মৌলভীবাজার প্রতিনিধি:
বিএনপি’র সাংগঠনিক সম্পাদক জিকে গউছ বলেছেন, তারেক রহমান জাতির সামনে যে ৩১ দফা দিয়েছেন, সেই ৩১ দফাই হচ্ছে জাতির মুক্তির রক্ষাকবজ। তারেক রহমান অত্যন্ত দূর দৃষ্টি সম্পন্ন । আজকে থেকে দুই বছর আগেই তো জাতির সামনে সেটি দিয়েছেন। আজকে সংস্কার হচ্ছে, মিটিং হচ্ছে, আলোচনা হচ্ছে, ঘুরে ফিরে আজকের এই সংস্কার কমিশন সেটাই দিচ্ছে। শনিবার (২৩শে আগস্ট) দুপুরে মৌলভীবাজারের বড়লেখা পৌর বিএনপির দ্বি-বার্ষিক সম্মেলন ও কাউন্সিলে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। জিকে গউছ বলেন, এই পুলিশ একবছর আগেও কি করেছে এটা যেন আমরা ভূলে না যাই।
এই পুলিশ এককভাবে আমাদের জন্য থ্রেড ছিলো না। পুরা প্রশাসনকে হাসিনা আমাদের মূখোমুখি করেছে। আমি বারবার বলতাম পুলিশ ছাড়া আওয়ামীলীগ আমাদের সামনে পাঁচ মিনিট টিকার মতো ক্ষমতা রাখে না। প্রমাণ করেছি আমরা, হাসিনা পালিয়েছে ৫ তারিখে। ৩ তারিখে আমরা হবিগঞ্জকে স্বাধীন ঘোষণা করেছিলাম। থানা পুলিশ ৩ তারিখ রাতেই থানা আমাদেরকে বুঝিয়ে তারা চলে গিয়েছিলো। এটা ইতিহাস।
তিনি আরও বলেন, বিএনপি রাষ্ট্র ক্ষমতায় যেতে হলে জনগণের ভালবাসা লাগবে। জনগণের ভোট ছাড়া এমপি হওয়া যাবে না। জনগণের প্রতিনিধি হওয়া যাবে না। সেই দিন বাঘে খেয়েছে। একজন পাঁচজনের ভোট দিবেন, মরা মানুষের ভোট, বিদেশে থাকা মানুষের ভোট দিবেন, এই দিন বাংলাদেশে আর ফিরে আসবে না। আমাদের মানুষ রক্ত দিয়ে ন্যায়য়ের পক্ষে, অন্যায়ের বিরুদ্ধে যে দেয়াল সৃষ্টি করেছে।
এই দেয়াল আর কোনো স্বৈরাচার আর কোনদিন ভাঙতে পারবে না, ইনশাআল্লাহ। জিকে গউছ বলেন, দলে যদি কেউ আওয়ামীলীগ পূর্ণবাসনের জন্য চেষ্টা করেন, এটা গর্হিত অপরাধ, ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ। এটা খেয়াল রেখে দলের কমিটি বানাবেন। এটা দলের চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশ। কোন আওয়ামীলীগ আত্মীয়তার ছলে, ব্যবসায়ীক পার্টনার হয়ে, যদি কেউ দলে স্থান দেয়, তাদেরকে দল বরদাস্ত করবে না।
তিনি আরও বলেন, আওয়ামীলীগ আর বিএনপি এক রাজনীতি করে না। আওয়ামীলীগ বারবার গণতন্ত্রকে গলাটিপে হত্যার চেষ্টা করেছে। এই আওয়ামীলীগ কলকাতার মাটিতে, অন্য দেশের মাটিতে দলীয় অফিস খুলেছে। ধিক্কার জানাই এসব কর্মকান্ডকে যারা উৎসাহিত করেন। পার্শ্ববর্তী দেশকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন- বাংলাদেশের মানুষের সাথে যদি বন্ধুত্ব রাখতে চান, এই খুনিদের পুনর্বাসন করে এটা কোন বন্ধুত্ব রাখার লক্ষণ হতে পারে না। দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী যাদের বিচার শুরু হয়েছে, যদি তারা দোষী সাব্যস্ত হন, আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী এই দোষীদেরকে কোর্টে তাদের হস্তান্তর করবেন।
জিকে গউছ আরও বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতিকে পঙ্গু করে আওয়ামীলীগ বিদেশে হাজার হাজার লক্ষ কোটি টাকা সেখানে নিয়ে গেছে। এগুলো ফিরিয়ে নিয়ে আসার জন্য, সেদেশের সরকার বর্তমান সরকারকে সহযোগিতা করবেন। গউছ বলেন- আমাদের অর্থনীতি পঙ্গু হয়ে গেছে। আওয়ামীলীগের লুটের টাকা দেশে ফিরে আসুক। দেশের মূল অর্থনীতির সাথে এই টাকা মিশে দেশের অর্থনীতি সমৃদ্ধ হোক, সেটা আমরা প্রত্যাশা করি। বিএনপি যদি রাষ্ট ক্ষমতায় যায়, বিএনপি কারো প্রতি প্রতিশোধের মনোভাব নিয়ে আগাবে না।
