নীলফামারী জেলা প্রতিনিধি:
নীলফামারীর উত্তরা ইপিজেডের শ্রমিক নেতা সাইদুল ইসলাম বাবু জামিনে মুক্তি পেয়ে আন্দোলনরত শ্রমিকদের কাজে ফেরার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, “আমার সামান্য ভুলের কারণে আজ এতো কিছু ঘটেছে।” শ্রমিকদের নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে টানা দুই দিন ধরে উত্তরা ইপিজেডে আন্দোলন চলছিল। মঙ্গলবার বৃষ্টির কারণে আন্দোলন কিছুটা ম্লান থাকলেও বুধবার সকাল থেকে শ্রমিকরা গেট থেকে থানা পর্যন্ত মিছিল নিয়ে অগ্রসর হন। তিনটি স্থানে পুলিশি ব্যারিকেড ভেঙে একপর্যায়ে তারা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নেন।
পরে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে শ্রমিক প্রতিনিধি, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ ও ইপিজেড কর্তৃপক্ষের উপস্থিতিতে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে শ্রমিকরা মামলা প্রত্যাহার, শ্রম আইন বাস্তবায়ন, নিহত শ্রমিক হাবিবের পরিবারকে ৫০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণসহ ১২ দফা দাবি উত্থাপন করেন। আলোচনার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, শ্রমিক নেতা সাইদুল ইসলাম বাবু ও শফিকুল ইসলামকে জামিনে মুক্তি দেওয়া হয় এবং শ্রমিকদের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। একইসঙ্গে তাদের দাবির বিষয়ে কর্তৃপক্ষ ইতিবাচক আশ্বাস প্রদান করে।
শ্রমিকদের নিয়মিত দাবি উত্থাপনের জন্য একটি পিসি কমিটি গঠন করারও সিদ্ধান্ত হয়। এ বিষয়ে নীলফামারী জেলা পুলিশ সুপার এ.এফ.এম তারিক হোসেন খান বলেন, “শ্রমিকদের দাবি শোনা হয়েছে। আলোচনার মাধ্যমে সমাধানে পৌঁছানো গেছে।” উত্তরা ইপিজেডের নির্বাহী পরিচালক আব্দুল জব্বার জানান, “নিহত ও আহত শ্রমিকদের বিধি মোতাবেক আর্থিক অনুদান দেওয়া হবে।” জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ নায়িরুজ্জামান বলেন, “শ্রমিকদের প্রধান দাবি ছিল সাইদুল ও তার বাবার নামে দায়ের করা মামলা থেকে মুক্তি।
বৈঠকে এ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে এবং শ্রমিকদের আরও কিছু দাবি নিয়েও পদক্ষেপ নেওয়া হবে। আগামী সাত দিনের মধ্যে শ্রমিক ও মালিকপক্ষের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে একটি পিসি কমিটি গঠনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।” তিনি আরও বলেন, “শ্রমিকদের যদি কোনো অভিযোগ থাকে এবং ইপিজেড কর্তৃপক্ষ তা সমাধান না করে, তবে তারা সরাসরি আমাকে বা রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দকে জানাতে পারবেন। এরপর আমরা বিষয়টি নিয়ে আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের চেষ্টা করবো।”
আলোচনায় জেলা বিএনপির আহ্বায়ক মীর সেলিম ফারুক, সদস্য সচিব এ এইচ এম সাইফুল্লাহ রুবেল, জেলা জামায়াতের আমীর অধ্যক্ষ আব্দুস সাত্তার, এনসিপি নীলফামারী জেলার আহ্বায়ক আব্দুল মজিদ, সদস্য আখতারুজ্জামান খান, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ নীলফামারী জেলার সহকারী সম্পাদক হাফেজ মাওলানা ছগীর আলম, প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকসহ ইপিজেড শ্রমিক নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। আলোচনার পর আন্দোলনরত শ্রমিকরা আনন্দ-উল্লাসের মধ্য দিয়ে কর্মস্থলে ফিরে যান।