মাভাবিপ্রবি প্রতিনিধি:
মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (মাভাবিপ্রবি) শেখ রাসেল হলে খাবারের কুপন বিতরণকে কেন্দ্র করে শাখা ছাত্রদলের দপ্তর সম্পাদক নাসিফ ইকবাল পিয়াল নামে এক শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে হল প্রভোস্টের সাথে অসদাচরণের অভিযোগ উঠেছে। গতকাল মঙ্গলবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উপলক্ষ্যে আয়োজিত হল ফিস্টের কুপন বিতরণের সময় এ ঘটনা ঘটে। কুপন বিতরণের সময় উপস্থিত হাউজ টিউটরদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, শেখ রাসেল হলে টোকেন সংগ্রহের বিষয়ে আগেই বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে সব নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল।
কিন্তু ছাত্রদল নেতা পিয়াল সেই নিয়ম মানেননি; সরাসরি অফিসে ঢুকে টোকেন দাবি করেন। এ সময় অন্য শিক্ষার্থীরা নিয়ম মেনে লাইনে দাঁড়িয়ে টোকেন নিচ্ছিল। পিয়াল প্রমাণপত্র ছাড়াই টোকেন চাইলে শিক্ষকরা তাকে ডকুমেন্টস আনতে বলেন। তখন তিনি বলেন, “ডকুমেন্টস বা মোবাইল কোনোটা-ই সঙ্গে নেই।” তবুও তিনি টোকেন দেওয়ার জোর দাবি জানান। তারা বলেন, “পরিচিত হলেও কাউকে নিয়ম ভেঙে টোকেন দেওয়া হয়নি।”
তখন পিয়াল আলিম নামে এক শিক্ষার্থীকে ইঙ্গিত করে বলেন, “সে শিবির করে, এখানে কেন?” এ সময় তিনি উচ্চস্বরে নানা প্রশ্ন তুললে প্রভোস্ট তাকে শান্ত থাকতে বলেন এবং টেবিলে থাপা দেন। তখন পিয়াল উত্তেজিত হয়ে প্রভোস্টের দিকে এগিয়ে গেলে আলিম তাকে থামানোর চেষ্টা করেন। ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী কামালসহ হাউজ টিউটর ও অন্যান্য শিক্ষার্থীরা। প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, কুপন নিতে আসার সময় পিয়ালের আচরণ ছিল শিক্ষার্থীসুলভ ভদ্রতার পরিপন্থী। শিক্ষকরা তার কাছে প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস চাইলে তিনি জানান, সেগুলো সঙ্গে আনেননি।
পরে মোবাইল থেকে দেখাতে বললেও তিনি বলেন, মোবাইলও সঙ্গে নেই। তবুও তিনি ডকুমেন্ট ছাড়াই টোকেন দেওয়ার দাবি জানাতে থাকেন। না দেওয়ার কারণে একসময় বাজে আচরণ শুরু করেন। হল প্রভোস্ট ড. মো. আবু রাশেদ এ প্রসঙ্গে বলেন, “হলের শিক্ষার্থী অনেকেই আমার পরিচিত, তাই বলে কাউকেই নিয়ম ভঙ্গ করে টোকেন দেওয়া হয়নি।” তিনি পিয়ালকে প্রমাণপত্র নিয়ে আসতে বলেন। তখন পিয়াল উপস্থিত আরেক শিক্ষার্থী আলিমকে ইঙ্গিত করে বলেন, “সে এখানে কেন? আলিম তো শিবির করে।” এরপর তিনি প্রভোস্টকে উদ্দেশ্য করে উচ্চস্বরে প্রশ্ন তোলেন, “আমরা কেন নাই? অয়নকে কেন রাখা হয়নি?” প্রভোস্ট পরিস্থিতি শান্ত করার চেষ্টা করে টেবিলে হালকা আঘাত করে বলেন, “তুমি কী ঝামেলা করতে চাও? এর আগেও বেশ কিছু ঝামেলা করেছ।”
এতে পিয়াল উত্তেজিত হয়ে প্রভোস্টের দিকে তেড়ে যান। তখন হাউজ টিউটর এবং অন্যান্য শিক্ষার্থীরা উপস্থিত থেকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। হলের আবাসিক শিক্ষার্থী ও ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী আব্দুল আলিম বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয় দিবসের ‘হল ফিস্ট’ উপলক্ষে কমিটি গঠন করা হয়েছিল, যেখানে আমি স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে যুক্ত ছিলাম। প্রভোস্ট স্যারের পরামর্শে টোকেন বিতরণে শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বে ছিলাম।
