ইবি প্রতিনিধি:
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) শিক্ষার্থী সাজিদ আব্দুল্লাহর খুনীদের দ্রুত গ্রেফতার ও আওয়ামী ফ্যাসিস্ট দোসরদের বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে শাখা ছাত্রদল।
বুধবার (২৭ আগস্ট) দুপুর পৌনে দুইটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুষদ ভবনের সামনে থেকে বিক্ষোভ মিছিলটি শুরু হয়। পরে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে প্রশাসন ভবন চত্বরে গিয়ে সমাবেশে সমবেত হয় ।
মিছিলে ‘বিচার নিয়ে নয় ছয়, আর নয় আর নয়’, ‘ফাঁসি ফাঁসি ফাঁসি চাই, খুনিদের ফাঁসি চাই’, ‘সাজিদের রক্ত বৃথা যাবে না’, ‘আমার ভাই মরলো কেন, প্রশাসন জবাব দে’ আওয়ামীলীগের ঠিকানা, এ ক্যাম্পাসে হবে না’ সহ বিভিন্ন স্লোগান দিতে দেখা ছাত্রদলের নেতা-কর্মীদের।
এসময় উপস্থিত ছিলেন ইবি শাখা ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক রাশেদুল ইসলাম রাশেদ, আহ্বায়ক সাহেদ আহম্মেদ, সদস্য সচিব মাসুদ রুমী মিথুন, যুগ্ম আহ্বায়ক আনারুল ইসলাম, আহসান হাবিব, সদস্য রাফিজ, নুর উদ্দিন, স্বাক্ষর , মুক্তাদির, রোকনুজ্জামান, আব্দুল্লাহ আল মামুন, উল্লাস, রিফাত, মেহেদী হাসান, রিয়াজসহ প্রমূখ।
শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক সাহেদ আহম্মেদ বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও কর্মকর্তা -কর্মচারী সকলেই নিরাপত্তা ঝুঁকিতে আছে। শিক্ষার্থীদের ভিতর ভয় কাজ করে কখন কে জানি কাকে মেরে ফেলে। কুষ্টিয়ার এসপি ও ইবি থানার ওসির সাথে কথা বলেছি সাজিদ হত্যার খুনিদের দ্রুত বিচারের জন্য। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে দাবি জানাই, আপনারা দ্রুত সাজিদের খুনিদের বিচার করুন। ক্যাম্পাস যেন নিরাপদ ক্যাম্পাস হয়। নিরাপদ ক্যাম্পাসের জন্য পর্যাপ্ত লাইট, সিকিউরিটি গার্ড ও পুলিশের টহল নিশ্চিত করতে হবে। ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের দ্রুত শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। ৫ আগস্টের আগে তারা যে নির্যাতন করছে তা আইনি প্রক্রিয়ায় তাদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে।’
সমাবেশে ইবি শাখা ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক রাশেদুল ইসলাম রাশেদ বলেন, ‘এক মাস দশ দিন হয়ে গেল এই সাজিদের হত্যাকারীদের গ্রেফতার করা হয়নি। কারা, কেন, কিভাবে হত্যা করলো প্রশাসন এখনো আইডেন্ডিফাই করতে পারেনি। ফ্যাসিবাদী আমলে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের মেইন গেইটে ফিটনেসবিহীন গাড়ি দিয়ে এক শিক্ষার্থীকে হত্যা করা হয়েছিলো। তখন ওই গাড়ির ড্রাইভার ও মালিকদের বিরুদ্ধে মামলা না দিয়ে ছাত্রদলের নেতৃবৃন্দের নামে মামলা দেয়। বিগত প্রশাসনের পৃষ্ঠপোষকতায় লালন শাহ হলে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা শিক্ষার্থীদের বের করে লুটপাট করেছিলো। এখন পর্যন্ত সেগুলোর বিচার প্রশাসন করে নাই। বর্তমান প্রশাসন যদি বিগত ১৭ বছরের ঔ ফ্যাসিবাদী প্রশাসনের মতো হয় তাহলে মনে রাখবেন আপনাদের পরিণতিও তাদের মতো হবে।’
তিনি আরও বলেন, এ বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নাই, শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ বিঘ্নিত হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে এখনো ফিটনেসবিহীন গাড়ি চলে। মহাসড়কের যে বেহাল দশা তাতে শিক্ষার্থীরা আহত হয়ে প্রতিনিয়ত হাসপাতালে যায়। বিগত ফ্যাসিবাদী আমলে বিশ্ববিদ্যালয়ে যারা রাম রাজত্ব কায়েম করেছিলো। এখনো তাদের চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় আনা হয়নি। আমরা পত্রিকায় দেখতে পেয়েছি ১৯ জন শিক্ষককে শোকজ করা হয়েছে। কিন্তু এই ১৯ জন নয় আরও অনেক শিক্ষক আছে, যখন ছাত্রলীগ ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের বিরূদ্ধে মামলা দিয়েছে, হামলা করেছে আপনারা তার পৃষ্ঠপোষকতা করেছেন। এ সমস্ত শিক্ষকরা এখনো প্রশাসনে চাকরি করলে আমাদের জন্য লজ্জা হয়।
তাদের দাবি, ‘অনতিবিলম্বে সাজিদ হত্যার বিচার করতে হবে। অনতিবিলম্বে ফ্যাসিস্টদের দোসরদের চাকরি থেকে বহিাষ্কার করে আইনের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। শিক্ষার্থীদের জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবেন। অন্যথায় ছাত্রদল সাধারণ শিক্ষার্থীদের নিয়ে প্রশাসনের বিরুদ্ধে কঠোর আন্দোলনে নামতে বাধ্য হবে বলে হুঁশিয়ার
দেন তারা।’
উল্লেখ্য, গত ১৭ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয়ের আল কুরআন অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী সাজিদ আব্দুল্লাহর লাশ হল পুকুর থেকে উদ্ধার করা হয়। ভিসেরা রিপোর্ট অনুযায়ী তাকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে। হত্যাকান্ডে জড়িতদের চিহ্নিত করে শাস্তির আওতায় আনতে প্রশাসন উচ্চতর তদন্তের সুপারিশ করেছে। এর তদন্ত কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন। এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ে অভ্যুত্থানবিরোধী ভূমিকা চিহ্নিত করতে গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে ১৯ জন শিক্ষক, ১১ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী ও ৩৩ জন শিক্ষার্থীর নাম উল্লেখ করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে কেন আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে না তা জানতে শোকজ নোটিশ জারি করা হয়েছে শোকজ নোটিশে বলা হয়েছে, গত জুলাই-আগস্ট ২০২৪ সালে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় ওইসব শিক্ষকদের হুমকি-ধামকি, ভীতি প্রদর্শন, মারমুখী আচরণ, গালাগালি, মিছিলে উসকানিমূলক শ্লোগান প্রদান এবং পুলিশি হয়রানির সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত থাকার অভিযোগ পাওয়া গেছে।