বিএনপি দেশের আইন সমুন্নত রেখে দেশের আইন অনুযায়ী আদালত তাদের বিচার করবে। এই আওয়ামীলীগ আমাদেরকে যত কষ্ট দিয়েছিলো, আমাদের বাড়ি ঘর ব্যবসা বাণিজ্য সবকিছু ধ্বংস করে দিয়েছিলো। জি কে গউছ বলেন, অন্যায়-দূর্নীতি মানুষকে কষ্ট দেয়া আর বিএনপির রাজনীতি একসাথে চলতে পারে না। যারা খারাপ মানুষ তারা বিএনপি করতে পারে না, যারা দুষ্টু মানুষ তারা বিএনপি করতে পারবেন না। জি কে গউছ বলেন- যারা এই নির্বাচনকে বানচালের চেষ্টা করছেন, তাদের অনুরোধ করবো আয়নায় নিজের চেহারা দেখুন। বেগম খালেদা জিয়া ঘোষনা দিয়েছিলেন, এরশাদের অধীনে যারা নির্বাচনে যাবেন তারা জাতীয় বেঈমান হিসেবে চিহ্নিত হবেন।
সেই দিন এরশাদের সমস্ত কু কর্মকে যারা বৈধতা দিয়েছেন, তারা কেউ কেউ এখন বলেন বাংলাদেশে নাকি নির্বাচন হবে না। যে জাতি গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করেছে, যে জাতি নিজের অধিকারের জন্য বুক পেতে দিয়েছে, সেই জাতিকে কেউ কোনদিন রুখতে পারেনি। দেশি বিদেশি কোন ষড়যন্ত্র সেই জাতিকে কোনদিন রুখতে পারবে না ইনশাআল্লাহ। দেশের মানুষের ভালবাসা যদি বিএনপির সাথে থাকে, দেশে বিদেশের কোন চক্রান্ত বিএনপিকে রুখে দিতে পারবে না। বিএনপি সারা বাংলাদেশের মানুষের মণিকোঠায়। বিএনপি যা বিশ্বাস করে তাই বিএনপি মুখে প্রকাশ করে।
এই দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হোক, তার কাজ নিরলসভাবে বিএনপি তার কাজ অব্যহত করেছে। শুধু রাষ্ট্রে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার কথা বলে না, নিজের দলেও গণতন্ত্রের চর্চা করে। জি কে গউছ বলেন- বিএনপি শুধু নেতা বানাবে আর আপনারা শুধু ভিজিটিং কার্ড ছেপে বিভিন্ন জায়গায় যাবেন, এটা বিএনপির প্রত্যাশা না। শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান আমাদের সামনে যে আদর্শ রেখে গেছেন, সেই ১৯ দফা আমাদের সামনে রয়েছে।
আজকে অনেকেই সংস্কার সংস্কার বলে মায়া কান্না করেন, বিএনপি একটি দূরদর্শী রাজনৈতিক দল। আজ থেকে দু বছর আগে বিএনপি ২৭ দফা রাষ্ট্র সংস্কারের জন্য তুলে ধরেছিলো, পরবর্তীতে অন্যান্য রাজনৈতিক দল যারা হাসিনার পতনে একসাথে ছিলেন তাদের সাথে আলোচনা করে জাতির সামনে ৩১ দফা তুলে ধরেছে। গউছ বলেন- এই পালিয়ে যাওয়া আওয়ামী লীগ গত ১৬ বছরে দেশের এমন কোনো সেক্টর নেই যেটা কে ধ্বংস করেনি। দেশের অর্থনীতির বারটা বাজিয়েছে। দেশের গনতন্ত্র কে চুড়ান্ত ভাবে মাটি চাপা দিয়েছে।
ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়েছিল। মানুষের সভা সমাবেশ চিন্তা চেতনার অধিকার পর্যন্ত হাসিনা কেড়ে নিয়েছিল। একটা মানুষ তার মনের মধ্যে সঞ্চিত ক্ষোভ চায়ের স্টলে বসে দোকানে বসে প্রকাশ করতে পারতে না। এমন কোন মানুষ নেই যিনি বিএনপি কে ভালবেসে মিথ্যা মামলা, সাজানো মামলা, ভুতুরে মামলা,গায়েবি মামলায় জড়িয়ে জুলুম নির্যাতনের শিকার হননি। অনুষ্ঠানে প্রধান বক্তা ছিলেন কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মিফতাহ সিদ্দিকী। বড়লেখা পৌর বিএনপির আহবায়ক মীর মখলিছুর রহমানের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য সাবেক এমপি এম নাসের রহমান, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ফয়জুল করিম ময়ুন ও সদস্য সচিব আব্দুর রহিম রিপন।