নিয়ম অনুযায়ী টোকেন নিতে ডকুমেন্ট দেখানো বাধ্যতামূলক ছিল। কিন্তু পিয়াল তা না দেখিয়ে জোরপূর্বক টোকেন দাবি করেন। একপর্যায়ে প্রভোস্ট স্যার কিছুটা রাগান্বিত হলে, পিয়াল আক্রমণাত্মক ভঙ্গিতে স্যারের দিকে অগ্রসর হন। আমি তখন দ্রুত বাধা দিই যাতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকে। পরে তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়ান। কমিটির কাজ ছিল সম্পূর্ণ স্বেচ্ছাসেবী, কোনো রাজনৈতিক উদ্দেশ্য ছিল না।”
অভিযুক্ত ছাত্রদলের দপ্তর সম্পাদক নাসিফ ইকবাল পিয়াল বলেন, “আমি টোকেন নিতে গেলে স্যার নানা কথা বলতে শুরু করেন—‘টোকেন দেব না’ ইত্যাদি। তখন আমি বলি, ‘স্যার, আমি সশরীরে উপস্থিত, আপনি আমাকে টোকেন দেবেন না? আমি যদি আরও দশজনের ডকুমেন্ট নিয়ে আসি, তখন কি তাদেরটা দেবেন?’ তখন স্যার বলেন, ‘না, আমি তোমারটা দেব, কিন্তু ডকুমেন্ট ছাড়া দিতে পারব না।’ আমি তখন প্রশ্ন করি, ‘এখানে আব্দুল আলিম বসে আছে, সে কোন যোগ্যতায় বসেছে?’ স্যার বলেন, ‘ওর দায়িত্ব আমার।’ আমি আবার বলি, ‘স্যার, তো হলে তো মনিটরিং টিম আছে। তারা তো কাজ করছে না। মনিটরিং টিমে আমাদের সেশনের শিক্ষার্থীদের বাদ দিলেন নাকি? আপনি একে এভাবে ডেকে বসিয়ে কাজ করাচ্ছেন কেন?’ স্যার তখন বলেন, ‘এটা আমার দায়িত্ব। তুমি এই জায়গায় বসো, আমি তোমাকে টোকেন দিচ্ছি।’
আমি জানতে চাই, ‘স্যার, কতক্ষণ বসব?’ স্যার বলেন, ‘এগারোটা পর্যন্ত।’ তখন আমি বলি, ‘বাহিরেও আমাকে ১০ মিনিট বসিয়ে রেখেছেন, এখন আবার এগারোটা পর্যন্ত বসাবেন? এটা কেমন নিয়ম?’ স্যার তখন বলেন, ‘দরকার হলে আমি আলাদা নিয়ম জারি করব।’ এরপর কুদ্দুস স্যার আমাকে বিপরীত পাশে বসতে বলেন। হঠাৎ তিনি টেবিল ঠুকে বলেন, ‘তুমি সব সময় এই জায়গায় ঝামেলা করতে আসো।’ তখন আমি বলি, ‘আমি কি সব সময় ঝামেলা করতে আসি?’ এরই মধ্যে আব্দুল আলিম এসে আমাকে ধাক্কাধাক্কি করে রুমের বাইরে বের করে দেয়।
পরে প্রভোস্ট স্যার বলেন, ‘এভাবে বলা আমার ঠিক হয়নি।’ এটা তো মীমাংসিত বিষয়। কিন্তু এরপর শিবির বিভিন্নভাবে প্রোপাগান্ডা ছড়াতে থাকে। স্যারের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে একটি বিবৃতি দেওয়া প্রয়োজন ছিল। এমনকি স্যারের নিজ বিভাগের (রসায়ন) কিছু শিক্ষার্থীও এ নিয়ে নানা মন্তব্য করছে। আলিম এখন বলছে, আমি নাকি স্যারকে মারতে যাচ্ছিলাম—যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।’ এছাড়া ছাত্রদল নেতাকর্মীদের নিয়ে স্লোগান দিয়ে হলের দিকে যাওয়ার অভিযোগটিও অস্বীকার করে পিয়াল। উল্লেখ্য, পিয়াল অতীতে আওয়ামী সময়ে ছাত্রলীগের প্রচার ও প্রচারণায় যুক্ত ছিলেন।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাকে ছাত্রলীগের সহসভাপতি রায়হান আহমেদ শান্তর পক্ষে জনমত গঠন করতেও দেখা গেছে। ছাত্রলীগের আমলে শেখ রাসেল হলের ৩১৬ নাম্বার রুম পিয়াল ও তার বন্ধু অবৈধভাবে দখল করে। চলতি বছরের মে মাসে জুনিয়রদেরকে টর্চারের অভিযোগ উঠে। এরই প্রেক্ষিতে রুমটি নোটিশ দিয়ে সিলগালা করা হয়।