ভোলা প্রতিনিধি:
চরফ্যাশন উপজেলায় ২২ দিনের ইলিশ প্রজনন মৌসুমে মাছধরা থেকে বিরত থাকা জেলেদের সরকারের দেয়া প্রনোদনার ২৫ কেজি চাল বিতরন নিয়ে ৫শ টাকা করে স্লিপ বিক্রির অভিযোগ উঠেছে। উপজেলার নুরাবাদ ইউনিয়নের দুলারহাট বাজারে অবস্থিত ইউনিয়ন পরিষদে চাল নিতে আসা এক নারী অভিযোগ জানান। ওই নারী বলেন,আমার স্বামী জেলে হয়েও ভিজিএফ চালের কার্ড পায়নি।
প্রকৃত জেলেদের চাল না দিয়ে দুলারহাট এলাকার নেতাকর্মীদের ভাগবাটোয়ারা করে এই কার্ড বিতরণ করা হয়েছে। এতে করে প্রকৃত জেলেরা চাল পায়নি। নেতাকর্মীদের মধ্যে বিতরণ করা কার্ড বা স্লিপ তাদের স্ত্রী বা মায়েদের মাধ্যমে বিভিন্ন মানুষের কাছে বিক্রি করেছে। প্রতি কার্ডে ২৫ কেজির স্থলে ২০থেকে ২২ কেজি করে চাল বিতরণ করা হয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই নারী আরও বলেন আমার কাছে এক নারী ৫শ টাকায় চালের স্লিপ/কার্ড বিক্রি করে। আমাকে দেয়া চাল ওজনেও কম পাওয়া গেছে।
পরিষদ সংলগ্ন একটি দোকানে চাল মেপে দেখি ২২কেজি চাল দেয়া হয়েছে। আরেক নারী অভিযোগ করে বলেন নুরাবাদ ইউনিয়ন পরিষদে আমার ৪টি স্লিপে মাত্র এক বস্তা চাল দেয়া হয়েছে। বাকি ২টি স্লিপে কোনো চাল দেয়নি এবং জিজ্ঞেস করলে তারা স্লিপ নেয়নি বলে অস্বীকার করেন। সূত্রে জানা যায়, মা ইলিশ সংরক্ষনে ইলিশের প্রধান প্রজনন মৌসুম ৪ অক্টোবর থেকে ২৫ অক্টোবর ২২ দিন ইলিশ শিকার থেকে বিরত থাকা উপজেলার ৩৫ হাজার ৩৮৬ জন জেলের জন্য ৮৮৪.৬৫০ মে.টন ভিজিএফ চাল বরাদ্দ দেয় মৎস্য ও প্রানী সম্পদ মন্ত্রনালয়।
নিষেধাজ্ঞা চলাকালীন সময়ে জেলেদের জন্য এ মানবিক সহায়তার চাল উপজেলার পৌরসভাসহ ২১টি ইউনিয়নে তালিকাভুক্ত জেলেদের মাঝে বিতরন শুরু করেছে উপজেলা প্রশাসন। আগামী দু’এক দিনের মধ্যে জেলেদের এ ভিজিএফ’র চাল বিতরন সম্পন্ন হবে বলে জানিয়েছে সূত্রটি।
এদিকে জেলেদের এ মানবিক সহায়তার চাল তালিকাভুক্ত হয়েও পাচ্ছেন না বলে উপজেলার নুরাবাদ ইউনিয়নের একাধিক জেলে রবিবার দুপুরে সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ জানান। জেলে মামুন মাঝি বলেন,নুরাবাদ ইউনিয়নে নেতাকর্মীদের মধ্যে ভাগবাটোয়ারায় জেলে চালের স্লিপ দেয়া হয়েছে। এতে করে আমাদের সাধারণ জেলেরা বঞ্চিত হয়েছে। আমাদের ঘরের নারীরা এ চাল কিনে নিয়েছে। কার কাছ থেকে চাল কিনেছে জানতে চাইলে তিনি এরিয়ে যান। তবে সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে একেকজন ব্যক্তির কাছে ৪থেকে ৫টি করে স্লিপ দেখা গিয়েছে।
তবে তারা জেলে কি না প্রশ্ন করলে বলেন আমাদের বাড়িতে একাধিক জেলে থাকায় সকলের চাল একসাথে নেয়ার জন্য এসেছি। গোপন সূত্রে জানা গেছে নুরাবাদে প্রকৃত জেলেদের চাল না দিয়ে রিকশা শ্রমিক,কৃষক ও ওয়ার্ড পর্যায়ের দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে ভাগবাটোয়ারায় কিছু চাল দুপুর পর্যন্ত বিতরণ করা হয়েছে। বাকি চাল বিতরণ না করে কৌশলে তা অন্যত্র বিক্রির পায়তারা চলছে। জেলেদের অভিযোগ,আগামীতে স্থানীয় সরকার পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদ প্রার্থী হওয়ার উদ্দেশ্যে কিছু নেতা জেলেদের চাল না দিয়ে তাঁর কর্মীদের চাল দিচ্ছেন।
যারা তার কর্মী নয় তাদের নাম তালিকায় থাকলেও তাঁরা সরকারের এ সহায়তার চাল পাচ্ছেন না। মৎস্য কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্র জানায়, ইলিশের প্রধান প্রজনন মৌসুমে ২২ দিনের এ নিষেধাজ্ঞাকালীণ সময়ে ইলিশ পরিবহন, মজুদ, বেঁচা-কেনা এবং বিনিময় করা যাবে না। কেউ এই নিষেধাজ্ঞা অমান্য করলে আইনী ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা জয়ন্ত কুমার অপু বলেন,নুরাবাদ ইউনিয়নে জেলেদের চাল বিতরনে অনিয়মের অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
তালিকাভুক্ত জেলেরা ছাড়া কেউ স্লিপ বা কার্ড দিয়ে চাল নেয়ার সুযোগ নেই। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাসনা শারমিন মিথি বলেন, ’জেলেদের বিশেষ প্রনোদনার চাল নিয়ে যে কোন ধরনের অনিয়মের অভিযোগ তদন্ত সাপেক্ষে আইনী ব্যবস্থা নেয়া হবে। এক্ষেত্রে কাউকে ছাড় দেয়ার সুযোগ নেই।