বক্তব্য রাখেন, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য মিজানুর রহমান মিজান, আব্দুল মুকিত, বকসি মিছবাহউর রহমান, নাসির উদ্দিন মিঠু, মোশাররফ হোসেন বাদশা, কাতার বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শরিফুল হক সাজু, বড়লেখা উপজেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল হাফিজ। দ্বিতীয় অধিবেশনে বড়লেখা পৌর বিএনপির ৯টি ওয়ার্ডের ৬৩৯ জন ভোটারের মধ্যে ৫৯৮ জন কাউন্সিলর গোপন ব্যালটে ভোট দিয়ে সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক সহ পাঁচটি পদে তাদের পছন্দের নেতা নির্বাচন করেন। বড়লেখা পৌর বিএনপির দ্বিবার্ষিক সম্মেলন ও কাউন্সিল মৌলভীবাজার জেলার বড়লেখা পৌর বিএনপির দ্বিবার্ষিক কাউন্সিলে গোপন ব্যালটে সভাপতি পদে সাইফুল ইসলাম খোকন এবং সাধারণ সম্পাদক পদে আব্দুল হাফিজ ললন নির্বাচিত হয়েছেন। দুপুর ২টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত স্থানীয় নারী শিক্ষা একাডেমি প্রাঙ্গণে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। কাউন্সিলে মোট ৬৩৯ জন ভোটারের মধ্যে ৫৯৮ জন ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন। সভাপতি পদে সাইফুল ইসলাম খোকন ৩১২ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন।
তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আনোয়ারুল ইসলাম পান ২২৫ ভোট এবং ফয়সল আহমদ সাগর পান ২৫ ভোট। সিনিয়র সহ-সভাপতি পদে আব্দুল মালিক ২১০ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। অন্যদিকে হারুনুর রশিদ পান ১৭০ ভোট, এবাদুর রহমান ১১২ এবং আবু সুফিয়ান তাপাদার পান ৩০ ভোট। সাধারণ সম্পাদক পদে আব্দুল হাফিজ ললন ৩২০ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। তার প্রতিদ্বন্দ্বী সাইফুল আলম রাসেল পান ২৩৮ ভোট। যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদে সামসুল হাসান ২২০ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী কবির আহমদ তাপাদার পান ১৪৯ ভোট এবং বাহার উদ্দিন পান ১০৯ ভোট। সাংগঠনিক সম্পাদক পদে শামীম আহমদ ১৫৭ ভোট পেয়ে জয়ী হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী মীর শামীমুর রহমান পান ১৫৩ ভোট, আলমগীর আলম ১২৭ ভোট এবং মুহিবুর রহমান আসুক পান ৭২ ভোট।
রাত ৮টায় ভোটগণনা শেষে ফলাফল ঘোষণা করেন কাউন্সিলের প্রধান নির্বাচন কমিশনার আব্দুল হাফিজ। এসময় উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক (সিলেট বিভাগ) আলহাজ জি.কে. গউছ, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক মো. ফয়জুল করিম ময়ূন, সদস্য সচিব আব্দুর রহিম রিপন, সাবেক সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান মিজান, আহ্বায়ক কমিটির সদস্য নাসির উদ্দীন মিঠু, মো. ফখরুল ইসলাম, মাহমুদুর রহমান এবং কাতার বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শরীফুল হক সাজু সহ স্থানীয় বিএনপির নেতৃবৃন্দ।