নিজস্ব প্রতিবেদক: নেত্রকোনার মদন উপজেলায় দুই বছরের প্রেমের সম্পর্কের পর কোর্ট ম্যারেজ করে বিবাহ করেন পাপন মিয়া (২০) ও নাদিয়া আক্তার (১৬)। এক মাস সংসার করার পর নাদিয়ার মা ইয়াসমিন আক্তার (৪৩) গত ১৪ সেপ্টেম্বর মদন থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা দায়ের করেন পাপন মিয়ার বিরুদ্ধে।
মামলার পর পুলিশ পাপন মিয়াকে আটক করে নেত্রকোনা জেলা কারাগারে প্রেরণ করে। অন্যদিকে, অপ্রাপ্তবয়স্ক হওয়ায় পুলিশ নাদিয়া আক্তারকে তার পিতা-মাতার জিম্মায় হস্তান্তর করে। কিন্তু ঘটনার দুই দিন পর, রাতের আঁধারে নাদিয়া আক্তার পালিয়ে গিয়ে স্বামীর বাড়িতে আশ্রয় নেয় এবং প্রশাসন ও এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের কাছে স্বামী পাপন মিয়ার মুক্তির দাবি জানায়।
পরে স্থানীয় রাজনীতিক ও সমাজের প্রভাবশালীরা নাদিয়ার বয়স অপ্রাপ্ত থাকায় আবারও তাকে পিতা-মাতার কাছে ফিরিয়ে দেন। কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই নাদিয়া আবার পালিয়ে স্বামীর বাড়িতে ফিরে আসে।
এরপর নাদিয়ার বাবা সুজন মিয়া (৫০), মা ইয়াসমিন আক্তার ও দুই ভাই ফাহিম (১৮) এবং নাদিম (১৭) স্বামীর বাড়িতে গিয়ে ভাঙচুর চালায়- এমন অভিযোগ উঠেছে স্থানীয়দের কাছ থেকে।
এ ঘটনায় ১২ অক্টোবর সকালে সুতিয়ার গ্রামে গিয়ে জানা যায়, নাদিয়ার পরিবার তার স্বামীর বাড়ির দরজা ও জানালায় লাঠি দিয়ে আঘাত করে নাদিয়াকে জোরপূর্বক বের করে নেওয়ার চেষ্টা করে।
এ বিষয়ে নাদিয়া আক্তার বলেন, আমি দুই বছর প্রেমের পর পাপনের সঙ্গে কোর্ট ম্যারেজ করেছি। আমার মা-বাবা আমাকে ভয় দেখিয়ে থানায় পাপনের বিরুদ্ধে কথা বলতে বাধ্য করেছে। তারা আমার জন্ম নিবন্ধনে ইচ্ছাকৃতভাবে বয়স কম দিয়েছে। আমার প্রকৃত বয়স ১৮ বছর। আমি ভালো-মন্দ বোঝার বয়সে পৌঁছেছি। কেউ যদি আমাকে স্বামীর বাড়ি থেকে জোর করে নিয়ে যেতে চায়, আমি তাদের নাম লিখে আত্মহত্যা করবেন বলে জানান নাদিয়া আক্তার।
কাইটাইল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু তাহের আজাদ বলেন, মেয়েটি অপ্রাপ্ত বয়স্ক হওয়ায় আদালতের নির্দেশে তাকে তিনবার পিতা-মাতার জিম্মায় দেওয়া হয়েছে। তবুও সে বারবার পালিয়ে স্বামীর বাড়ি চলে আসে। বিষয়টি দুঃখজনক! স্থানীয় নেতৃবৃন্দ বিষয়টি নিয়ে বসে সমাধানের উদ্যোগ নিচ্ছেন।
এ দিকে থানার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, ৯৯৯ নম্বরে কল পাওয়ার পর পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করে। পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
স্থানীয় মহলে ঘটনাটি নিয়ে ব্যাপক আলোচনা ও সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে। কেউ বলছেন প্রেমের সম্পর্কের প্রতি সম্মান দেখানো উচিত, আবার কেউ বলছেন অপ্রাপ্তবয়স্ক মেয়ের বিয়ে আইনের পরিপন্থী। এ ঘটনায় প্রশাসনের সুষ্ঠু তদন্ত ও সমাধান প্রত্যাশা করছেন এলাকাবাসী।