যান্ড সন্স’ নামক একটি অনুমোদনহীন মিনি পাম্পে ঘটে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে আগুনে দগ্ধ হন এক কর্মচারী সেই সঙ্গে পুড়ে যায় আশপাশের দোকানঘর, একটি মোটরসাইকেল শোরুম ও অন্যান্য স্থাপনা-যার ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় কোটি টাকার মত।
বিস্ফোরণের বিকট শব্দে কম্পিত হয়ে বাজারজুড়ে আতঙ্কের সৃষ্টি হয়ে মানুষ এদিক সেদিক ছোটা ছুটি করে ভয়াবহ আতঙ্কের সৃষ্টি হয়। এ সময় ওই অবৈধ পাম্পটিসহ পার্শ্ববর্তী একটি পাম্পে জরিমানা ও সিলগালা করে বন্ধ করে দেয়া হয়। অজ্ঞাত কারণে সিলগালা করে বন্ধ করে দেয়া অবৈধ মিনি পেট্রোল পাম্পগুলো আবারো পুরোদমে চালু করা হয়েছে। মিনি পাম্পেগুলোর বেশিরভাগই স্থাপিত হয়েছে ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে জনবহুল ও আবাসিক ভবন নির্মাণ সংলগ্ন এলাকায়। বাজার এলাকার যেখানে বেশি লোকসমাগম, স্কুলের পাশে, সড়কের ধার ঘেঁষে টিনশেড ঘর কিংবা মুদি দোকানর ভিতরে।
এই সব স্থানে কোনো ধরনের অগ্নিনির্বাপকের ব্যবস্থা নেই। নেই বালির বস্তা কিংবা নিরাপদ দূরত্বের ন্যূনতম ব্যবধান। লোক চলাচলের রাস্তায় রাখা হয় বিশাল তেলের ড্রাম, যেকোনো সময় সিগারেটের আগুন বা অন্য কোন কারনে বিস্ফোরিত হয়ে বড় ধরনের অগ্নিকাণ্ডে দুর্ঘটনা ঘটে ধ্বংস করে দিতে পারে এলাকা। বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) সূত্র জানায়, ডিমলায় অনুমোদিত ফিলিং স্টেশন রয়েছে মাত্র চারটি, উপজেলা সদরে দুটি এবং খালিশা চাপানি ও ঝুনাগাছ চাপানি ইউনিয়নে একটি করে। কিন্তু বাস্তব চিত্র সম্পূর্ণ বিপরীত। উপজেলাজুড়ে ছড়িয়ে আছে অসংখ্য অবৈধ মিনি পেট্রোল পাম্প।
উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ইতিমধ্যে ২/১ মিনি পেট্রোল পাম্পে মোবাইল কোর্ট অভিযান চালিয়ে জড়িমানা ও সিলগালা করে বন্ধ করে দেয়া হলেও সেগুলে অজ্ঞাতক কারণে আবারও চালু করা হয়েছে।একাধিক সূত্র ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, এসব মিনি তেল পাম্পে কোন প্রকার নিয়ম নীতি নেই, গভীর রাত পর্যন্ত খোলা রেখে তেল বিক্রি করা হয়। যেকোনো ধরনের দুর্ঘটনা ঘটে প্রাণঘাতী সহ বড় ধরনের ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে।
পরিবেশ অধিদপ্তর নীলফামারীর সহকারী পরিচালক মো. আব্দুল্লাহ-আল-মামুন দ্রুত সময়ের মধ্যে পরিদর্শন করে এসব অবৈধ পেট্রোল পাম্প বন্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার কথা বললেও বাস্তবে তার কোনো কার্যকরী উদ্যোগ নিতে দেখা যায়নি। বিশিষ্টজনদের মতে, ডিমলায় অবৈধ মিনি পাম্পের বিস্তার কেবল আইনের লঙ্ঘন নয়, এটি জননিরাপত্তা ও পরিবেশের জন্য এক মারাত্মক ঝুকি।
এই সংকট সমাধানে প্রশাসন, সংশ্লিষ্ট দপ্তর এবং জনগণের সম্মিলিত উদ্যোগই হতে পারে উত্তরণের একমাত্র উপায়। কঠোর আইন প্রয়োগ, সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমেই এর স্থায়ী সমাধান হতে পারে। ডিমলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো: ইমরানুজ্জামান বলেন, অবৈধ মিনি পাম্পগুলো চিহ্নিত করে কয়েকটিতে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে অভিযান চালিয়ে জরিমানা ও বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। যত দ্রুত সম্ভব আবারো ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে অভিযান পরিচালনা করা হবে। সিলগালা করা কোন মিনি পেট্রোল পাম্প চালু করলে তার বিরুদ্ধে কঠোর আইনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। জনগনের নিরাপত্তাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে বিষয়টি গুরুত্বের সাথে দেখা হবে।
