তাসলিমুল হাসান সিয়াম,গাইবান্ধা জেলা প্রতিনিধি:
গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে গরু চোর সন্দেহে মো. আব্দুস সালাম নামের এক মানসিক ভারসাম্যহীন ব্যক্তিকে পিটিয়ে হত্যা করেছে স্থানীয়রা। এ ঘটনায় দুলালী বেগম নামে এক নারীকে আটক করেছে পুলিশ। শনিবার সকালে উপজেলার বেলকা ইউনিয়নের বেলকা নবাবগঞ্জ গ্রামের তিস্তার চরে এই ঘটনা ঘটে।
নিহত আব্দুস সালাম একই ইউনিয়নের রামডাকুয়া গ্রামের মো. ওমেদ আলীর ছেলে। আটক দুলালী বেগম বেলকা ইউনিয়নের নবাবগঞ্জ গ্রামের আব্দুল গণি মিয়ার স্ত্রী। শুক্রবার রাত আড়াইটার দিকে বেলকা নবাবগঞ্জ গ্রামের আব্দুল গণি মিয়ার গোয়াল ঘরে প্রবেশ করেন আব্দুস সালাম। এসময় গণি মিয়ার স্ত্রী দুলালী বেগম বিষয়টি টের পেয়ে স্বামীকে জানান। পরে তারা গিয়ে গোয়াল ঘরে সালামকে দেখতে পান। এরপর দুলালী বেগম আশপাশের লোকজন ও আত্মীয়-স্বজনদের খবর দেন। তারা এসে সালামকে রশি দিয়ে বেঁধে বেধড়ক মারধর শুরু করে।
একপর্যায়ে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে পুকুরে বেঁধে রাখা হয়। ভোরের দিকে পুকুর থেকে টেনে-হিঁচড়ে গণি মিয়ার ভাই আব্দুল গফুরের গোয়াল ঘরে নিয়ে গিয়ে আবারও নির্যাতন চালানো হয়। এতে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। খবর পেয়ে সুন্দরগঞ্জ থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে নিহতের মরদেহ উদ্ধার করে সুরতহাল প্রতিবেদন প্রস্তুত পূর্বক ময়নাতদন্তের জন্য গাইবান্ধা সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠিয়েছে।
অভিযুক্ত আব্দুল গণি মিয়া বলেন, “কয়েকদিন আগে আমার একটি শ্যালো মেশিন হারিয়েছে। রাতে যখন গোয়াল ঘড়ে গিয়ে সালামকে দেখতে পাই, তখন প্রতিবেশী ও আত্মীয়-স্বজনকে খবর দেই। পরে তারা এসে মারধর করেছে।” অভিযুক্ত দুলালী বেগম বলেন, “একসপ্তাহ আগে মেশিন হারাইছে। আমাদের দুইটা মানুষের খাওয়া-দাওয়া, ঘুম নাই। রাতে গোয়াল ঘরে শব্দ শুনি গিয়ে দেখি চোর গরুর ধরি খুলছে।
পরে আমি বাড়ির আশপাশের লোকজনকে খবর দেই। তারা আসিয়া কিল-ঘুষি দেয়। যাই আসছে তাই একটা করি মাইরছে। লোকটা সকালে ঠান্ডাত কাপতে কাপতে মরি গেইছে।” নিহতের স্বজন ও স্থানীয়রা জানান, আব্দুস সালাম দীর্ঘদিন ধরে মানসিক ভারসাম্যহীন ছিলেন। তিনি মানুষের বাড়িতে কাজ করে যা পেতেন তাই খেতেন। হাট-বাজারে গিয়ে মানুষের কাছে হাত পেতে খেতেন। এর আগে কখনও তার বিরুদ্ধে চুরি বা অপকর্মের অভিযোগ ওঠেনি। তারা দাবি করেন, সালামকে পরিকল্পিতভাবে নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে।
নিহতের ছোট ছোট তিনটি ছেলে সন্তান রয়েছে, বাবাকে হারিয়ে তারা এখন নিঃস্ব ও অসহায় হয়ে পড়েছে। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন গাইবান্ধা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এ সার্কেল) বিদ্রোহ কুমার কুন্ডু, সুন্দরগঞ্জ থানার ওসি আব্দুল হাকিম আজাদ এবং বেলকা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইব্রাহিম খলিলুল্যাহ। সুন্দরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল হাকিম আজাদ বলেন, “ঘটনার তদন্ত চলছে। নিহতের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে। ঘটনায় জড়িতদের শনাক্ত করে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
