স্টাফ রিপোর্ট: সিলেট নগরের পাঠানটুলা এলাকার ঐতিহাসিক স্থাপনা ‘মিনিস্টার বাড়ি’ ভাঙার কাজ অবশেষে স্থগিত করা হয়েছে। রোববার দুপুর দেড়টার দিকে জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ঘটনাস্থলে গিয়ে ভাঙার কাজ বন্ধের নির্দেশ দেন। তিনি জানান, মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অমান্য করলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। গত কয়েক দিন ধরে স্থানীয় বাসিন্দা ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা ঐতিহ্যবাহী এই বাড়ি সংরক্ষণের দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে আসছিলেন।
প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ভাঙার কাজ চলতে থাকায় বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়ে সিলেটজুড়ে। শনিবার‘পরিবেশ ও ঐতিহ্য সংরক্ষণ ট্রাস্ট, সিলেট’-এর আয়োজনে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। এতে অংশ নেন সাংবাদিক, শিক্ষক, স্থপতি, সংস্কৃতিকর্মী ও ইতিহাসপ্রেমীরা। ‘ইনস্টিটিউট অব আর্কিটেক্টস বাংলাদেশ’ (আইএবি) সিলেট শাখা, ‘সেভ দ্য হেরিটেজ’ ও ‘টিআইবি সচেতন নাগরিক কমিটি’-র প্রতিনিধিরাও এতে অংশ নেন।
প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের আঞ্চলিক পরিচালক ড. মোছাঃ নাহিদ সুলতানা বলেন, ঐতিহাসিক এই স্থাপনাটি সিলেটের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের অংশ। সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী আগামী ২৯ অক্টোবর প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের উচ্চ পর্যায়ের একটি টিম পরিদর্শন না করা পর্যন্ত বাড়ি ভাঙার কাজ বন্ধ থাকবে। বাড়ি মালিকের পক্ষের প্রতিনিধি আনিসুল ইসলাম ম্যাজিস্ট্রেটের নির্দেশনা মেনে নেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
চুন-সুরকির ছাদওয়ালা ‘লেট-ব্রিটিশ’ স্থাপত্যশৈলীর এই বাড়িটি প্রায় ৯৫ বছর আগে নির্মাণ করেছিলেন আইনজীবী ও রাজনীতিবিদ আবদুল হামিদ—যিনি ব্রিটিশ আমলে আসাম প্রদেশের শিক্ষা মন্ত্রী এবং পরে পূর্ব পাকিস্তানের শিক্ষামন্ত্রী ছিলেন। তাঁর পরিচয়ের কারণেই এই বাড়ি ‘মিনিস্টার বাড়ি’ নামে পরিচিত।
এই বাড়িতে একসময় অতিথি হিসেবে এসেছেন বহু খ্যাতনামা ব্যক্তি—মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ, শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হক, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ও জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম। বিগত অর্থমন্ত্রী ও ইতিহাসবিদ আবুল মাল আবদুল মুহিত তাঁর আত্মজীবনীতে এই বাড়ির উল্লেখ করেছেন; তিনি ছিলেন মিনিস্টার আবদুল হামিদের নাতি।


