নিজস্ব প্রতিবেদক: কাগজপত্রে জমি নেই, কারসাজি করে এক ব্যক্তিকে ভুয়া খারিজ করে দিয়েছেন নেত্রকোনার মোহনগঞ্জ উপজেলার সমাজ-সহিলদেও ইউনিয়ন সহকারী ভূমি কর্মকর্তা কামাল হোসেন খান। এ ঘটনায় এলাকায় চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে।
এছাড়াও খাজনার নামে অতিরিক্ত টাকা নেওয়াসহ সেবাগ্রহীতাদের নানারকম হয়রানির অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
এসব ঘটনায় তার বিরুদ্ধে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, উপজেলার সহিলদেও মৌজায় ২০৮৬ নং (বিআরএস) দাগে ৭১ শতাংশ জমি রয়েছে। ক্রয়মূলে সাড়ে ৩৫ শতাংশ জায়গার মালিক উপজেলার দত্তগাতী গ্রামের জয়নুল আবেদিন নামে এক ব্যক্তি। আর বাকি সাড়ে ৩৫ শতাংশের মালিক নজরুল ইসলাম নামে আরেক ব্যক্তি। গত ৭-৮ বছর আগে নজরুল ইসলাম ৪০ শতাংশ জমি খারিজ করে নিয়ে যান, যা তার অংশের চেয়ে বেশি। পরবর্তীতে ২০২৩ সালের এপ্রিলে সাড়ে ৩৫ শতাংশ জমি খারিজ করে নেন জয়নুল আবেদিন। এতে ৭১ শতাংশ জমির মধ্যে খারিজ করে দেওয়া হয় সাড়ে ৭৫ শতাংশ। তারপরও গত ৩১ আগষ্ট আরও সাড়ে ৩ শতাংশ জমি ফের জয়নুল আবেদিনকে খারিজ করে দেওয়া হয়।
বিষয়টি জানাজানি হলে এলাকায় চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। এ ঘটনায় ইউনিয়ন সহকারী ভুমি কর্মকর্তাকে দায়ী করছেন এলাকাবাসী।
এলাকাবাসীর দাবি- সহকারী ভুমি কর্মকর্তা কামাল হোসেন টাকা খেয়ে কারসাজি করে ভুল প্রতিবেদন পাঠিয়েছন। তার প্রতিবেদন দেখে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) খারিজ দিয়েছেন। তদন্ত করে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি এলাকাবাসীর।
উপজেলার মেদি পাথরকাটা গ্রামের জসিম মিয়া বলেন, নায়েব (সহকারী ভূমি কর্মকর্তা) কামাল হোসেনের কাছে জমি খরিজ করতে গেলে ৫-৬ হাজার টাকা দিতে হয়। আমি দুটো খারিজ করেছি, একটায় ৫ হাজার টাকা দিয়েছি, অপরটায় সাড়ে ৪ হাজার। নাগরিক কর্নারে আবেদন করলে তিনি খারিজের প্রস্তাব দেন না। কাগজে অনেক ঝামেলা আছে এসব বলে। পরে একই কাগজ তার কাছে দিয়ে কয়েক হাজার টাকা দিলে কোন সমস্যা থাকে না।
শাকরাজ গ্রামের লাল মিয়া বলেন, জমির খাজনা বাবদ নায়েব আমার কাছ থেকে ৬ হাজার টাকা নিয়েছে। বাড়িতে গিয়ে দেখি রশিদ দিয়েছে ৫৭১ টাকার। এমনটা অন্য অনেকের সাথেই তিনি করছেন।
উপজেলার একজন দলিল লেখক নাম প্রকাশ না করে বলেন, জয়নুল আবেদিন নিজেও জানে কাগজে তার জমি নাই। তারপরও নায়েবকে টাকা দিয়ে ভুয়া খারিজ করিয়েছে। এখন তিনি খারিজের ওই জমি বিক্রি করার জন্য আমাদের কাছে এসেছেন। তবে খারিজের আগেই বিষয়টি জেনে আমি ভূমি সহকারী কর্মকর্তাকে সতর্ক করেছি। জানিয়েছি- জয়নুল আবেদিনের জমি আগেই খারিজ করে নিয়ে গেছে, এখন তার কোন জমি নেই। খারিজ দিতে মানা করেছি, কিন্তু তিনি শুনেননি। নায়েবের কাছে থাকা ভলিউম বইয়েও আগের খরিজের বিষয়ে বিস্তারিত লিখা রয়েছে। তারপরও তিনি এমন ভুয়া খারিজ করেছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সহকারী ভুমি কর্মকর্তা কামাল হোসেন খান বলেন, ভুলে ওই খারিজটা হয়ে গেছে। এটা বাতিলের বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে অন্যান্য অনিয়মের বিষয়ে তিনি কোন মন্তব্য করেননি।
বিষয়টি অবহিত করলে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) এম এ কাদের বলেন, এ বিষয়ে তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।